অর্ণব আইচ: পাউচ থেকে পাউডার বের করে ছড়িয়ে দেওয়া হল এক ড্রাম জলে। হিমঘরের ভিতর সেই জল স্প্রে করে দেওয়া হল মাংসে। ব্যস, কেল্লা ফতে। ‘কেমিক্যাল’-এর গুণে ভাগাড়ের পচা মাংস হয়ে গেল তাজা। এতটাই তাজা যে অনায়াসে ভাগাড়ের মাংস পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপালে। আবার কখনও ঝাড়খণ্ড বা বিহারেও। ট্রাকে করে বিদেশে যাওয়ার সময় গরমে এই মাংস নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ‘কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট’ করে তা পাঠালে অনেকদিনই থাকে টাটকা।
গোয়েন্দাদের কাছে খবর, ‘কেমিক্যাল’ হিসাবে ব্যবহার করা হত হয় ফরমালিন অথবা সোডিয়াম মেটা বাই সালফাইট। শরীরের পক্ষে তা যতই ক্ষতিকর হোক, তাতে গা ছিল না পচা মাংসের চক্রের মাথাদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফরমালিন শরীরের ক্ষতি করেই। সোডিয়াম মেটা বাই সালফাইড মেশানো মাংস বা খাবার খেলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, অ্যালার্জির মতো অসুখও হতে পারে। জানা গিয়েছে, নাইট্রিফিকেশন বা কার্বন মনোক্সাইড ব্যবহার করেও মাংস তাজা রাখা যায়। কিন্তু ‘কেমিক্যাল’ ব্যবহার করলে সহজে তার ফল মেলে।
[কর্মবিরতি কাটিয়ে সোমবারই ফিরতে পারে হাই কোর্টের চেনা ছবি]
পুলিশের কাছে খবর, মাংসের ‘কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট’-এর জন্য হিমঘরকেই বেছে নিয়েছিল এই চক্রের মাথারা। এর পিছনে রয়েছে ট্যাংরার বাসিন্দা এক চিনা ব্যক্তি, যে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে। ভাগাড়ের মাংস নারকেলডাঙার গ্যাস স্ট্রিটের কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে আসত চক্রের সদস্যরা। সেই মাংস আট নম্বর হিমঘরে ঢুকিয়ে বাইরের দু’টি দরজা তারা বন্ধ করে দিত। হিমঘরের ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিতে পরে নিত শীতের পোশাক। ড্রামে জলভর্তি করে তাতে ঢালত ‘কেমিক্যাল’-এর পাউডার। তা ভাল করে জলে মিশিয়ে স্প্রে করে দিত ভাগাড়ের মাংসে। আবার কখনও ফরমালিন মেশানো জলও স্প্রে করা হত। পরে ভাগাড়ের মাংস মিশিয়ে দেওয়া হত টাটকা মাংসের মধ্যে। এরপর তা প্যাকেটে ভরে রেখে দেওয়া হত ক্রেটে। সেই ক্রেটগুলি ঢুকিয়ে দেওয়া হত ‘অ্যান্টি চেম্বার’-এ। সময়মতো সেই মাংস বরফের মধ্যে প্যাক করে তোলা হত মালবাহী গাড়িতে। ধৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, ভাগাড়ে পশু মরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাচার চক্রের মাথারা সেখানে পৌঁছে গিয়ে মাংস ছাড়ানো শুরু করত।
যদিও পুলিশের মতে, পশুর মৃত্যু থেকে শুরু করে মাংসে কেমিক্যাল ঢালার মধ্যে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে এমনিতেই সেই মাংসে পচন ধরত। তাই ভাগাড়ের মাংস পচনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ডিপ ফ্রিজারে রাখার আগে রাসায়নিক ঢেলে তাজা রাখার চেষ্টা করত। ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা হত বলে পশু কিনতে হত না। সেই খরচ বেঁচে যেত। বাংলাদেশ সীমান্তে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো সম্ভব হলেও নেপাল সীমান্তে যেতে অনেকটাই সময় লাগে। তাই রাসায়নিক স্প্রে করার ছক কষেছিল তারা।
[স্কুলের ভিতর শিক্ষককে মারধর, অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকা]
এদিকে, বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে পাঠানোর সময় জিনিসগুলি পরীক্ষা করার দায়িত্ব সাধারণত শুল্ক দপ্তরের। যদিও বিএসএফ-এর গোয়েন্দাদের মতে, কাগজপত্র ও চালানে সমস্যা না থাকলে পশুর মাংস বিদেশে পাঠানো যায়। কিন্তু বাইরে থেকে দেখে মাংসের মান বোঝার উপায় থাকে না। আর এই সুযোগই নিত পচা মাংসের চক্র। বাংলাদেশ ও নেপালের এজেন্টদের মাধ্যমে পচা মাংস চলে যেত ওই দেশগুলিতে। কোন সংস্থার নাম করে ভাগাড়ের মাংস বাংলাদেশে পাচার হত, বিএসএফ-এর গোয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছেন। এক বিএসএফ গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, এবার থেকে বাংলাদেশে মাংস চালান হওয়ার আগে কাগজপত্র যাতে ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়, সেই বিষয়ে তাঁরা শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করছেন। একই সঙ্গে বিদেশের এজেন্টদের নাম জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.