Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bangladesh

বুদ্ধিভ্রম

যে মুজিবুর রহমান বাঙালির আত্মপরিচয় তৈরি করেছিলেন, তাঁর ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্তে মৌলবাদের মদত স্পষ্ট।

Bangladesh nowadays becomes radical
Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:February 7, 2025 4:15 pm
  • Updated:February 7, 2025 4:15 pm  

নীরদচন্দ্র চৌধুরী ‘আত্মঘাতী বাঙালি’-র কথা লিখেছিলেন। প্রতিবেশী বাংলাদেশের অবস্থা কার্যত সে-কথাই সত্যি প্রমাণ করে দিচ্ছে। এমন হিংস্রভাবে যে কেউ নিজের দেশের ইতিহাস ধ্বংস করতে পারে, তা সেখানকার ঘটনা না-দেখলে হয়তো বিশ্বাস করা যেত না। মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে হারছে বাঙালি জাতিসত্তা, জিতছে মৌলবাদ। সবচেয়ে বিস্ময়ের, নৈরাজ্যের এই ঘটনায় পাকিস্তান সেনার উল্লাস। সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যেই তারা লিখেছে, ‘বিশ্বাসঘাতকের যুগের অবসান হল, বাংলাদেশের বিপ্লবীরা গুঁড়িয়ে দিল মুজিবুর রহমানের বাড়ি, যেখানে ভারতের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান ভাঙার ছক কষা হয়েছিল। এর ফলে বাংলাদেশে মুজিবুরের কিয়দংশও অবশিষ্ট রইল না।’

পাক-বাহিনীর অত্যাচার, হাজার হাজার মা-বোনকে ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবীদের খুন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনের ইতিহাস কি তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম অস্বীকার করছে? তাহলে তো নিজেদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়। ভুলে যেতে হয় পূর্বপুরুষদের অর্জন। যে-মুজিব বাঙালির আত্মপরিচয় তৈরি করেছিলেন, তাঁর ধানমণ্ডির বাড়ি ভেঙে-গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ‘বিপ্লবী’ ছাত্র-যুবরা কী প্রমাণ করতে চাইছে? এর নেপথ্যে যে জামাত ও মৌলবাদীদের মদত রয়েছে, তা স্পষ্ট। যারা ‘মুক্তিযুদ্ধ’-র সময়েও পাকিস্তানের পদলেহন করেছে। দেশের সঙ্গে করেছে বিশ্বাসঘাতকতা।

Advertisement

হতে পারে, শেখ হাসিনা নির্বাচনে কারচুপি করেছেন, সহ-নাগরিকদের সঙ্গে তাঁর আচরণ ‘সঠিক’ ছিল না। কিন্তু তাঁকে তো ‘গণ আন্দোলন’-এর মাধ্যমে উৎখাত করা হল। সেই লক্ষ্য যদি অর্জিত হয়েই থাকে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পুনর্গঠন করতে তো কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। দেশের ছাত্র-যুব ও রাজনৈতিক শক্তি একজোট হয়ে সে কাজেই মনোযোগ দিতে পারত। কিন্তু তা না-করে পরিকল্পিত উপায়ে শেখ মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত একের পর এক স্থানে হামলা যে ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

মনে রাখতে হবে যে, ’৭১-এর যুদ্ধে পরাজয় এবং দেশ দু’-টুকরো হয়ে বাংলাদেশ গঠনের জ্বালা পাকিস্তান কখনও ভুলতে পারেনি। তাই ভারতের বিরুদ্ধে নানাভাবে তারা বাংলাদেশের জনতাকে আগেও উসকানি দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেবে। প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই। যারা এত দিন ধরে সাহিত্যে-ইতিহাসে, গল্পে-কবিতায়, সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ স্মরণ করেছে, পাক-অত্যাচারের কথা বলেছে, তারা কীভাবে এতটা বদলে গেল? যে-দেশ নিজেদের হাজার সৈনিকের রক্তের বিনিময়ে তাদের স্বাধীনতায় সাহায্য করল, তাদের প্রতি বাংলাদেশের আমজনতার এত বিদ্বেষ কেন? দীর্ঘ দিন ধরেই পরিকল্পিতভাবে এই বিষ তাদের মনে ঢোকানো হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। আর, সেই ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করল সত্যিই বাঙালি চিরকালের ‘আত্মঘাতী’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement