চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: একসময় বাঙালির জল-হাওয়া পরিবর্তন মানেই ছিল মধুপুর-গিরিডি। শুধু যে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে যে তাঁরা পশ্চিমে যেতেন, এমনটা কিন্তু নয়, সেখানকার স্বাস্থ্যকর জল নিয়ে যেতেন ২৭৩ কিলোমিটার দূরে কলকাতায়। মহেশমুণ্ডা এলাকার কুয়োর জল ড্রামে ভরতি করে নিয়ে যাওয়া হত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে রেলপথে সেই জল যেত কলকাতায়। গিরিডির সেই বিখ্যাত মহেশমুণ্ডা জংশন এবং কুয়োর সংস্কারের উদ্যোগ নিল আসানসোল রেল ডিভিশন। এমনকী, ব্রিটিশ আমলের ছোট্ট স্টেশনটিকে হেরিটেজ সম্মান দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
[৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা, গাড়ির ধাক্কায় আহত চিতাবাঘ]
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় মধুপুর থেকে গিরিডি পর্যন্ত রেললাইনটি তৈরি হয় কয়লা পরিবহণের জন্য। পরবর্তীকালে এই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এই রুটেই পড়ে মহেশমুণ্ডা স্টেশন। কয়েকমাস আগে মহেশমুণ্ডা স্টেশন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন আসানসোলের ডিআরএম প্রশান্ত কুমার মিশ্র। তিনি খেয়াল করেন, চালাছাদ, পাতলা লালমাটির ইটের দেওয়াল, চিমনি, আর্চিং দেওয়া বড় দরজা জানালা। ব্রিটিশদের তৈরি করা স্টেশনটি আজও অপরিবর্তিত। স্টেশনে বিশালাকার কুয়োটিও দেখেন রেলের ওই পদস্থ আধিকারিক। আসানসোলের ডিআরএম জানিয়েছেন, মহেশমুণ্ড স্টেশনের ইতিহাস তিনি জানতেন মহেশমুণ্ডা এলাকার কুয়োর জল ড্রামে ভরতি করে নিয়ে যাওয়া হত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। শুনেওছিলেন, এই কুয়োর জল পিপে ভর্তি করে রেলপথে নিয়ে যাওয়া হত কলকাতায়। সবকিছু দেখার পর হেরিটেজ কমিটির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কয়েকদিন আগে ডুরান্ড হলকেও হেরিটেজ সম্মান দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। একইভাবে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর স্মৃতিবিজড়িত ছোট্ট এই স্টেশনটিকেও হেরিটেজ সম্মান দিয়ে সংস্কার করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা শুধু নয়, মহেশমুণ্ড স্টেশনের কুয়োর জল খান রেলযাত্রীরাও। রেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কুয়োটিকে রাজস্থানের বাওরি পদ্ধতিতে সংস্কার করা হবে। সিঁড়ি দিয়ে কুয়োতে নামতেও পারবেন গ্রামবাসীরা। গরমেও কুঁয়োর জলের স্তর নিচে নামবে না। মহেশমুণ্ডা স্টেশনটি চলে সৌর বিদ্যুতের আলোতে। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প চলে না। স্টেশনটিতেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে ও আমূল সংস্কার করা হবে। তবে ব্রিটিশ আমলে স্টেশনটি যেমন ছিল, ঠিক তেমনই থাকবে।আসানসোলের ডিআরএম প্রশান্ত কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, গিরিডিতেই মৃত্যু হয়েছিল কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি প্রফেসর শঙ্কুর গবেষণাগারও এই গিরিডিতেই। বিজ্ঞানি প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের বাড়ি গিরিডিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন গল্পে অধুনা ঝাড়খণ্ডের এই জনপদটির উল্লেখ পাওয়া যায়। জল হাওয়া পরিবর্তনে বাঙালি ছুটে আসে এখানে। তাই পূর্বরেলের এই ছোট্ট স্টেশনটিকে সাজানো হবে পর্যটনস্থল হিসাবে।
[ সাইকেলে ইউরোপের ৬ দেশে সফর, ৫০-এ কামাল পলতার লিপিকা বিশ্বাসের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.