দেবব্রত মণ্ডল, গঙ্গাসাগর: ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা পেরলেই শুরু হয়ে যাবে মকর সংক্রান্তির পূণ্যস্নান। সেই উপলক্ষে গঙ্গাসাগরের নিরাপত্তা একেবারে সর্বোচ্চ স্তরে। লাখো লাখো মানুষের ভিড়ে নজরদারি চালাচ্ছে ড্রোন, কপ্টার। মুড়িগঙ্গার নাব্যতা মাপা চলছে যন্ত্রের মাধ্যমে। জলস্তর স্বাভাবিক থাকলে, তবেই ঘাট থেকে ভেসেল রওনা হবে। বাবুঘাট থেকে সাগরস্নানের ঘাট পর্যন্ত নজরদারিতে বসানো হয়েছে হাজারটি সিসি ক্যামেরা। থাকছে লাইফ সেভিং র্যাপিড অ্যাকশন টিম। মেলার মাঠে বসেছে জায়েন্ট স্ক্রিন। ওয়াকিটকির মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্তারা প্রতি মুহূর্তে খোঁজখবর নিচ্ছেন। মাইক্রোফোনে লাগাতার চলছে প্রচার।
নিরাপত্তায় একচুল ফাঁকও যাতে না থাকে, সেদিকে কড়া নজর পুলিশ প্রশাসনের। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে সৌন্দর্যায়নেও কমতি নেই। কপিল মুনির মন্দির, মাঠে রঙিন আলো, লেজার লাইট। প্রতিটি রাস্তায় আলাদা আলো লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গঙ্গাসাগরে ব্যবহার করা হচ্ছে বিচ বাইক। রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি জলপথে গঙ্গাসাগরে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও। সূত্রের খবর, সাগরে নিরাপত্তার স্বার্থে হোভারক্র্যাফ্ট, হাই স্পিড পেট্রল ভেসেল তৈরি রাখা হয়েছে।
কপিলমুনি মন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানদাস মোহন্ত জানিয়েছেন, পঞ্জিকা মতে ১৫ তারিখ রাত ১টা ৪৩ থেকে পূণ্যস্নানের লগ্ন শুরু। সকাল ১০টা ৩২ পর্যন্ত চলবে স্নান। হাড়হিম ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে সাগরজলে ডুব দিয়ে পূণ্য সঞ্চয়ের লক্ষে পূণ্যার্থীদের আগমন হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে তা আরও বাড়বে। বাবুঘাট থেকে আমতলা, ডায়মন্ড হারবার হয়ে হারউড পয়েন্ট পর্যন্ত ‘গঙ্গাসাগর’ লেখা বাসগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। তা সামাল দিতে সবরকম প্রস্তুতি সারা প্রশাসনের। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, গোটা এলাকাকেই নিরাপত্তার বেড়াজালে মুড়ে ফেলা হয়েছে। সাগরস্নানে নেমে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, সে কারণে ডুবুরিদেরও তৈরি রাখা হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে রবার জেমিনি বোট, উপকূলরক্ষী বাহিনীর ফাস্ট পেট্রল ভেসেল। কোস্টাল সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক সিস্টেমেরও সাহায্য নেওয়া হবে। হলদিয়ায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর অপারেশন সেন্টার থেকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালানো হবে।
এত নিরাপত্তা মধ্যেই অবশ্য ভিড় এবং তীব্র ঠান্ডায় মেলায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিহারের বাসিন্দা শিবপূজন শর্মা। বছর বাহাত্তরের ওই ব্যক্তির হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা যাওয়ায় দ্রুত তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। অচিন্ত্য সাহু নামে বছর আশির আরেক স্থানীয় ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স অর্থাৎ বার্জে পাঠানো হয়েছে কাকদ্বীপের হাসপাতালে।
ছবি: অরিজিৎ সাহা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.