Advertisement
Advertisement

Breaking News

অসাধ্য সাধন! নিজের আঙুল কেটে চন্দ্রবোড়ার বিষদাঁত বের করলেন সর্পপ্রেমী

পচন ধরতে থাকা আঙুলকে রক্ষা করতে ডাহা ফেল চিকিৎসকরা।

Snake lover operates himself to remove poison
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 3, 2019 9:10 pm
  • Updated:February 3, 2019 9:10 pm

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: নিজের হাতে নিজের অস্ত্রোপচার। শুনতে আশ্চর্যের কথা মনে হলেও, এমনই নজিরবিহীন কৃতিত্বের অধিকারী হলেন ব্যান্ডেলের পশুপ্রেমী বাসিন্দা চন্দন সিং। চন্দ্রবোড়ার ছোবল খেয়ে ২০ দিন ধরে হাসপাতালে ভরতি ছিলেন চন্দন। কিন্তু তাঁর আঙুলে ঢুকে থাকা সাপের দু’টি দাঁত কিছুতেই বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। শেষপর্যন্ত অসম সাহসী চন্দন নিজেই আঙুলে সুচ ফুটিয়ে বের করে ফেললেন বিষাক্ত চন্দ্রবোড়ার আটকে থাকা দু’টি দাঁত। বিষমুক্ত করলেন নিজেকে।

                                                     [সুন্দরবনের জঙ্গলে স্বামীর দেহ আগলে রাতভর বসে থাকলেন স্ত্রী]

Advertisement

পশুপ্রেমী বিশেষত সর্প বিশারদ হিসেবে ব্যান্ডেলের চন্দন সিংয়ের খ্যাতি আশেপাশের এলাকার সকলেই জানেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে কার্তিক পুজোর সময় বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেনীতে একটি পুজো মণ্ডপে ঢুকে পড়েছিল বিশালাকার একটি চন্দ্রবোড়া সাপ। আতঙ্কিত মানুষজন সাপটিকে তাড়াতে ডেকে পাঠান চন্দন সিংকে। কার্তিক পুজোর রাতে সেই চন্দ্রবোড়া ধরে দর্শনার্থীদের বিপদের হাত থেকে মুক্ত করলেও, নিজের বিপদ ডেকে আনেন চন্দন। পরেরদিন জঙ্গলে ছাড়তে গেলে, ঘুরে দাঁড়িয়ে চন্দ্রবোড়া সাপ চন্দনের বাঁ হাতের তর্জনী ও মধ্যমায় ছোবল মারে। সাপের দু’টি দাঁত ভেঙে তাঁর আঙুলের মধ্যে ঢুকে যায়। প্রাণ সংশয় দেখা দেয় চন্দনের। প্রথমবার তিনি চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি হন। দু’দিন পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে সেদিন রাত থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় চন্দনের। হাতে বড় বড় ফোসকা পড়ে। পচন ধরতে শুরু করে হাতে। ফের চন্দন হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি চিকিৎসকদের জানান, আঙুলের মধ্যে দু’টি দাঁত ঢুকে থাকার কারণে বিষক্রিয়ার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাই হাতে পচন ধরতে শুরু করেছে। এরপর চন্দনের আঙুলের এক্স রে করা হয়। কিন্তু সাপের দাঁতে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব কম থাকায় এক্স রে-তে দাঁত দু’টির অস্তিত্ব ধরা পড়ে না।

Advertisement

চন্দনের কথায়, চিকিৎসকরা তাঁর আঙুলে অপারেশান করেও দাঁতের সন্ধান পাননি। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর চন্দন টক্সিকোলজি বিভাগের চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। পরে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা শুরু করেন। পাশাপাশি আঙুলের ক্ষত নিরাময় নিজেই যত্ন শুরু করেন। নিয়মিত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সলিউশন ও স্যালাইন দিয়ে পরিস্কার করে, তাতে বেটাডিন দিয়ে নিজেই নিজেই ব্যান্ডেজ করতেন চন্দন। দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যেও ধৈর্য না হারিয়ে নিজেই নিজের চিকিৎসা করে যাচ্ছিলেন। আর ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলেন, আঙুলের ভিতর দাঁত দু’টির অবস্থান বদলাচ্ছে। উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করতে থাকেন চন্দন।

                                        [ঘরেই ‘চোর’! পুলিশি তদন্তে দাদা-বউদির গ্রেপ্তারির খবরে বিস্মিত ভাই]

অসম সাহসী চন্দনের অদম্য লড়াইয়ের কাছে নিশ্চিত মৃত্যু পরাজয় স্বীকার করে নেয়। শেষপর্যন্ত নিজের চিকিৎসা নিজেই করেন চন্দন। শনিবার সন্তর্পণে নিজের আঙুল সূঁচ দিয়ে কেটে সাপের দাঁত দু’টিকে বের করেন তিনি। দেখা যায়, একটি দাঁত প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা। চন্দনের আক্ষেপ, দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে হাতের যন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া সত্বেও চিকিৎসকরা দাঁত দু’টি বের করতে পারেননি। তাই তাঁকে একটু বেশিই যন্ত্রণা সহ্য করতে হল।চন্দনের এই মানসিকতাকে স্যালুট জানিয়েছেন চুঁচুড়া ও ব্যান্ডেলের মানুষ। তবে এলাকার বাসিন্দাদের মতে, সকলের মানসিক গঠন চন্দনের মতো নয়।বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, মৃ্ত্যুবরণই ছিল নিয়তি। চন্দন সিংয়ের এই লড়াই দেখে উজ্জীবিত তাঁরা। এই উপলব্ধি হয়েছে, বিপদের মধ্যে পড়লে বুদ্ধি ও সাহস হারাতে নেই। তাহলেই জীবনের অনেক বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ