সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ট্রেনে লুটপাট করেই লাখপতি! রীতিমতো দূরপাল্লার ট্রেনের আসন সংরক্ষণ করে একেবারে যাত্রী সেজে উঠে পড়া। তারপর সুযোগ বুঝেই কোপ। দরজা–জানালা বন্ধ করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অপারেশন। গত দশ বছর ধরে একশো-রও বেশি ট্রেনে ডাকাতি করে চক্রকে জালে তুলল পুলিশ।
[পোষ্যর দেহ নিয়ে থানায় কৃষক, ছাগল ‘খুনে’ বিড়ম্বনায় পুলিশ]
দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের আদ্রা ডিভিশনের জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশন থেকে তাদের ধরা হয়। বিলাসপুর-পাটনা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে অস্ত্রসমেত চার আন্তঃরাজ্য ডাকাত দলকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। যা শুনে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে রেল পুলিশের কর্তাদের! ধৃত চার ডাকাত বিহারের পাপ্পু যাদব, এম ডি এক্রামুল, এম ডি ইমতাজ এবং ঝাড়খণ্ডের আইনুল হক। এরা সকলেই আজ লক্ষ-লক্ষ টাকার মালিক। পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছরের এই দুষ্কৃতীরা দশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় একশোটির বেশি এক্সপ্রেস ট্রেনে ডাকাতি করেছে। ধৃতদের থেকে রেল পুলিশ একটি পাইপগান, ছয় রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি ভোজালি উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে মিলেছে বিলাসপুর-পাটনা সহ একাধিক ট্রেনের আসন সংরক্ষণ করা টিকিট। যেগুলির মাধ্যমে তারা লুঠপাট চালাত। এই দলের মাথা পাপ্পু। তার পরিকল্পনাতেই অপারেশনের ছক কষা হয়। হাওড়া থেকে ছাড়া বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনগুলি মূলত এদের টার্গেট। তাছাড়া নিউ দিল্লি-পুরী পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস-সহ ভুবনেশ্বর গামী একাধিক ট্রেনেও এরা ডাকাতি করে বলে রেল পুলিশ জানতে পেরেছে।
[বিয়ের এক মাসের মধ্যেই দম্পতির রহস্যমৃত্যু, উঠছে খুনের অভিযোগ]
রীতিমতো যাত্রী সেজে ট্রেনের এসি কামরার আসনও আগে থেকে সংরক্ষণ করে নিতে এই দুষ্কৃতীরা। বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে দেখলে এদের বোঝার যেত না এরা এক-একজন আন্তঃরাজ্য ডাকাত! সাজ-পোষাক, কথাবার্তাই একেবারে যেন কর্পোরেট! হিন্দি, ইংরেজি, ভোজপুরি, ওড়িয়া, অসমিয়া, বাংলা-সহ একাধিক ভাষায় তারা একেবারে অনর্গল। কামরায় বসে যাত্রীদের সঙ্গে এমন ভাব জমাবে যে বোঝার উপায় নেই এরা লুটেরা। তারপর সুযোগ বুঝে ট্রেনের দরজা বন্ধ করে ডাকাতি। তারপর স্টেশনে নেমে চম্পট। এমনকী পরিস্থিতি অন্যরকম হলে চলন্ত ট্রেন থেকেও ঝাঁপ দিয়ে পালায় তারা। এরা মূলত এরাজ্য ছাড়া ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার, ছত্তিশগড়ে চলাচল করা ট্রেনে অপারেশন চালায়। আদ্রা জি আর পি-র এই সাফল্যে প্রশংসা করেছে রেল। জিআরপি ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডুর নেতৃত্বে এই সাফল্য পায় রেল পুলিশ। তবে এই দলে আরও দুই সদস্য রয়েছে। আন্তঃরাজ্য ডাকাত দলকে জেরা করে তাদের সন্ধান চালাচ্ছে আদ্রা জিআরপি। এমনকী ট্রেনে এইরকম ভাবে ডাকাতি করা আরও কোন দুষ্কৃতী দলের খোঁজ পাওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছে রেল পুলিশ।
[আফরাজুলকে মেরে আফসোস নেই, জেল থেকেই বিস্ফোরক ভিডিও শম্ভুলালের]