টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: একজোড়া চটিই ধরিয়ে দিল খুনিকে। বাঁকুড়া সিমলাপালে এক বছরের শিশুকন্যা খুনের কিনার করল পুলিশ। মা তাপসী চক্রবর্তীই মেয়েক খুন করেছে বলে অভিযোগ। বাবা সঞ্জীব চক্রবর্তীর প্ররোচনাতেই খুনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, শিলাবতী নদীতে মেয়েকে ফেলে দিয়ে খুন করেছে মা-ই। বাড়ির আবর্জনার সঙ্গেই ঘুমন্ত মেয়েকে নদীতে ফেলে খুন করা হয়। ভুলবশত নদীর পাড়েই পড়েছিল মায়ের চটি জোড়া। জেরায় দোষ কবুল করেছে ঘাতক মা। যদিও নিজের উপরে আসা অভিযোগ উড়িয়েছে সঞ্জীব চক্রবর্তী। দু’জনকেই গ্রেপ্তার করেছে বাঁকুড়া থানার পুলিশ। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক মাকে তিনদিনের ও বাবাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছিল গত শনিবার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল সিমলাপালের ব্রিজগোড়া এলাকায়। ওই শিশুকন্যা প্রিয়ার দেহ শিলাবতী নদীতে মৎস্যজীবীদের জালে আটকে যায়। তারপর থেকেই স্থানীয় মানুষজন শিশুটির মা-বাবার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছিলেন। অথচ অভিযোগ অস্বীকার করছিল দম্পতি। সন্দেহ হওয়ায় ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিমলাপাল থানার পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে অভিযুক্তরা পুলিশকে বারবার ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাপসীদেবীকে একটু চেপে ধরতেই পুলিশের সামনে ভেঙে পড়ে সে। ঘটনার কথা স্বীকার করতেই তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
[পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে বিজেপির বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ, প্রকাশ্যে অডিও ক্লিপ]
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রিয়ার পিতৃত্বের কথা অস্বীকার করত সঞ্জীব। এ নিয়ে ওই দম্পতির মধ্যে রোজই বচসা লেগে থাকত। পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, ঘটনার তদন্তে নেমে দু’জনকে কখনও আলাদা আলাদাভাবে কখনও একসঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তখনই ঘটনার কথা স্বীকার করেছে ওই দম্পতি। পাশাপাশি মেয়েটির পিতৃত্ব নিয়ে যে সঞ্জীবের সংশয় ছিল সেকথাও স্বীকার করেছে সে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ যেভাবে বাড়ির আবর্জনা শীলাবতী নদীতে ফেলতে যেত তাপসী সেভাবে ঘুমন্ত মেয়েকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নদীতে ফেলে দেয় সে। পরে জেলেদের জালে শিশুর মৃতদেহ মেলে। ময়নাতদন্তে শিশুটির জলে ডুবে মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। যদিও মেয়েকে অপহরণ করে গুম খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিল সঞ্জীব। তবে পুলিশকে ভুল পথে চালিত করতেই এই কাজ করে সে। এদিকে গ্রেপ্তারির পর ধৃত তাপসী চক্রবর্তী বলে, ‘ঠিক করেছিলাম হয় নিজে মরব। নাহলে মেয়েকে মারব। কিন্তু আরও দুটি সন্তানের কথা ভেবে মরতে পারিনি। ও তো ছোট তাই ওকেই মারলাম।’ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অপবাদ ঘোচাতেই এই সিদ্ধান্ত তার।