Advertisement
Advertisement

Breaking News

WB Assembly Elections 2021 TMC'

ভাঙা পায়েই ‘খেলা’ মমতার, রাজ্যে তৃণমূলের বিপুল জয়ের নেপথ্যে এই সাত কারণ

ব্র্যান্ড মমতাতেই বাজিমাত তৃণমূলের।

WB Assembly Elections 2021: Here are the possible reasons for TMC's huge win | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:May 2, 2021 9:48 pm
  • Updated:May 2, 2021 10:06 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোনও পরিবর্তন নয়। বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অন্তত সেকথাই বলছে। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ (Amit Shah), জেপি নাড্ডা, যোগী আদিত্যনাথ, শিবরাজ সিং চৌহান, বিপ্লব দেব ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক তারকা প্রচারক এনেও বাংলায় তৃণমূলের ভোট ব্যাংকে থাবা বসাতে পারল না বিজেপি। ভাঙা পায়েই ‘খেলা’ দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী। অমিত শাহ যেখানে বুক বাজিয়ে দাবি করছিলেন দু’শোর বেশি আসন নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, সেখানে বিজেপির ঝুলিতে এল সাকুল্যে ৭৫টি আসন। অন্যদিকে, ২০১৬ সালের আসন সংখ্যার রেকর্ডও পেরিয়ে গেল তৃণমূল (TMC)। নজির গড়ে বাংলার শাসকদল ভোট পেল ৪৮ শতাংশের বেশি। কিন্তু কোন ম্যাজিকে? চলুন আলোচনা করা যাক।

১। ব্র্যান্ড মমতা: রাজ্যের ২৯৪ আসনে তিনিই প্রার্থী। ষোলোর নির্বাচনের মতোই ভোটের আগে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে স্থানীয় স্তরে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কাজ করছিল। ছিল দুর্নীতির অভিযোগও। স্থানীয় নেতাদের সেই ভাবমূর্তি আড়াল করতে নিজের ভাবমূর্তিকেই বাজি ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া, বঙ্গ রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) একটি ব্র্যান্ডের নাম। বিজেপি তাঁর সমকক্ষ কাউকে দাঁড় করাতে পারেনি। ভোটের চূড়ান্ত ফলাফলে সেই ব্র্যান্ড মমতা এবং বিজেপির মুখের অভাবই প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন’, হারের দায় দুর্নীতিতে বিদ্ধ দলবদলুদের উপর চাপালেন দিলীপ]

২। মেরুকরণ: অতি বেশি হিন্দুত্ব ডুবিয়ে দিল গেরুয়াকে। নতুন প্রজন্মকে কাছে টানতে পারলেও, ৪৫ ঊর্ধ্বের ভোটরদের কাছে টানতে ব্যর্থ বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ব। উলটে ‘সাম্প্রদায়িকতা’র বিরোধিতায় একজোট করে তথাকথিত ‘রাজনীতি সচেতন’ ভোটারদের। মোদি-শাহ-যোগীদের (Yogi Adityanath) প্রচার, মমতাকে বেগম বলে কটাক্ষ, এসব চটকদারিতে কিছু ভোটারকে একত্রিত করতে পারলেও, যে যে এলাকায় সংখ্যালঘুর সংখ্যা কম, সেখানে মেরুকরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বরং বিজেপির আগ্রাসী প্রচার অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে একজোট করেছে সংখ্যালঘুদের।

Advertisement

৩। বাঙালি-অবাঙালি: রাজ্যে তৃণমূলের বিপুল জয়ের নেপথ্যে অবশ্যই কাজ করেছে পিকে স্যারের নিখুঁত পরিকল্পনা। ভোটপ্রচারের একেবারে শুরু থেকেই এই নির্বাচনকে বাঙালি বনাম বহিরাগতদের লড়াই হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। বহিরাগত ইস্যু তুলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রভাব কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন ‘পিকে স্যার’। সেই সঙ্গে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান তুলে বাঙালি অস্মিতাকেও জাগিয়ে তুললেন পিকে। প্রশান্তের (Prashant Kishor) সব পরিকল্পনা যে সফল হয়েছে, দিনের শেষে ফলাফলে তা প্রমাণিত হল।

৪। দুয়ারে সরকার: লোকসভার হতাশাজনক ফলের পর বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। দুর্নীতির অভিযোগে দুষ্ট স্থানীয় নেতাদের প্রতি বহু ক্ষোভ জমে ছিল সাধারণ মানুষের মনে। সেখান থেকে ‘খেলা’ ঘোরান প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূলস্তরে সমীক্ষা, স্থানীয় ইস্যু নিয়ে কাজ এবং সেইমতো রণকৌশল তৈরি করা। কেন্দ্র ধরে ধরে সাধারণ মানুষের সমস্যা মমতার কান অবধি পৌঁছে দেওয়াটাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। ‘দিদিকে বলো’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় সমাধানে’র মতো কর্মসূচির মাধ্যমে সেটা সফলভাবে করতে পেরছেন পিকে। বিশেষ করে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি তৃণমূলস্তরে অভূতপূর্ণ সাড়া ফেলেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা অনেকাংশে আটকে দিতে পেরেছে তৃণমূল।

[আরও পড়ুন: ‘দিদি ও দলীয় কর্মীদের শক্তির কাছে মুখ পুড়ল মোদি-শাহদের’, টুইটে খোঁচা ডেরেকের]

৫। মহিলা ভোট: দুয়ারে সরকারে মহিলাদের প্রাধান্য, মহিলাদের হাত খরচের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী। রাজের নারীদের ক্ষমতায়নে একের পর এক কর্মসূচি নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় সমস্ত নির্বাচনী জনসভাতেই ‘মা-বোনেদের’ কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন মমতা। যা মন জিতেছে বাংলার মায়েদের। তাছাড়া তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারের মূল স্লোগান, ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। মমতার এই ঘরের মেয়ে ভাবমূর্তি আরও কাছে টেনেছে বাংলার মেয়েদের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহিলা ভোটাররা বিজেপির থেকে অনেক বেশি পছন্দ করেছেন মমতাকেই।

৬। বাম-কংগ্রেস ভোট: রাজ্যে মূলত মেরুকরণের ভোট হওয়ায় তৃতীয় বিকল্পের কথা মানুষ ভাবেনি। বিজেপিকে আটকাতে বাম এবং কংগ্রেসের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভোটাররা সেরা বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন তৃণমূলকেই।। কংগ্রেসের ভোট প্রায় পুরোপুরি তৃণমূলে চলে গিয়েছে। বাম (Left) এবং কংগ্রেসের জোটকে ২০১৬ সালেই প্রত্যাখ্যান করেছিল মানুষ। আইএসএফ যোগ হওয়ায় প্রত্যাখ্যানের মাত্রাটা বেড়েছে বই কমেনি। বাম-কংগ্রেসের ভোটের বেশিরভাগটাই গিয়েছে তৃণমূলের ভোটবাক্সে। আর সেটা বিজেপিকে আটকানোর স্বার্থেই।

৭। করোনা মোকাবিলা: রাজ্যের নির্বাচনের শেষ দুই রাউন্ডে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল করোনা। হঠাৎ করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন, তথা বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলতে পেরেছিলেন মমতা। তাছাড়া, গোটা দেশে করোনা মোকাবিলায় অব্যবস্থা, ভ্যাকসিন সংকট, অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর জন্য কোথাও না কোথাও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দায়ী করেছে বাংলার মানুষ। পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের দামও বিরুদ্ধে গিয়েছে বিজেপির (BJP)। আর এসবই পক্ষে গিয়েছে তৃণমূলের।

কারণ যাই হোক ভোটের ফলাফল বলছে, বাজিমাত করেছেন বাংলার মেয়েই। এই ফলাফল প্রমাণ করে দিয়েছে স্রেফ হিন্দুত্বের ধুঁয়ো তুলে বাংলার নির্বাচনে জেতা যায় না। বাংলায় জিততে বাস্তবমুখী ইস্যু এবং গণআন্দোলনের ইতিহাস চায়। এই ফলাফল যে জাতীয় রাজনীতিতে মমতার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিল, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ