নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ‘স্বপ্নপূরণ’। মানুষকে সেবা করে তাঁকে বাঁচিয়ে তোলার স্বপ্ন। সে নিয়েই নাটক করল সিউড়ির লিভার ফাউন্ডেশন। এবং এই নাটকের মাধ্যমেই নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান ও অভিনন্দন জানালেন জেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবকরা। সম্মান জানানোর স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সিউড়ির সেই রামকৃষ্ণ সভামঞ্চ। যেখানে ২০১২ সালে সেখানেই কয়েকবার উপস্থিত হয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবকদের কাজের সামাজিক সমীক্ষা করেছিলেন তিনি। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না নোবেলজয়ী অভিজিৎ। তাঁর অনুপস্থিতিতেই নোবেলজয়ীকে শ্রদ্ধা জানালেন লিভার ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
তবে তখনও যে প্রশ্ন ছিল। এখনও সেটা প্রাসঙ্গিক। ‘স্বপ্নপূরণ’ নাটকে সেটাই অভিনয় করে দেখালেন স্বাস্থ্য সেবকরা। তাঁরা কি সত্যি গ্রামে ডাক্তারি করেন। নাকি শহরের বড় ডাক্তারের এজেন্ট। নাটকের মঞ্চে সংবাদ মাধ্যমের আলোচনাসভা। যেখানে একদিকে চিকিৎসক সংগঠনের দুই নেতা চিকিৎসক রায় ও সেনগুপ্ত। বিপক্ষে দু’জন চিকিৎসক। যাঁরা গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় কোয়াক চিকিৎসকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণে বিশ্বাসী। নাটকের মধ্যে একটি সাংলাপে চিকিৎসক রায় বললেন, “আমরা যখন চিকিৎসক হিসাবে শপথ নিই, তখনই বলি গ্রামীণ হাতুড়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে পেশার স্বার্থে কোনও যোগাযোগ রাখব না। অথচ চিকিৎসক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন নথিভুক্ত চিকিৎসক হয়েও গ্রামে গ্রামে সেটাই করে চলেছেন।”
মারাত্মক এই অভিযোগে চিকিৎসক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দেশ গ্রাম প্রধান। বাংলায় নথিভুক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৪০ হাজারের কিছু বেশি। অথচ সারা বাংলার ৩৮ হাজার গ্রামে দু’লক্ষের বেশি গ্রামীণ হাতুড়ে চিকিৎসক। কী করে এই চিকিৎসক দিয়ে সারা বাংলার চিকিৎসা করা যায়।” নাটকের মাধ্যমে এভাবেই গত দশ-বারো বছরের নানা অভিজ্ঞতার কথা তুললেন হাতুড়ে চিকিৎসকরা। বাকি কথা তেতো গেলানোর মতন করে বোঝালেন লিভার ফাউন্ডেশনের স্বপ্ন কর্তা অভিজিৎ চৌধুরি। তিনি স্বাস্থ্য পরিষেবকদের বললেন, “আমরা দু’টি কারণে এই প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলাম। প্রথমত গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যের উন্নয়ন। দ্বিতীয়ত, যাতে ভুল কম করি, ঠিক বেশি করি। এ কাজ অনেকেই করছেন।” তাঁর দাবি, “যদি নোবেল জয়ীকে সম্মান জানাতে হয়, তাহলে এতদিন যা বলে আসছি তা পালন করতে হবে। এলাকায় নিজেকে ডাক্তার বলবেন না। স্যালাইন চালাবেন না। যে কোনও কারণেই অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখবেন না।”
উল্লেখ্য, এদিনের অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাতে অভিজিৎ চৌধুরি ছাড়াও শৈবাল মজুমদার-সহ সংস্থার অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কারণ ২০১২ সালে লিভার ফাউন্ডেশনের উপস্থিত এই কোয়াক চিকিৎসকদের নিয়ে নোবেলজয়ীর সংস্থা এমআইটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমাজে কী প্রভাব পড়েছে সে নিয়ে তিনি সমীক্ষাপত্র প্রকাশ করেছে। তার থেকেও বড় কথা, এই স্বাস্থ্য সেবকদের অনেকের ভাবনার পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এদিনের সভায় তাই নোবেল জয়কে সামনে রেখে সেই স্বপ্নপূরণের কথা শোনালেন সংস্থার অন্য অভিজিৎ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.