সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্কিত ঘোষণা। শেষ পর্যন্ত প্রবল প্রতিবাদে পিছু হটা। রাজ্যের আটটি রুটে লোকাল ট্রেন তুলে নেওয়ার কথা বলে পরে পূর্ব রেল প্রত্যাহার করে নিলেও যাত্রীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে একরাশ বিভ্রান্তি। এখানেই শেষ নয়, যে আটটি রুটে ট্রেন বন্ধের কথা বলা হয়েছিল তাতেও রয়েছে তথ্যের নানা অসঙ্গতি।
[৮টি লোকাল ট্রেনের রুট বন্ধে রেলমন্ত্রকের চিঠি রাজ্যকে]
এক চিঠি, অসংখ্য বিভ্রান্তি
শুক্রবার পূর্ব রেলের এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার খবর সামনে আসতে শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখায় তুমুল বিভ্রান্তি ছড়ায়। ওই দিন রেলের পরিদর্শনের জন্য শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে বিকেল থেকে দোকানগুলি ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। একে ট্রেন বন্ধের ঘোষণা, তার উপর হকাররা দোকান বন্ধ রাখায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়ে। যাত্রীদের একাংশের মধ্যে রটে যায় ট্রেন বন্ধ রাখা হবে। সব থেকে আতঙ্কে বজবজ শাখার যাত্রীরা। তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় শিয়ালদহ-বজবজ লাইনে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হবে। একই আলোচনা শুরু হয় সোনারপুর-ক্যানিং, নামখানা-বারুইপুর রুটে। আর লাইনগুলি রেলের অলাভজকন হিসাবে চিহ্নিত। যাত্রীদের বক্তব্য রেলের তরফে কোনও নোটিস বা ঘোষণা না থাকায় বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।
[স্বপ্নপূরণের ট্রেনে কার্যত স্বপ্নভঙ্গ, কাটোয়া-বলগোনা রুটে প্রশ্নের মুখে পরিষেবা]
ট্রেনই চলে না, আবার নতুন করে কেন বন্ধের কথা?
পূর্ব রেলের চিঠিতে জানানো হয় ভীমগড়-পলাস্থলী রুট অলাভজনক। এই রুটে তুলে দেওয়ার কথা লেখা হয়। রেল কর্তৃপক্ষর এই তথ্য কতটা ভুলে ভরা তা পরিষ্কার ওই এলাকার এক রেল আধিকারিকের বক্তব্য। আসানসোল ডিভিশনের মধ্যে পড়ে ওই রুট। ওই ডিভিশনের ডিআরএম প্রশান্ত মিশ্র, ওই রুটে ১২ বছর ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ। নতুন করে কী করে তাহলে বন্ধ হবে? এই প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং রেলের আধিকারিক।
সবে লাইন বসছে, তার মধ্যে রুট তুলে দেওয়ার ঘোষণা!
কয়েক বছর আগে ন্যারোগেজ লাইন তুলে দেওয়া হয় শান্তিপুর-নবদ্বীপ ঘাট শাখায়। ওই রুটে ব্রজগেজ বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রডগেজের কাজ চলছে। যে লাইনে ট্রেনই চলল না তা কী করে অলাভজনক হল? এমন প্রশ্ন তুলেছেন দুই শহরের বাসিন্দারা।
[রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের হাতে আধার-প্যান, ফাঁস বিস্ফোরক তথ্য ]
ট্রেন চালু হতেই অলাভজনক
অনেক প্রতীক্ষার পর কাটোয়া-বর্ধমান রুটে ব্রডগেজ লাইন চালু হয়েছে গত ১২ জানুয়ারি। সারাদিনে একটি মাত্র ট্রেন চলে ওই রুটে। সবে ট্রেন চালু হওয়ার পর রেল কীভাবে ওই লাইনে লাভ-ক্ষতি বুঝে গেল? তা কোনওভাবে বুঝতে ওই লাইনের যাত্রীরা।
[রাজ্যে মাও গতিবিধি প্রায় উধাও, এবার ঝাড়খণ্ডে অভিযানে নামছে পুলিশ]
গঙ্গাসাগর, সুন্দরবনে দুশ্চিন্তা
ক্যানিং-সোনারপুর। বারাসত-হাসনাবাদ এবং বারুইপুর-নামখানা। রেলের ‘কালো তালিকা’য় রয়েছে এই রুটগুলি। অথচ গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য একমাত্র ট্রেন এই নামখানা লোকাল। এই লাইনে কয়েক ঘণ্টা অন্তর ট্রেন চলে। বাদুরঝোলা ভিড়। একই অবস্থা সোনারপুর-ক্যানিং এবং বারাসত-হাসনাবাদ শাখায়। সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দাদের কলকাতায় আসার জন্য ট্রেনই সেরা পথ। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে চিন্তায় দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা।
[কুয়াশা কাড়ল প্রাণ, মুর্শিদাবাদে নয়ানজুলিতে বাস উলটে মৃত অন্তত ৮]
চিঠির প্রতিবাদে রেল অবরোধ
রাজ্যকে দেওয়া পূর্ব রেলের চিঠিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকালে প্রতীকী অবরোধ হয়ে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখায়। প্রায় ২০ মিনিট চলে অবরোধ।
[৩৬৫ দিন, ২৪ ঘণ্টা জাতীয় পতাকা ওড়াতে চেয়ে হাই কোর্টে মামলা]
সবশেষে
অলাভজনক যুক্তি দেখিয়ে রেলের এই সিদ্ধান্তকে মানতে পারছেন না যাত্রীরা। তাদের বক্তব্য কীভাবে রোজগার হবে তা দেখতে রেলকে। কারণ অধিকাংশ স্টেশনে চেকিংয়ের বালাই নেই। যাত্রীদের এমন মনোভাব এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পেরে শুক্রবার এই চিঠির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রেল স্বর নিচু করে। কোনও রুট বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন পূর্ব রেলের জিএম হরিন্দর রাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.