দীপঙ্কর মণ্ডল: শিক্ষকরাই এখানে ঘণ্টা বাজান। তালা খোলেন। সাফাইয়ের কাজও করতে হয় তাঁদের। নামেই হাই স্কুল। আসলে একটি ভাঙাচোরা টালির বাড়ি। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা নির্বিশেষে সবার একটাই শৌচাগার। কয়েকশো ছেলেমেয়েকে পড়িয়ে চলেন হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক। দেওয়াল চাপা পড়ে যে কোনওদিন দুর্ঘটনায় পড়তে পারে কচিকাঁচারা। হেলদোল নেই শিক্ষা দপ্তরের। বিভিন্ন জায়গায় বিহিত চেয়ে ফল হয়নি। হতাশ শিক্ষকরা নবান্নের দ্বারস্থ হয়েছেন। ৪ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের নাম আটাত্তর হাইস্কুল। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে ৫৩৪ পড়ুয়াকে নিয়ে চলছে এই স্কুল।
স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা। শিক্ষার অধিকার আইন বলছে প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ জন পড়ুয়ার জন্য একজন শিক্ষক থাকা আবশ্যিক। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে জমা পড়া চিঠি বলছে আটাত্তর হাই স্কুলে ৬৬ জন পড়ুয়ার জন্য গড়ে একজন শিক্ষক আছেন। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে হলে ন্যূনতম ঘর থাকা উচিত দশটি। কিন্তু এখানে পড়ানোর উপযুক্ত ক্লাসরুম চারটি। তাহলে চলছে কী করে! নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে জুনিয়র হাই হিসাবে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়। কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই ২০০০ সালে হাই স্কুলে উন্নীত হয় প্রতিষ্ঠানটি। এখন শিক্ষক সংখ্যা আট।
স্কুলে মোট পড়ুয়ার ৩৪ শতাংশ সংখ্যালঘু। কাছাকাছি অন্য স্কুল না থাকায় এখানেই ভিড় করে পড়ুয়ারা। কিন্তু বৃষ্টি এলেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কী করে বা ক্লাস হবে। অল্প হোক বা ভারি, বৃষ্টি এলে ভাঙা টালির চাল বেয়ে জলে ভাসে শ্রেণিকক্ষ। আটজন শিক্ষকের একজন মহিলা। সব মিলিয়ে ৬০ শতাংশ ছাত্রী। সবার জন্য একটিই টয়লেট। শৌচালয়ের সমস্যায় ভোগেন সবাই। ভাঙাচোরা ভবনটির চারিদিকে কোনও সীমানা প্রাচীর নেই। মেয়েদের গোপনীয়তা বলে কোনও শব্দই এখানে তাই প্রযোজ্য নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে বহুবার দরবার করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জানানো হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। নবান্নে স্কুলের শিক্ষকরা মিলিতভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, “আপনি ছাত্রছাত্রীদের মায়ের মতো। ওদের রক্ষা করবেন এই আশা করছি। আমরা দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গায় জানিয়ে ফল পাইনি। বাধ্য হয়ে আপনার দ্বারস্থ হলাম।”
শিক্ষকদের বক্তব্য, স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেই। ক্লার্ক নেই। সব কাজ তাঁরাই করেন। এক তরুণ শিক্ষক এ প্রসঙ্গে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে জানিয়েছেন, “দরজার তালা খোলা, ঘন্টা বাজানো বা সাফাইকর্মীর কাজে আমাদের কোনও লজ্জা নেই। সমস্যা হচ্ছে ভাঙাচোরা বাড়ির দেওয়াল ভেঙে যেকোনও দিন অঘটন ঘটতে পারে।” নবান্নের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আটাত্তর হাইস্কুলের জন্য অনুদান চেয়ে যে আবেদনটি এসেছে তার নম্বর ২৯৯। প্রত্যেকটি আবেদনই গুরুত্ব দিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। আশায় বুক বাঁধছে জীর্ণ স্কুল।
ছবি- প্রতীকী
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.