সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অরুণাচলম মরুগানাথম। ‘প্যাডম্যান’ হিসাবেই দেশজোড়া তাঁর খ্যাতি। মহিলাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি সচেতনতায় পথ দেখাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে এককথায় ‘বিপ্লব’ করে ফেলেছিলেন এই দক্ষিণী। বলিউডে অক্ষয়কুমারও আর বালকির ‘প্যাডম্যান’ ছবিতে মরুগানাথমের কথাই বলেছেন। এবার সেই প্যাডম্যানের দেখানো পথে হেঁটেই জঙ্গলমহলে নজির গড়েছে এক সমবায় সমিতি। পুরুলিয়ার জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের জন্য নিজেরাই তৈরি করেছে স্যানিটরি ন্যাপকিন। এখানেই শেষ নয়, তাঁদের হাতে তৈরি এই ‘জয়পুরি’ ন্যাপকিনই বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে পাঠাচ্ছে ওই সমবায় সমিতি।
[বিয়ে ভাঙার পরেও প্রেম! সম্পর্কের টানাপোড়েনে আত্মঘাতী কলেজ ছাত্রী]
বাজারচলতি স্যানিটরি ন্যাপকিনগুলির দাম যেখানে প্যাকেট প্রতি ৩০ টাকা, সেখানে এই ‘জয়পুরি’ প্যাডের দাম রাখা হয়েছে ১৬ ও ২০ টাকা। জয়পুর সমবায় সমিতির হাতে তৈরি এই স্যানিটরি ন্যাপকিনগুলি দু’টি প্যাকেটে মিলছে। একটি প্যাকেটে থাকছে ছ’টি ন্যাপকিন ও আরেকটি প্যাকেটে ৮টি ন্যাপকিন। জয়পুরের এই সমবায় সমিতির ম্যানেজার সুবীর হাজরা বলেন, “আমরা এখন ন্যাপকিন বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছি। আমাদের উদ্দেশ্য, শুধু স্যানিটরি ন্যাপকিন বেচাই নয়, পাশাপাশি পুরুলিয়ার মতো পিছিয়ে পড়া এলাকার মহিলাদের মধ্যে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিষয়ে তাঁদের সচেতন করছি আমরা।” জয়পুরের বিডিও নয়না দে বলেন, “এই সমবায় দারুণ কাজ করছে। এই ন্যাপকিন আমরা বন্যাবিধ্বস্ত কেরলেও পাঠালাম। ওদের কাজে প্রয়োজন হলে প্রশাসনও সহযোগিতা করবে।”
জয়পুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করে। এই সমবায়ের আরও নানান কর্মকাণ্ড আছে। ২০১৩-তে রাজ্যের সেরা সমবায়ের তকমা পেয়েছে এই সমবায় সমিতি। ২০১৭-তে জয়পুর সমবায় সমিতিকে সমবায় রত্ন পুরস্কার দেয় রাজ্যের সমবায় দপ্তর। ইতিমধ্যেই জয়পুর সমবায় সমিতির মহিলাদের হাতে তৈরি ‘জয়পুরি প্যাড’ পুরুলিয়া ও পাশ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বাজারে ছেয়ে গিয়েছে। পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ডের কিছু শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে এই স্যানিটরি ন্যাপকিন। এই সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজার চলতি ন্যাপকিনগুলি মূলত তুলো দিয়ে তৈরি। এখানে তুলোর পরিবর্তে মোলায়েম কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় সেই নরম কাপড়ের মধ্যে একটি ওষুধও ব্যবহার করা হচ্ছে। মুম্বইয়ের একটি সংস্থা পাঠাচ্ছে ওই ওষুধ। জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির অধীনে মোট ২০৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। সেই গোষ্ঠীগুলির মহিলারাই ‘জয়পুরি প্যাড’ বানাচ্ছেন। এদের সংখ্যা দু’ হাজার ৬০০। মোট দু’টি ইউনিট কাজ করছে। প্রতি ইউনিটে দশ জন করে রয়েছেন। এই দু’ হাজার ৬০০ মহিলার মধ্যে ১০০ জন আবার বিপণনের দায়িত্বে রয়েছেন। গত সোমবারই কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এক হাজার ‘জয়পুরি’ স্যানিটারি ন্যাপকিন কেরলে পাঠিয়েছে এই সমবায়।
[দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী ও সন্তানের উপর অ্যাসিড হামলা, গ্রেপ্তার যুবক]
সমবায় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বিভিন্ন দোকানে দোকানে জয়পুরি প্যাড বিক্রি করা ছাড়াও জঙ্গলমহলের স্কুল কলেজগুলিতেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তাঁদের হাতে তৈরি এই স্যানিটরি ন্যাপকিন নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন। সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা শিবিরও চলছে। ঠিক যেমনটা একসময় অরুণাচলম মরুগানাথম দক্ষিণ ভারতের গ্রামে গ্রামে ঘুরে করতেন। আজ সেই পথেরই পথিক পুরুলিয়ার জয়পুর সমবায় সমিতি।