প্রতীকী ছবি
বছরের প্রথম তিনমাসেই মহারাষ্ট্রে ৭৬৭ জন কৃষক অাত্মহত্যা করেছেন। সম্প্রতি এই পরিসংখ্যান সামনে অাসার পর দেশজুড়েই হইহই। মহারাষ্ট্র থেকে প্রতি বছরই কয়েকশো কৃষক অাত্মহত্যার খবর মেলে। কেন্দ্রের সঙ্গে বর্তমানে এই রাজে্যও বিজেপির সরকার। ডাব্ল ইঞ্জিন সরকারের অামলেও যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে চলেছে তা বলে দিচ্ছে এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে ৭৬৭ জন কৃষকের অাত্মহত্যা।
এক তথ্য মোতাবেক, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকার অাসার পর প্রথম অাট বছরে কৃষক অাত্মহত্যার সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় কৃষকদের দুর্দশা দূর করতে কতটা ব্যর্থ কেন্দ্র। কৃষক অাত্মহত্যার ঘটনা অাবার বিজেপি পরিচালিত রাজ্যগুলিতেই সর্বাধিক। গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশে কৃষক অাত্মহত্যার সংখ্যা ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অাত্মহত্যার মূল কারণ, ঋণের জালে জড়িয়ে যাওয়া। মহারাষ্ট্রে কৃষকদের বড় অংশ তুলো, অাখ ইত্যাদি বাণিজি্যক ফসল চাষে যুক্ত। এই ধরনের চাষে লগ্নি বেশি। কৃষকদের জমিতে বিরাট পরিমাণে মূলধন লাগাতে হয়। ফসলের পর্যাপ্ত দাম না মিললেই কৃষকদের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে হয়। একবার জড়া়লে অার বেরনোর উপায় থাকে না। তখন ‘মুক্তি’-র একমাত্র উপায় হিসাবে অধিকাংশ ঋণগ্রস্ত কৃষক অাত্মহত্যার পথই বাছেন।
কৃষকদের ঋণের দায় থেকে মুক্ত করতে মোদি সরকার নিজেদের এগারো বছরের রাজত্বে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করতে পারেনি। উপরন্তু, কৃষকদের ঋণের জালে জড়িয়ে দেওয়ার নানাবিধ পন্থা পরোক্ষে একপ্রকার উৎসাহিতই করেছে তারা। কিছুদিন অাগেই কেন্দ্র তিনটি কৃষি অাইন এনেছিল, যা কৃষকদের লাগাতার অান্দোলনের জেরে প্রত্যাহারে বাধ্য হয় সরকার। প্রত্যাহৃত কৃষি অাইনে দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অারও বাণিজ্যমুখী করার রাস্তা রাখা ছিল। কৃষি অাইন প্রত্যাহারের সময় কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কৃষকদের নূ্যনতম ফসলের দাম সুনিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্র অাইন করবে। সেই অাইন এখনও তৈরি হয়নি। কৃষকরা দিল্লি গিয়ে অান্দোলনের প্রস্তুতি নিলেই নানা দমনপীড়ন চালিয়ে তা ভেস্তে দেওয়া হয়।
মরার উপর খঁাড়ার ঘা হিসাবে অাসছে অামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি। অামেরিকা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত করার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চাপকে একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। ট্রাম্প বিভিন্ন মহলে যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাতে এটা স্পষ্ট, মোদি সরকার অাংশিক হলেও দেশের কৃষি পণে্যর বাজার মার্কিন সংস্থাগুলির জন্য খুলে দেবে। অামেরিকা প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদন করে। ভারতের কৃষিপণে্যর বাজার তাদের সংস্থাগুলির জন্য খুলে গেলে যে অামাদের কৃষকদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। এই অাশঙ্কার কথা সম্প্রতি নীতি অায়োগও তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। ফলে কৃষক অাত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে অাসার কোনও অাশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
(মতামত ব্যক্তিগত)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.