ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দেশ থেকে জার্মানিতে যাওয়ার সময় ব্যাগের মধ্যে প্যারাসিটামল ও ব়্যানট্যাক নিয়ে যান পুরুলিয়ার গবেষক ছাত্র। আর এই তথ্য সামনে রেখে বার্লিনের ভারতীয় দূতাবাসের ল্যান্ড লাইনের নম্বর থেকে কনসিউলর পরিচয় দিয়ে ফোন করে ওই গবেষককে। তাঁর নামে জার্মানির নারকোটিক সেল ‘ফেডারেল অপিয়াম এজেন্সি’-তে মামলা হয়েছে এই ভয় দেখিয়ে জরিমানা স্বরূপ ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল দুষ্কৃতীরা।
ওই দূতাবাসের কনসিউলর দীপক কলের নাম বলে প্রথমে করোনা পরিস্থিতির কথা জানতে চায়। তারপর ওই গবেষকের সমস্ত তথ্য এক এক করে তাঁর সামনে রেখে মানি ট্রান্সফার-সহ দুটি অ্যাকাউন্টে জরিমানা স্বরূপ ওই টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। তবে এই টাকা এখন জরিমানা হিসাবে লাগলেও পরে বার্লিনের দূতাবাস তা ফেরত দিয়ে দেবে বলে জানায়। ফলে ওই গবেষক সঞ্চয়ের টাকা-সহ অন্যদের কাছেও ঋণ নিয়ে ওই টাকা দিতে বাধ্য হন তিনি। প্রোটন কেমিস্ট্রিতে গবেষণারত গটিংগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকেই এমন কৌশল অবলম্বন করে তাদের পাতা ফাঁদে ফেলে ওই বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে জার্মান পুলিশ থেকে ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম সেল-সহ পুরুলিয়ার সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশনের কর্তাদের। এদিকে ওই বিপুল টাকা দুষ্কৃতীরা হাতিয়ে নেওয়ায় এই করোনা পরিস্থিতিতে জার্মানিতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন ওই বাঙালি গবেষক। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামরুগন বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।
ওই গবেষণারত ছাত্রের নাম পীযূষ চক্রবর্তী। তাঁর বাড়ি পুরুলিয়ার পাড়া থানার আনাড়া ফাঁড়ির অন্তর্গত পড়াশিবনে। ২৬ বছরের এই গবেষক ছাত্র প্রায় আড়াই বছর ধরে জার্মানিতে রয়েছেন। গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১৫ জানুয়ারি জার্মানিতে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি ব্যাগে ১০টি প্যারাসিটামল ও ২০টি ব়্যানট্যাক নিয়ে যান। ওই বাঙালি গবেষক ছাত্র বলেন, “এমনভাবে আমার কাছে ভারতীয় দূতাবাসের ল্যান্ড লাইন থেকে কনসিউলর দীপক কলের নাম নিয়ে ফোন আসে, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। জার্মানির নারকোটিক সেল ছাড়াও আমাকে দেশের মিনিস্টারি অফ এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সেও অভিযোগ হয়েছে বলে বলা হয়। ফলে ঘাবড়ে যাই। তাছাড়া আমার পাসপোর্ট নম্বর, জার্মানির রেসিডেন্ট পারমিটের সমস্ত তথ্য বলে দেয় ওই দুষ্কৃতী। আমি এইসব নম্বর গোপন করলেও তা ধরা পড়ে যায়। ফলে মামলার হাত থেকে বাঁচতে জরিমানা স্বরূপ আমাকে যেভাবে বলে সেভাবে টাকা দিতে বাধ্য হই।”
গত ৬ মে থেকে টানা ৮ মে পর্যন্ত ওই গবেষক ছাত্রকে ফোনে ব্যস্ত রাখে ওই দুষ্কৃতী। পরে তিনি ওই দূতাবাসের কনসিউলর দীপক কলকে এই ঘটনা জানিয়ে মেল করে তার উত্তর পেলে তাঁর কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। কিন্তু তারপরেও ওই দুষ্কৃতী তাকে নানা ভাবে পাতা ফাঁদে ফেলতে চায় বলে অভিযোগ। এরপর ওই গবেষক ছাত্র গটিংগান পুলিশ স্টেশন-সহ ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ করেন। পুরুলিয়ার সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করেন তাঁর মামা পার্থসারথি মিশ্র। মানি ট্রান্সফার ছাড়াও যে দুটি অ্যাকাউন্টে ওই গবেষক টাকা জমা করেন তাদের নাম সোমনাথ বিশ্বাস ও রঞ্জন দরবার। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলি এরাজ্যের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডানলপ শাখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.