ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: শরীরের উচ্চতা মাত্র ২ ফুট। ট্রেনে, বাসে চড়তে খুব অসুবিধা হয়। আর তাই মা বাবার কোলে চড়েই বেশিরভাগ সময় কলেজে যেতে হয়। তা সত্ত্বেও কপালে জোটে লোকজনের নানারকম টিপ্পনি। কিন্তু জীবন এভাবে চলুক তা চান না মুক্তা খাতুন। আর তাই সব বাধা উপেক্ষা করে শুধু মনের জোরেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। লক্ষ্য একটাই, উচ্চশিক্ষিত হয়ে চাকরি করে গরিব মা-বাবার দুঃখ ঘোচানো। ভাই বোনদের মুখে হাসি ফোটানো। মনের কোণে চেপে রাখা সেই জেদ নিয়েই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ভর দিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন মুক্তা। আর তাঁর সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে আগামী ৩ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ির মেয়ে মুক্তাকে রাজ্যের রোল মডেল হিসাবে ঘোষণা করতে চলেছে নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তর।
জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, ঘর-বাইরের বাধা টপকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ধুপগুড়ি গালর্স কলেজের ছাত্রী মুক্তার হাতে বিশেষ সম্মান তুলে দেওয়া হবে। এলাকার মেয়ের এহেন সম্মান প্রাপ্তিতে তাই খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। একইভাবে উচ্ছ্বসিত তার স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। ঘরে মারাত্মক অভাব। দু’বেলা ঠিকমতো খাওয়া জোটে না। তার উপর পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সে বাদেও আরও এক ভাই ও এক বোন প্রতিবন্ধী। ফলে পড়াশোনা শিখে ভাল চাকরি করে পরিবারের দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে চায় মুক্তা। বাবা মকবুল হোসেন দিনমজুর। কোনওদিন কাজ জোটে তো কোনওদিন আবার ঘরে বসে থাকতে হয়। ছেলে মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ বেছে নিয়েছেন মা জালিমা খাতুন। একটাই লক্ষ্য, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে বড় করা। আর মুক্তার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
হাজারও বাধা টপকে মুক্তার এগিয়ে চলার পথে সাহস জোগাতে পাশে দাঁড়িয়েছে ময়নাগুড়ি স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিবন্ধী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, মেয়েটি যেভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। অভাবকে তুচ্ছ করে মনের জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এখন সে কলেজে পড়ছে। মুক্তাকে রাজ্য সরকার রোল মডেল হিসাবে বেছে নেওয়ায় আমরা খুবই খুশি। শনিবার তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে আমরা মুক্তাকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হব। ৩ তারিখ অনুষ্ঠান। রাজ্য সরকার তাকে রোল মডেল হিসাবে সংবর্ধিত করতে চলায় খুশি ধুপগুড়ির মেয়ে মুক্তা। তিনি বলেন, “এতে দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেল। আমি চাই, আমার মতো যাঁরা রয়েছে, ঘরের কোণে বসে না থেকে লড়াই শুরু করুক। একদিন না একদিন ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাবই আমরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.