সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: শান্তিপুর বিষমদ কাণ্ডে তোলপাড় গোটা রাজ্য। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। প্রশাসনের বিরুদ্ধে যখন ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, তখন হাওড়ায় চোলাই মদের কারবার নির্মূল করার শপথ নিয়ে্ছেন এক গৃহবধূ! ১১৫ জন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে চোলাই মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দাপট এতটাই যে, নেশাড়ুরাই শুধু নন, ওই গৃহবধূকে সমঝে চলে চোলাই মদের কারবারীরাও। সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে পুরস্কৃত করেছে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন।
[ শান্তিপুর বিষমদ কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১, গ্রেপ্তার চার]
উলুবেড়িয়ার রাজাপুরের তুলসীবেড়িয়া গ্রামে থাকেন কল্যাণী পালুই। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল তাঁর। স্বামী চাকরি করতেন ন্যাশনাল জুটমিলে। ১৯৯৭ সালে মিলে কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তানকে একাই মানুষ করছেন কল্যাণীদেবী। পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়, অভাব নিত্যসঙ্গী। কিন্তু তা বলে নিজের সামাজিক দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি ছাপোষা ওই গৃহবধূ। পথশিশুদের নিয়ে স্কুল চালানো-সহ নানাধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত কল্যাণীদেবী। বিষমদে একে পর এক অকালমৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁকেও। প্রথমে রাজাপুরের তুলসীবেড়িয়ায় একাই চোলাই মদের কারবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ওই গৃহবধূ। ঝক্কিও কম পোহাতে হয়নি। প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কল্যাণী পালুইকে টলানো যায়নি। পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন এলাকার ১১৫ জন মহিলা। শুধুমাত্র তুলসীবেড়িয়া গ্রামেই কম করে ৬০টি চোলাই মদের ঠেক ভেঙে দিয়েছে এই প্রমীলা বাহিনী। সামাজিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে কল্যাণী পালুইকে পুরস্কৃত করেছে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন।
একসময়ে চোলাই মদের কারবারের স্বর্গরাজ্য ছিল উলুবেড়িয়ার রাজাপুরের তুলসীবেড়িয়া গ্রাম। গ্রামে ৬০টি মদের ভাটি থেকে প্রতিদিন ১২০০ লিটার করে দেশি মদ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হত। মদের ঘাঁটি ভাঙতে গিয়ে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ফিরতে যেতে হত পুলিশকেও। আর এখন নেশাড়ুরা তো বটেই, গৃহবধূ কল্যাণী পালুই ও তাঁর সঙ্গীদের ভয়ে কাঁপে চোলাই মদের কারবারীরাও।
[বিষমদ কাণ্ডের প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার নদিয়া বনধের ডাক]