ফাইল ছবি
নিরুফা খাতুন: সম্প্রীতি চাই। ভোটযুদ্ধ চলুক সাম্প্রদায়িক ঐক্য বজায় রেখে। প্রচারে নামছে ধর্মীয় সংগঠনগুলো। ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়তে হিন্দু (Hindu), মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা একজোট হয়ে জেলায় জেলায় প্রচার চালাবেন।
এবার নির্বাচনে বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ধর্মীয় গুরুরাই। তাঁদের আশঙ্কা, ধর্মীয় মেরুকরণ করে ভোট (WB Election 2021) হলে বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবে। সম্প্রীতি বজায় রাখতে ধর্মীয় গুরুরা এবার ভোটে প্রচার নামছেন। বেলুড় মঠের ভাবপ্রচার পরিষদের মহারাজ তথা অল ইন্ডিয়া সর্বধর্ম সমন্বয়ের সভাপতি মহারাজ পরমানন্দ গিরি বলেন, “বাংলা সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত বারবার রেখেছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করেন। কিন্তু এখানে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। এটা কখনও কাম্য নয়। এতে বাংলার সম্প্রীতি নষ্ট হবে। সম্প্রীতি রক্ষা করতে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে।” তিনি জানান, “সম্প্রীতির প্রচারকার্যে আমাদের সঙ্গে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সংগঠনগুলোও যোগাযোগ করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে আছি। তবে ধর্মীয় সংগঠনগুলো নিজ নিজ এলাকায় প্রচার করবে। প্রয়োজনে একসঙ্গেও প্রচার করা হবে।’’
বঙ্গীয় ডিস্ট্রিক্ট ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের (Bengal District Imam Association) সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “ভোটে সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার জন্য সম্প্রতি ইমাম সংগঠনগুলোকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছিল। সেখানে ২৩টি জেলার ইমাম সংগঠন হাজির ছিল। ইমাম সংগঠনগুলো নিজেদের জেলায় প্রচার চালাবে। এছাড়া হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরাও বাংলায় সম্প্রীতি বজায় রাখতে ভোটে প্রচার চালাবেন বলে জানিয়েছেন।”
ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়তে এক মঞ্চ থেকে প্রচারকার্যে নামছেন ফাদার অরিজিৎ হালদার এবং পুরোহিত বিশ্বজিৎ রায় মিঠু। মুর্শিদাবাদ সম্প্রীতি মঞ্চ থেকে এই প্রচারকার্য চালানো হবে। এর আগে সিএ-এনআরসির প্রতিবাদে সম্প্রীতি মঞ্চ থেকে একসঙ্গে তাঁরা প্রচারকার্য করেছিলেন। ফাদারের বক্তব্য, “বাংলায় সম্প্রীতির সরকার চাই। তাই সাম্প্রদায়িক দলকে রুখতে হবে। সেজন্য এবার ভোটে সম্প্রীতি মঞ্চ থেকে পুরোহিত এবং ফাদাররা একযোগে প্রচারে নামছেন। আমাদের সঙ্গে ইমামরাও যোগাযোগ করেছেন।”
একই বক্তব্য পুরোহিত বিশ্বজিৎ রায় মিঠুর। মুর্শিদাবাদের রাধামাধব মন্দিরের সেবায়েত ও সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি তিনি। তাঁর কথায়, “ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। এতে রাষ্ট্রের কী আছে। ধর্ম ও রাজনীতি এক হলে সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে যাবে।” তাই যারা রাজনীতিতে ধর্ম মেশায় তাদের পাশে থাকবেন না ধর্মগুরুরা। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সম্প্রীতি বজায় রাখতে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দরকার। ধর্মনিরপেক্ষ সরকার যাতে গঠন হয় সেজন্য আমরা ভোটে প্রচার চালাব। জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষকে সচেতন করা হবে। অন্য ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
অল ইন্ডিয়া একতা ফাউন্ডেশনের (All India Akta Foundation) রাজ্য সভাপতি ডাঃ অরুণজ্যোতি ভিক্ষু বলেন, “সম্প্রীতির সরকার গড়তে বাংলার বৌদ্ধসমাজও প্রচারে নামছে। এ বিষয়ে অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে মিলে প্রচার চালাব।” বিজেপির তরফে তাঁদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা প্রচারে নামতে চাননি। আইএসএফের হয়েও কেউ প্রচারে নামবেন না বলে খবর। তবে সরাসরি তৃণমূলকে ভোট দিতেও বলছেন না তাঁরা। শুধু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা প্রচার করছেন নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.