সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের আগে রীতিমতো সন্ত্রাসের পরিবেশ নদিয়ায়। ভর সন্ধেবেলা খুন হয়ে গেলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। শনিবার মাজদিয়া ফুলবাড়ি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ সূত্রে খবর, এদিন সরস্বতী পুজোর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফুলবাড়ি এলাকায় গিয়েছিলেন বিধায়ক। মঞ্চের ওপর পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। পরপর বেশ কয়েকটি গুলি চলে। ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন সত্যজিৎ বিশ্বাস। শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ বাহিনী। দুষ্কৃতীদের পরিচয় জানতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
তথ্য পাচারের অভিযোগে ফের গ্রেপ্তার ভারতী ঘনিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক
কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার অন্যতম জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি সত্যজিৎ বিশ্বাস। ২০১১ সালে বাম সরকারের পতনে তৃণমূলের উত্থানের সময় থেকেই তিনি কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক। এলাকায় যথেষ্ট কাজ করেছেন, জনসংযোগ ভাল তাঁর। প্রতিবাদী হিসেবেও পরিচিত। এলাকায় দলীয় সংগঠনের ভিত শক্ত করতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহজেই তাঁর সহযোগিতা পাওয়া যেত। ফলে সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে এলাকার বিধায়ক আমন্ত্রিত থাকবেন, তা স্বাভাবিক। একই মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রত্না ঘোষ কর। কিন্তু সেই মঞ্চেই ঘটে গেল ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। একে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করে সরাসরি বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি গৌরীশংকর দত্তর সুস্পষ্ট অভিযোগ, ‘দুষ্কৃতী যে বা যারাই হোক, তারা মুকুল রায়ের মদতপুষ্ট। তদন্তে সত্য প্রকাশিত হবেই।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, সত্যজিৎ অত্যন্ত জনপ্রিয়, ভাল ছেলে। মতুয়া মহাসংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তা নিয়েই গত কয়েকদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। তাতে সত্যজিৎ কিছুটা চিন্তিত ছিল। এই সময়েই ওর ওপর হামলা চালানোর টার্গেট করেছে দুষ্কৃতীরা। এর শেষ দেখে আমরা ছাড়ব।’ নদিয়া জেলার ভারপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলেরও একই বক্তব্য। তিনিও সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘উনিশে ফিনিশ হয়ে যাবে বুঝে বিজেপি এখন তৃণমূলের শক্তপোক্ত নেতাদের সরিয়ে দিচ্ছে। অরাজকতা তৈরি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের পায়ের তলায় মাটি নরম। তাই অন্যের ওপর হামলা চালিয়েছে।’ তিনি রবিবার সকালের মধ্যে কৃষ্ণগঞ্জে পৌঁছে ঘটনা বিস্তারিত দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
বিয়ের আড়াই মাসের মধ্যে গৃহবধূর মৃত্যু, গ্রেপ্তার স্বামী-সহ ৩
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য গোটা ঘটনায় দলের জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি কোনওরকম হিংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে না। ওখানে মাটি মাফিয়াদের নিজেদের মধ্যে সংঘাতের বলি হয়েছেন বিধায়ক। কথায় কথায় তৃণমূল বিজেপির ওপর দায় চাপায়।’ তবে ভর সন্ধেবেলা কৃষ্ণগঞ্জের এই ঘটনা লোকসভার আগে যে নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির করে তুলল, তা বলাই বাহুল্য।