সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একপাশে জঙ্গল। আরেক পাশে ধূ-ধূ মাঠ। এই দুইয়ের মাঝেই একচিলতে স্টেশন বেগুনকোদর। এখনও গুগলে সার্চ করলে ভেসে আসে ‘দ্য বেগুনকোদর ঘোস্ট স্টেশন’। শনিবার ভূত চতুদর্শীতে প্রায় হঠাৎ করেই বেগুনকোদরে হই-চই বেধে যায় যে এই স্টেশনে নাকি ‘ভূত’ দেখা যাবে! আর তারপরই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কেন্দ্র সোশ্যাল সাইটে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঘোষনা করে কেউ যদি ‘ভূত’ দেখাতে সক্ষম হন, তাহলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাবেন। আর যদি না পারেন, তাহলে গ্রামবাসীদের ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
ভূত চতুর্দশীর সন্ধ্যার আগে এভাবেই সরগরম হয়ে উঠেছিল বেগুনকোদর স্টেশন। যা আজও ‘ভূতুড়ে স্টেশন’ বলেই পরিচিত। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া কেন্দ্র পুলিশ নিয়ে রাত জেগে প্রমাণ করে, আর যাই হোক ‘ভূত’ নেই এই বেগুনকোদর স্টেশনে। বলা যায়, প্রায় পাঁচ দশকের ভৌতিক রহস্যের সমাধান করে প্রশাসন। তারপর থেকে এই স্টেশনে ‘ভৌতিক আবহ’ তৈরি করতে কেউ পা রাখলেই তেড়ে আসত এই জনপদ। ফলে, এই স্টেশনকে কাজে লাগিয়ে যারা ‘ঘোস্ট ট্যুরিজম’-এর ব্যবসা করত। তাদেরও এখানে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রায় আচমকাই ভূতচতুর্দশীতে ভূতের গুজব রটে যাওয়ায় সরব হয়ে ওঠে এই স্টেশন এলাকা। সঙ্গে সঙ্গে এই খবর কানে যায় বিজ্ঞান মঞ্চের। তারা বিকেলেই ওই স্টেশনে গিয়ে স্থানীয়দের নিয়ে পোস্টার সেঁটে জানিয়ে দেয় ‘ভূত সংক্রান্ত অপপ্রচার ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন’ কিংবা ‘ভূতের গুজব রটালে সমস্যায় পড়তে হবে’।
[আরও পড়ুন: সোনার গয়নায় সাজছে বড়মা, শ্যামা আরাধনার প্রস্তুতি তুঙ্গে নৈহাটিতে]
স্থানীয়দের এমন বিজ্ঞান মনষ্কতায় খুশি বিজ্ঞান মঞ্চ। আসলে বছর দুয়েক আগে ভূতের ভয় ভাঙাতে প্রশাসন-বিজ্ঞান মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে রাত জাগার অভিযানে শামিল হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। তাই বিজ্ঞান ম়ঞ্চের পুরুলিয়া কেন্দ্রের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “বহু চেষ্টায় এই স্টেশনে ভূতের ভয় ভাঙানো গিয়েছে। স্টেশনের জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে। এরপর কেউ ভূতের গুজব রটালে তাকেই বিপদে পড়তে হবে। স্থানীয় মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছেন।”
কিন্তু প্রশ্ন অযোধ্যা পাহাড়তলীর কোটশিলার এই গ্রাম ‘ভূত’-এর বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিজ্ঞান মনষ্কতার পরিচয় দিলেও এই বেগুনকোদর স্টেশন কেন ভূতুড়ে পরিবেশ থেকে বার হতে পারছে না? সময়টা ১৯৬০। বেগুনকোদর স্টেশন তৈরির বছর ছয়েক পরেই এখানকার স্টেশন মাষ্টার ও তার স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
তারপর থেকেই নাকি রাতের বেলায় এই স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই লাইনের ওপর ছায়ামূর্তি ছুটে আসত। সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে কাউকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। এরপরই ভেসে আসত আর্তনাদ, চিল চিৎকার, কান্নার আওয়াজ। তারপর থেকেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় স্টেশনের। ২০০৬ সালে পুনরায় এই স্টেশন চালু হলেও রাতে পার হওয়া লোকাল ট্রেন এখানে স্টপেজ দিত না। বছর দুয়েক আগে এই স্টেশনে প্রশাসনের রাত জাগা অভিযানের পরই মধ্য রাতেও ট্রেন থামতে শুরু করে। তাই দক্ষিন-পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি ডিভিশনের কোটশিলা-মুরি শাখায় চা বিক্রি করা এই এলাকার বাসিন্দা বাবলু কুমার বলেন, “কত দিন রাতে বাড়ি না গিয়ে স্টেশনে থেকেছি। কোথাও কোন ভূত দেখতে পাইনি। এসব গুজব রটিয়ে স্টেশনটাকেই তুলে দিতে চাইছেন কেউ কেউ। এরকম গুজব রটালে জবাব মিলবে।”
[আরও পড়ুন: শব্দবাজির ব্যবহার রুখতে নজরদারি শুরু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের, চালু কন্ট্রোল রুম]
এদিকে বিজ্ঞান মঞ্চও কোটশিলা থানার পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গা ছমছম করা ভূত-পেত্নীর গুজব যে কাটছেই না। বেগুনকোদরেরই বাসিন্দা তথা একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “ভূত কিনা জানি না। তবে ওই স্টেশনে কিছু একটা আছে। ওখানে গেলেই তা অনুভব করা যায়। আবহাওয়া ভাল থাকলে কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা রাতে ওই স্টেশনে যাব।”
দেখুন সেই পোস্ট।
সব খবরের আপডেট পান সংবাদ প্রতিদিন-এ
Highlights
- ১৯৬০ সালে বেগুনকোদর স্টেশন তৈরির বছর ছয়েক পরেই এখানকার স্টেশন মাষ্টার ও তার স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
- তারপর থেকেই অনেকে রাতের বেলায় এই স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই লাইনের ওপর ছায়ামূর্তি ছুটে আসতে দেখেছে।
- পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চ সোশ্যাল সাইটে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ‘ভূত’ দেখালে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাবেন। আর না পারলে গ্রামবাসীদের ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।