Advertisement
Advertisement

Breaking News

সব গেরুয়াধারী স্বামীজি নন, সব ফেসবুক পোস্ট নয় জাতীয়তাবাদী

গণতান্ত্রিক অধিকারের ভিত্তিতে স্বামীজির গেরুয়াবসন এবং হিন্দুত্ব সম্পর্কে মনোভাব মানুষ নিজের মতো করে পাল্টে ফেলছেন৷

All saffron clad Gurus are not Swami Vivekananda, neither all FB nationalists patriot
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 12, 2017 4:11 pm
  • Updated:January 12, 2017 4:16 pm

উর্মি খাসনবিশ: আজকাল মেট্রোয় যাতায়াত করার সময় নতুন করে ‘ফেলুদা’ পড়া শুরু করেছি৷ সত্যজিৎ রায়ের এই অনবদ্য সৃষ্টি আমার কৈশোরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল৷ যৌবনেও ঠিক সেই রেশই ধরে রাখতে চেষ্টা করছি মাত্র৷ আসলে গত কয়েকদিন ধরে বহু মানুষ সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর সৃষ্টিকে মধ্যমেধা বলে গণ্য করায় মানিক বাবু আর ফেলুদার উপর আকর্ষণ তীব্রভাবে বেড়ে গিয়েছে৷ মধ্যবিত্তর কথা ভেবে এক পৃথিবী লিখে গেলেন এক মানুষ৷ ছবি পরিচালনা করলেন কঠিন সময়ের মধ্যে এবং নিজের কাজের জন্য পেলেন অস্কার৷ আর এমন এক ‘মধ্যমেধা’র ব্যক্তিকেই নতুন করে যৌবনে আবিষ্কার করার তীব্র ইচ্ছা থেকেই ফেলুদার কাহিনী পড়া শুরু করেছি৷

মানিক বাবুর ‘বাদশাহী আংটি’ পড়ছিলাম সম্প্রতি৷ কাহিনীর প্রেক্ষাপটে এক গেরুয়া পোশাক পরা ভণ্ড সাধুর উল্লেখ রয়েছে৷ ব্রিফকেস হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সাধুবাবার সঙ্গে খোয়া যাওয়া বাদশাহী আংটির সঙ্গে ছিল গভীর সম্পর্ক৷ সেই সম্পর্ক আর যাই হোক পূণ্য বা নির্বাণের ছিল না৷ গভীর অথচ সূক্ষ্মভাবে লেখক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ধারণ এবং যাপনের ঠিক কোন জায়গায় রয়ে গিয়েছে ফারাক৷ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যখন চতুর্দিকে তাঁর উক্তি নিয়ে নানাবিধ উক্তি-অত্যুক্তি চলছে তাতেই হঠাৎ সাম্প্রতিক সময়ে দাঁড়িয়ে স্বামীজির ভাবনাকে বেশি করে মনে পড়ে যাচ্ছে৷

Advertisement

উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বামীজি৷ দেশকে দেখেছিলেন পূণ্যভূমিরূপে৷ বর্তমানে সমাজের কাছে ধর্ম যে বৃহত্তর প্রশ্নচিহ্ন হিসাবে প্রকট হয়েছে তার যাবতীয় উত্তর বহু আগেই দিয়ে গিয়েছিলেন স্বামীজি৷ বর্তমানে স্বামী বিবেকানন্দের ‘হিন্দুত্ববাদ’ নিয়ে বহু রাজনৈতিক মতবাদ চালাচালি হয়৷ স্বামীজিকে রীতিমতো হিন্দুত্ববাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর বানিয়ে গেরুয়াকে সততার প্রতীক চিহ্নিতকরণের যে যজ্ঞ চলছে দেশে তার সঙ্গে স্বামীজির প্রচার করা হিন্দুত্বের ঠিক কতটা মিল রয়েছে তা নিয়েই বরং আলোচনা করা উচিত৷

Advertisement

(অপরের অধিকারে হাত নয়, স্বামীজির এই বার্তাই আজ জরুরি)

ধর্মীয় মৌলবাদের বাইরে গিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দুত্বের কথা বলেছিলেন৷ সেই হিন্দুত্ব কোনও ধর্ম নয়, কোনও জাতি বা কোনও বিদ্বেষ নয়৷ সেই হিন্দুত্ব এক মানসিকতা৷ মানুষ হিসাবে নিজেকে উন্নত করে তোলার শিক্ষা৷ ধর্মীয় কোন্দলের অবসান ঘটিয়ে প্রতিটি ধর্মমতকে স্বতন্ত্রভাবে গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়েছিলেন তিনি৷ দেশকে ভালবাসার কথা বলেছিলেন স্বামীজি৷ নিজের জন্মভূমিকে সম্মান করতে বলেছিলেন৷ খুব আশ্চর্যভাবে সেই ভালবাসার সঙ্গে আজকের দিনে ফেসবুক স্টেটাসের বিশেষ সম্পর্ক নেই৷ জাতীয়তাবাদ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের পার্থক্যকে খুব স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি৷

আজকের সমাজে দাঁড়িয়ে একদিকে যখন দেশের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে মানুষ৷ দেশকে ভালবাসতে গিয়ে এবং ধর্মীয় বিভেদকে প্রকট করে তুলছে তখন বোধহয় স্বামীজির কথাকেই মনে করা উচিত৷ জাতীয়তাবাদের গয়নাস্বরূপ একদিকে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অহং বোধ করি আমরা৷ অন্যদিকে তাঁদের না খেতে পাওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসে৷ প্রতিষ্ঠানের অংশ হয়ে মানবিক সমস্যায় জেরবার জওয়ান শাস্তি পান৷ উগ্র জাতীয়তাবাদ বজায় রাখতে গিয়ে হারিয়ে যায় মানবিক বোধ৷ এমনভাবে মনে হয় দেশকে ভালবাসতে বলেননি স্বামীজি৷ মাটি এবং মানুষকে ভালবাসার সহজ পাঠ পড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছিলেন আজীবন৷ হিন্দুত্বকে আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন৷

(আজও মানুষকে আলোর পথ দেখায় স্বামীজির এই আদর্শগুলি)

কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারের ভিত্তিতে স্বামীজির গেরুয়াবসন এবং হিন্দুত্ব সম্পর্কে মনোভাব মানুষ নিজের মতো করে পাল্টে ফেলছেন৷ গেরুয়া হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক রং এবং হিন্দুত্ব শুধুই ধর্ম৷ আর তাই মনে হয় স্বামীজির ভাবনার অস্তিত্ব কেবল জন্মতিথিতেই সীমিত হয়ে পড়ছে ক্রমাগত৷ নিজেদের জীবনে এবং পথ চলায় স্বামীজির আদর্শকে গ্রহণ না করে ফেসবুকের দেওয়ালে মধ্যেই আটকে দেওয়া হচ্ছে স্বাধীন চিন্তার মুক্ত দিশাকে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ