গ্রাহকের ঋণ সহজে মকুব না হলেও, আদানির হাজার কোটির ঋণ মকুব হয় নিমেষে। অস্তিত্ব সংকটের মুখে ক্রেতা সুরক্ষা ও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা।
ব্যাঙ্কিং ব্যবসা চালু হয়েছিল বণিকমহলের হাত ধরে, তাদের স্বার্থেই। পরে যেগুলি বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আমজনতার মধে্যও তা প্রসারিত হয়। ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের আগে ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা ব্যাঙ্কগুলি প্রায়শই লালবাতি জ্বেলে সাধারণ মানুষকে পথে বসানোর ক্ষেত্রে কার্পণ্য করত না। সাধারণ মানুষ আমানত হারিয়ে কার্যত সর্বস্বান্ত হত। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের পর তেমন ঘটনা কার্যত নেই বললেই চলে।
কিন্তু সত্যিই কি সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে রয়েছেন? ঘুরপথে আমজনতার টাকা বণিকমহলের পকেটে ঢোকার রাস্তা কি বন্ধ হয়েছে? স্পষ্ট উত্তর, না। নানাবিধ উপায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকের পকেট কাটছে। আর সেই কোটি-কোটি টাকা মুনাফার বড় একটি অংশ যাচ্ছে বৃহৎ বণিক সংস্থার তহবিলে।
‘অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর দাবি, টাকা দিতে না পারায় দেউলিয়া আদালতে থাকা ১০টি সংস্থার ৬১,৮৩২ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ মাত্র ১৫,৯৭৭ কোটিতে রফা করেছে ঋণদাতা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। অর্থাৎ, মকুব হয়েছে ৪৫,৮৫৫ কোটি টাকা। অর্থনীতির ভাষায় যেটাকে বলে ৭৪ শতাংশ ‘হেয়ারকাট’। রুগ্ণ এই সংস্থাগুলি গৌতম আদানির সংস্থা অধিগ্রহণ করেছিল। ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, আদানির সংস্থা ওই রুগ্ণ কোম্পানিগুলিকে হাতে নেওয়ার পরই ব্যাঙ্কগুলিকে চাপ দিয়ে দেউলিয়া আইনের অপব্যবহার করে ঋণ-মকুবের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসান সহ্য করতে বাধ্য করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে। কারণ, সরকার প্রধানের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর সম্পর্ক নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে।
এখানেই থাকছে প্রশ্ন। অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম টাকা না থাকায় সাধারণ গ্রাহকদের থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে, আবার আদানির হাজার হাজার কোটির ঋণ মকুব করা হচ্ছে! শুধু ‘মিনিমাম ব্যালেন্স’ নয়, আরও নানা উপায়ে গ্রাহকের উপর চাপ তৈরি করে ব্যাঙ্ক। কোনও সাধারণ গ্রাহকের ঋণ সহজে মকুব হয় না। উলটে ঋণের কিস্তি বাকি রাখলে বাড়িতে রীতিমতো বাউন্সার পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, সম্পত্তি ‘ক্রোক’ অর্থাৎ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
তাহলে আদানি বা অন্য সংস্থাদের ক্ষেত্রে ছাড় কেন? রুগ্ন সংস্থার সম্পত্তি ক্রোক করে ব্যাঙ্ক কেন অনাদায়ী ঋণ আদায় করবে না? অতীতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সেই অর্থ বিদেশে পাচার, অন্যান্য খাতে অপব্যবহারের বহু উদাহরণ রয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে ব্যাঙ্কের। এদিকে আম আদমির মেহনতের অর্থ এভাবেই উড়িয়ে, ব্যক্তিস্বার্থে খরচ হচ্ছে। এভাবে চললে আখেরে ভেঙে পড়বে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। সমূহ বিপদ সাধারণ গ্রাহকের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি কাদের স্বার্থ রক্ষা করে, এখন সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.