শুভঙ্কর বসু: গবাদি পশু নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিল রাজ্য সরকার৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্দেশিকা বাতিলের দাবিতে সাংবিধানিক বেঞ্চে আবেদন জানাতে চলেছে রাজ্য৷ ঠিক হয়েছে আপাতত কেন্দ্রের ওই আইন মানা হবে না৷ আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত৷ গবাদি পশু নিয়ে উত্তরপ্রদেশ বা ঝাড়খণ্ডের মতো ঘটনা এরাজ্যে ঘটলে পুলিশকে কড়া হাতে মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন৷
নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের রূপরেখা তৈরি করতে আইন দফতরের বাছাই করা আধিকারিকদের নিয়ে একটি দল তৈরির নির্দেশে দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকস্তরে একপ্রস্থ আলোচনাও হয়ে গিয়েছে বলে খবর৷ একটি জনস্বার্থ মামলায় মঙ্গলবার মাদ্রাজ হাই কোর্টের মাদুরাই বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে আশার আলো দেখছে নবান্ন৷ তবে আইন বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিষয় দু’টি মোটেও এক নয়৷ জনস্বার্থ মামলায় এধরনের নির্দেশ এসেছে ঠিকই তবে সাংবিধানিক বেঞ্চে আইনি লড়াইটা সম্পূর্ণ ভিন্ন৷
[কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞার জেরে অনলাইনে গরু কেনাবেচার রমরমা]
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাসের বক্তব্য, “রাজ্যের জারি করা কোনও আইন কেন্দ্রীয় আইনকে ছাপিয়ে যেতে পারে না৷ কিন্তু কোনও রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্র যদি কোনও আইন পাস করে তাহলে আদালত তা বাতিল করতেই পারে৷” আর এক্ষেত্রে রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী৷
তবে পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখা হচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সাংবিধানিক বেঞ্চে গেলে কোন কোন রাজ্যের সমর্থন মিলবে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে একাধিক রাজ্যই৷ সেক্ষেত্রে কেরল, তামিলনাড়ু ও বিহারের সমর্থন পেতে পারে রাজ্য৷ তাছাড়া উত্তরের রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই এই আইনের বিরোধিতা করেছে৷
যদিও গবাদি পশু নিয়ে অন্য একটি মামলায় রাজস্থান হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে কেন্দ্র৷ গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করা ও গো-হত্যকারীর যাবজ্জীবন সাজার সুপারিশ করেছেন রাজস্থান হাই কোর্টের এক বিচারপতি৷ এছাড়াও কেরল হাই কোর্টও এ প্রসঙ্গে একটি জনস্বার্থ মামলা নিতে অস্বীকার করেছে৷ ফলে সাংবিধানিক বেঞ্চে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি সেরে রাখলেও একটু সময় নিতে চাইছে নবান্ন৷
[কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল নেতাজির, জানিয়ে দিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক]
তবে রাজ্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে যাওয়ার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল৷ দেশবাসীর খাওয়া-পরার মাপকাঠি নিয়ে ভারতীয় সংবিধানের কোনও ধারা বা উপধারায় একটি শব্দও উল্লেখ নেই৷ তাছাড়া কোনও রাজ্যে প্রাণিসম্পদ বেচাকেনার বাজার কোথায় হবে তা নির্ধারণ করার অধিকার রয়েছে একমাত্র সংশ্লিষ্ট রাজ্যেরই৷ কেন্দ্র কোনওভাবেই তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না৷ তাছাড়া কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে বেশ মোটা অঙ্কের শুল্কই হারাতে হবে রাজ্যকে৷ কারণ চামড়া রফতানিতে পশ্চিমবঙ্গ দেশে দ্বিতীয়৷ এই নয়া সিদ্ধান্তে এ রাজ্যের চর্মশিল্পে ব্যাপক মন্দা আসবে বলে ইতিমধ্যে নবান্নে রিপোর্ট এসেছে৷ প্রতিবেশী দেশে মাংস ও চর্মজাত পণ্য রফতানি বিপুলভাবে মার খাবে৷