সৈকত মাইতি: প্রত্যন্ত গ্রামের ভিতরে গাছে ঝোপের আড়ালে বেশ সুখে শান্তিতেই বাসা বেঁধেছিল ওরা। কয়েক মাস তো হবেই। কর্মীরা বাসায় বেড়া দিচ্ছিল, রানি আয়েশে দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু সুখের সেই সংসারেই বাজপাখির শ্যেন দৃষ্টি পড়ল। এক বাজপাখির ঠোক্করেই খেপে উঠল পাহাড়িয়া মৌমাছিদের দল। কোনওকিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের হুলে জখম হলেন জনা ছয়েক বাসিন্দা। এক বালকের অবস্থা তো বেশ গুরুতর। পরিস্থিতি এমনই যে ঘটনার ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও খেপে ওঠা মৌমাছিদের হাত থেকে বাঁচতে ঘুরপথে যাতায়াত শুরু করেছেন পাঁশকুড়ার পাতন্দার বাসিন্দারা। দরজা-জানালা বন্ধ করে একরকম গৃহবন্দি হয়েই দিন কাটাচ্ছেন।
পাঁশকুড়ার মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাতন্দা গ্রাম। এই গ্রামেরই মান্নাপাড়া সংলগ্ন মাংলই যাওয়ার রাস্তায় একটি আমগাছে দীর্ঘদিন ধরেই বাসা বেঁধে ছিল পাহাড়িয়া মৌমাছিদের একটি দল। আর এই বাসাটি এতটাই উপরে ছিল যে, তা গ্রামের সাধারণ মানুষের নজরেও পড়েনি। মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ আচমকাই ভনভনিয়ে খেপে ওঠে গোটা মৌমাছি পরিবার। গ্রামের পথ দিয়ে যাতায়াতের পথে অজান্তেই মৌমাছিদের আক্রমণের শিকার হন একের পর এক গ্রামবাসী।
[জলদাপাড়ায় গন্ডার পাচারচক্রের হদিশ, গ্রেপ্তার এক শার্প শুটার-সহ ৬ চোরাকারবারী]
পাশের মাংলই এর বাসিন্দা বছর ১৪ র সুমন সিং। এদিন বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। যে সময় একঝাঁক মৌমাছিরা তাকে তাড়া করে। ছুটতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তাকে ঘিরে ধরে মৌমাছির দল। তার চিৎকারে ছুটে আসেন অশ্বিনী মান্না নামে স্থানীয় এক প্রৌঢ়। কিন্তু তিনিও রক্ষা পাননি। পরে গুরুতর জখম অবস্থায় দুজনকেই পাতন্দা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ওই পথেই মাঠের কাজে যাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথ মান্না ও ফণিন্দ্রনাথ মান্না নামে দুই বৃদ্ধ। মৌমাছিদের আক্রমণের মুখে পড়ে জখম অবস্থায় তাঁদেরও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এদিকে এই ঘটনা আরও দু’জন অল্প বিস্তর জখম হন।
এরপর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র আতঙ্ক দেখা দেয়। তারপর থেকে ওই পথে যাতায়াত প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসীরা। গ্রামবাসী গৌর মণ্ডল, বিশ্বনাথ মান্নারা জানান, ‘ওই এলাকায় পাহাড়িয়া মৌমাছিরা বাসা বেঁধে রয়েছে, তা আগে আমরা জানতেও পারিনি। কিন্তু এক বাজপাখির ঠোকরেই আচমকা ওরা খেপে উঠে। তারপরই এই আক্রমণ।’ এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কুরবান শা বলেন, ‘পাতন্দা এলাকায় মৌমাছির আক্রমণে এক বালক সহ মোট ছয়জন জখম হয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।’
[ব্যবসায়ীকে সোনার বিস্কুট বিক্রির অভিযোগ, ‘ক্লোজ’ করা হল খোদ এসআইকে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.