সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার পর এক বছর কেটে গেলেও সংস্কার হয়নি দার্জিলিংয়ের দুটি হেরিটেজ রেলস্টেশন৷ ফলে হেরিটেজ তকমা ধরে রাখাটাই এখন প্রশ্নের মুখে৷ বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জঙ্গি আন্দোলনের জেরে গয়াবাড়ি ও সোনাদা স্টেশনে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়৷ তারপর এক বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে৷ কবে পুরোপুরি সংস্কার করা হবে তা নিয়ে কোনও ধারণা দিতে পারেনি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর) কর্তৃপক্ষ৷ হেরিটেজ কমিটির হাতে স্টেশনগুলি তুলে দেওয়া হবে কিনা তাও জানেন না তাঁরা।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ডিরেক্টর এমকে নার্জারি বলেন, “বিষয়টি ইউনেস্কোকে জানানো হয়েছে। তাদের হেরিটেজ কমিটি এসে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব দিলে সেই অনুযায়ী স্টেশনটিকে তৈরি করে দেওয়া হবে। তাদের প্রস্তাব ছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো স্টেশনগুলিকে সংস্কার করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাতে হেরিটেজ তকমা ক্ষুণ্ণ হতে পারে। আমরা ওদের অপেক্ষাতেই বসে আছি।”
[মাজার থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত শিশু-সহ একই পরিবারের ৩ জন]
রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, এই স্টেশনগুলি অবিকল আগের মতো করেই তৈরি করতে হবে। বাহ্যিক কাঠামোয় কোনওরকম পরিবর্তন হয়ে গেলে ফের তকমা পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই একবারে বিষয়টি সমাধানের জন্য ইউনেস্কোর সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। চলতি বছর মে মাসে ইউনেস্কো হেরিটেজ কমিটির একটি দল স্টেশন দু’টি পরিদর্শন করে যান। পাশাপাশি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন তাঁরা। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি বিস্তারিত রিপোর্ট ইউনেস্কোর হাতে তুলে দিয়েছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাতে বিস্তারিত প্রস্তাব ও পরিবর্তনের প্রকল্প রয়েছে। মে মাসের পরিদর্শনের পর প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও কেন কোনও প্রস্তাব নেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রেল কর্তারা।
এ ছাড়া আগস্টের এক তারিখ থেকে ধস নেমে বিঘ্নিত হয়ে রয়েছে পাগলাঝোরার কাছে ট্রেন লাইন। ফলে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং অস্থায়ীভাবে টয়ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সেটির কাজও শুরু করা যাচ্ছে না, লাগাতার ছোট-বড় ধসের কারণে। তবে তা একেবারেই সাময়িক বলে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দ্রুতগতিতে পাগলাঝোরা কাছে রেললাইন মেরামতের কাজ চলছে। ডিএইচআরের ডিরেক্টর এমকে নার্জারি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
[চুরুলিয়ার দুরাবস্থায় দুঃখ পেয়েছিলেন বাজপেয়ী, স্মৃতিচারণায় নজরুল অ্যাকাডেমির সদস্যরা]
সামনেই পুজো, তার আগে টয়ট্রেনের যোগাযোগ চালু না হলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে পর্যটনকে। বিষয়টিতে রাজ্যের তরফেও হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন, রেলের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কারও হাত নেই৷ ২০১৭ সালের ৮ জুলাই সোনাদা স্টেশনটি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ওই মাসেই ১৪ জুলাই গয়াবাড়ি স্টেশনে আগুন দেয় তারা। তারপর থেকে স্টেশনগুলি ওই অবস্থাতেই রয়েছে। সামান্য পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার কাজ হলেও আদতে সেই অর্থে কোনও রকম সংস্কারে হাত দেওয়া যায়নি। ডিএইচআরের প্রধান কার্যালয় এলিসা ভবনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷