৬ নভেম্বর, ১৯২৪। রবীন্দ্রনাথের জাহাজ ভিড়ল বুয়েনোস আইরেস বন্দরে। তাঁর বুকে ব্যথা চলছে। হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা ভাল নয়। তখনও জানতেন না, দশ বছর ধরে তাঁর জন্য অধীর অপেক্ষারত ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। জানতেন না, কোন সৌভিক আবেগ-অনুভূতির মৌতাতে ধরা পড়তে চলেছেন অদূরভবিষ্যতে। এ-বছর রবীন্দ্রনাথ-ভিক্টোরিয়ার সাক্ষাতের শতবর্ষযাপন। লিখছেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯১৩ সাল। রাসপূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় রবীন্দ্রনাথ গরুর গাড়িতে চলেছেন কাছেই পারুলডাঙার শালবনে। শান্তিনিকেতনে তাঁর আশ্রমের কাছেই এই শালবনে আজ সন্ধ্যায় ছাত্রদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের চন্দ্রালোকিত চড়ুইভাতি। রবীন্দ্রনাথ সঙ্গে নিয়েছেন তাঁর ইংরেজ-বন্ধু রেভারেন্ড ই. জে. টমসনকে। গরুর গাড়ি পেরচ্ছে ডাকঘরের সামনের রাস্তা। রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পেয়ে ডাকঘরের এক কর্মী ছুটতে-ছুটতে এসে তাঁর হাতে দিলেন একটি তারবার্তা। রবীন্দ্রনাথ তারবার্তাটি তাঁর জোব্বার পকেটে পুরলেন। ইংরেজ-বন্ধু রেভারেন্ড টমসন বললেন, ‘ওটি এখনই পড়ুন।’ চাঁদের আলোয় রবীন্দ্রনাথ পড়লেন সেই তারবার্তা: ‘সুইডিশ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডেড ইউ নোবেল প্রাইজ লিটারেচর।’
রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ ইংরেজি গদ্যানুবাদে, যার নাম ‘সং অফারিংস’, পেয়েছে নোবেল প্রাইজ! এক ভারতীয় কবি পেলেন সাহিত্যে নোবেল! এ-খবর ভুবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল বিদু্যৎ-গতিতে। এই সংবাদে সুদূর আর্জেন্টিনায় কেঁপে উঠল এক নিঃসঙ্গ তরুণীর বুক। যে-বুকে ছুড়ি মেরেছে বিশ্বাসঘাতক ভালবাসা। যে-বুক খাঁ খাঁ করে ঝরে গিয়েছে ঈশ্বরবিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথের একটিমাত্র ছবি দেখেছেন এই তরুণী সংবাদপত্রের পাতায়। সেই থেকে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ভুলতে পারেননি ভারতের কবি রবীন্দ্রনাথকে।
প্রেমিক মার্তিনেসের সঙ্গে সহবাসের নরকে যতই বাড়ছে যন্ত্রণা, ততই রবীন্দ্রনাথের ছবিকে আঁকড়ে ধরছে ভিক্টোরিয়ার মন। চোখ বুজলেই ভিক্টোরিয়ার মনজুড়ে ছবির রবীন্দ্রনাথ। এই তো সেই অনিন্দ্যসুন্দর শিল্পী, কবি, দার্শনিক, নিরন্তর স্রষ্টা ও চিন্তক যাঁর সামীপ্যে প্রশমিত হবে দহন, জুড়োবে হৃদয়, পাওয়া যাবে আশ্রয়, মনে হয় ভিক্টোরিয়ার।
ভিক্টোরিয়ার বাড়ির কাছেই একটি বইয়ের দোকান। কবে আসবে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’? ভিক্টোরিয়া মাসের-পর-মাস অপেক্ষা করছেন। যত দীর্ঘ হচ্ছে ভিক্টোরিয়ার অপেক্ষা, ততই তীব্র হচ্ছে ভিক্টোরিয়ার রবীন্দ্রতৃষ্ণা। আর বেশি দিন নয়, এসে গেল বলে, স্প্যানিশ অনুবাদে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’, একদিন বইয়ের দোকানটার মালিক জানালেন ভিক্টোরিয়াকে। ‘তাই!’ অবাক ভিক্টোরিয়া জানতে চাইলেন, ‘স্প্যানিশে কে অনুবাদ করেছেন?’ ‘তা তো জানি না!’– বললেন দোকানের মালিক। কয়েক দিনের মধে্যই ভিক্টোরিয়ার হাতে ‘স্প্যানিশ’ গীতাঞ্জলি। উত্তেজনায় ভিক্টোরিয়ার বুকের মধে্য তোলপাড়– ‘গীতাঞ্জলি’ স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত সাহিতি্যক ও ইন্টেলেকচুয়াল অঁদ্রে জিদ। এবং উৎসর্গপত্রে লিখেছেন কবি ইয়েট্সের এই বিখ্যাত উক্তি: ‘আমাদের সাধুসন্তদের মধে্য রবীন্দ্রনাথই প্রথম যিনি জীবনকে ত্যাগ করতে চাননি।’ দোকানের সামনে ফুটপাতে দঁাড়িয়ে ভিক্টোরিয়া এবার পড়লেন অঁদ্রের নিজের উক্তি: ‘আমাদের যুগে আর কোনও চিন্তাধারা এতখানি শ্রদ্ধার যোগ্য নয়। রবীন্দ্রনাথের মহত্বের সামনে নিজেকে আনত করতে পেরে ততটা পরিতৃপ্ত আমি, যতটা নন্দিত রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরের সামনে দীন হয়ে তঁার গান গাইতে পেরে।’ এরপর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের লেখা যে-দু’টি লাইনের স্প্যানিশ অনুবাদ চোখ পড়ে ভিক্টোরিয়ার: ‘আমার মাঝে তোমার লীলা হবে/ তাই তো আমি এসেছি এই ভবে।’
রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন? বিপুল ধাক্কা লাগল ভিক্টোরিয়ার ঈশ্বরহীন মনে। ছোটবেলা থেকে ভিক্টোরিয়ার মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়েছে এই বিশ্বাস– আমরা জন্ম থেকে পাপী। আমাদের জীবন পাপের শাস্তি। ঈশ্বর নির্মম। ক্ষমাহীন তাঁর বিচার। পাপের শাস্তি আমাদের পেতেই হবে। এই ঈশ্বরকে হৃদয় থেকে উপড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন ভিক্টোরিয়া। রবীন্দ্রনাথের ভগবান, তুমি কি অন্যরকম? ‘গীতাঞ্জলি’-র পাতা যত উল্টোচ্ছেন, ততই ভিক্টোরিয়া যেন পাচ্ছেন অন্য এক ভগবানের নৈকট্য ও আহ্বান: যে ভগবান রাজার রাজা হয়েও আমাদের কাছে প্রত্যাশী ও প্রার্থী, যে ভগবান আমাদের কাছে চাইছে হৃদয়, প্রেম, প্রকাশ ও প্রণতি।
‘গীতাঞ্জলি’-র প্রত্যয় ও প্রাণন ক্রমে অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠল ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ঈশ্বরহীন মনে। ‘গীতাঞ্জলি’-র দু’টি পঙ্ক্তি তঁাকে সম্পূর্ণ আবিষ্ট করে ফেলল: ‘যদি তোমার দেখা না পাই প্রভু, এবার এ জীবনে/ যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই, শয়নে স্বপনে।’ ঈশ্বরের জন্য বেদনা? না কি এই বিরহদহন রবীন্দ্রনাথের জন্য? কোথায় তুমি রবীন্দ্রনাথ? কত সাগর অরণ্য পর্বত মরুতীর পেরিয়ে তুমি? যেন আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র! তবুও ধ্রুবতারা! কী করে পৌঁছব তোমার কাছে? কোনও দিন কি দেখা হবে?
শুধু কি ভিক্টোরিয়াই অপেক্ষা করেছেন? রবীন্দ্রনাথের কামনাও কি নয় অপেক্ষমাণ ও আগ্রহী? লিখলেন তিনি একদিন তঁার নিভৃত বাসনার প্রকাশ ঘটিয়ে: ‘কোনও রহস্যসিন্ধুর পরপারে ঘাটের উপরে তাহার বাড়ি, তাহাকেই শারদপ্রাতে মাধবীরাত্রে ক্ষণে ক্ষণে দেখিতে পাই, হৃদয়ের মাঝখানেও মাঝেমাঝে আভাস পাওয়া গিয়াছে, আকাশে কান পাতিয়া কণ্ঠস্বর কখনও বা শুনিয়াছি।’
রবীন্দ্রনাথ আমন্ত্রণ পেলেন পেরু সরকারের। পেরুর রাজধানী লিমাতে তঁাকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা, জ্ঞাপন করা হবে শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি। প্রথমে আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে পেরু। ৬৩ বছরের রবীন্দ্রনাথ আরও একবার ভেসে পড়লেন দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায়। ১৯২৪-এর ৬ নভেম্বর তঁার জাহাজ পৌঁছনোর কথা আর্জেন্টিনায়। জাহাজে ভাসতে-ভাসতে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটছে রবীন্দ্রনাথের বাসনাভুবনে। তিনি অনুভব করছেন এই যাত্রার শেষে দেখা হবে এক নতুন নারীর সঙ্গে। ১৯২৪-এর ১৮ অক্টোবর জাহাজে বসে লিখলেন সেই প্রতীক্ষা ও বাসনার কবিতা: ‘তোমার সাথে কই গো হল দেখা?’ জীবনে সেই আসন্ন নারী ফুটে উঠল রবীন্দ্রনাথের কল্পনায়। জাহাজে ভাসতে-ভাসতে রবীন্দ্রনাথ ছবি অঁাকলেন তঁার কবিতায় সেই নারীর অঁাখির ঘন তিমিরের, যেখানে অশ্রুজলের আবেশ গিয়েছে কেঁপে।
এই আনমনা অজানা নারীকেই তীব্র বাসনায় চাইছেন ৬৩ বছরের রবীন্দ্রনাথ, প্রতিশ্রুত হলেন এই নারীর কাছেই আর্জেন্টিনার সমুদ্রপথে: ‘একলা তোমার বিজন প্রাণের প্রাঙ্গণে/ প্রান্তে বসে একমনে/ এঁকে যাব আমার গানের আল্পনা,/ আন্মনা, আন্মনা॥’ এবং সাগরপারের এই আসন্ন নারীকে তঁার এক বিখ্যাত কবিতায় বললেন: ‘তাহারে জড়ায়ে ঘিরে/ ভরিয়া তুলিব ধীরে/ জীবনের কদিনের কঁাদা আর হাসা;/ ধন নয়, মান নয়, এইটুকু বাসা/ করেছিনু আশা।।’ ১৯২৪ সালের ২৮ অক্টোবর আন্দেজ জাহাজে লিসবন পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তঁার জীবনে এই আসন্ন দোসরের সঙ্গে নতুন জীবনের কথা: ‘অনেক দিনের দূরের ডাকা পূর্ণ করো কাছের খেলায়–/ তোমায় আমায় নতুন পালা হোক না এবার/ হাতে হাতে দেবার নেবার।’
৬ নভেম্বর রাত ৮টা। রবীন্দ্রনাথের জাহাজ ভিড়ল আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস বন্দরে। তঁার বুকের ব্যথা চলছে। হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা ভাল নয়। জাহাজের ডেকে বসে সেই সুদূরের মিতা, বিদেশিনীর উদ্দেশে লিখলেন রবীন্দ্রনাথ আর্জেন্টিনার মাটিতে পা রাখার আগে: ‘হয়তো বলিছ মনে, সে নাহি আসিবে আর কভু, /তারি লাগি তবু/ মোর বাতায়নতলে আজ রাত্রে জ্বালিলাম আলো।’ কবিতার তলায় লিখলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘অ্যান্ডেস জাহাজ, ৬ নভেম্বর, ১৯২৪।’
অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ উঠলেন বুয়েনোস আইরেসের প্লাজা হোটেলে। শুরু হল তঁার চিকিৎসা। খবর পেলেন দশ বছর ধরে রবীন্দ্রনাথের জন্য আগ্রহী অপেক্ষায় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। ছুটে এলেন প্লাজা হোটেলে। তারপর বিদু্যগতিতে ঘটালেন নাটকীয় ঘটনা। নিজের হীরের নেকলেস বিক্রি করে তিন মাসের জন্য প্লাতা নদীর ধারে ভাড়া করলেন ‘মিরালরিও’ নামের একটি বাগানবাড়ি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাড়িতে নিজের হাতে সেবাযত্নের জন্য। রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসা থেকে আনন্দ, যাপনের সবরকম সুখ থেকে মনের আরাম, সৃজনের নিভৃতি থেকে সংলাপ ও সান্নিধে্যর অঁাচ, সব দায়িত্ব ভিক্টোরিয়ার।
ভিক্টোরিয়ার এই উজাড় করে দেওয়ায় ভেসে যেতে-যেতে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তঁাদের মিলন রাতে ‘প্রেয়সীর নিঃশ্বাসের হাওয়া’-র কথাও! এবং বিদেশিনী নতুন প্রেয়সীর নাম রাখলেন তিনি ‘বিজয়া’– কেননা এই নতুন নারী এসেছেন তঁার প্রান্ত জীবনে, বিসর্জনের বেলায়। তারপর একদিন তঁার বিজয়াকে বললেন, ‘বিজয়া আমার বাজার দর হঠাৎ গিয়েছে বেড়ে। আর আবৃত হয়েছে আমার ব্যক্তিগত মূল্য। আজ আমার মনে হচ্ছে বিজয়া তুমিই একমাত্র নারী যে শেষ পর্যন্ত আমাকে বুঝতে পারল, ভালবাসতে পারল আমার মধে্য আসল আমিটাকে। তোমার প্রেমের মধে্য আমি ফিরে পেলাম আমার ব্যক্তিগত মূল্য। তুমি জান না বিজয়া তার মূলে্যর পরিমাণ।’
যুবতী বিজয়াকে ৬৩ বছরের রবীন্দ্রনাথ একদিন বললেন, ‘তোমার কানন তলে ফাল্গুন আসিবে বারংবার/ তাহারি একটি শুধু মাগি আমি দুয়ারে তোমার।’ সেই যাচনার ফুল ও ফল বিজয়া দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সবে ভোর হয়েছে। বিজয়া এলেন রবীন্দ্রনাথের ঘরে। রবীন্দ্রনাথ লেখার টেবিলে। একমনে লিখছেন। রবীন্দ্রনাথের আঙুলগুলোর উপর চোখ পড়ল বিজয়ার। কী স্পর্শময়, বাঙ্ময় আঙুল! বিজয়ার মনে হল, তঁার নিজের শরীর যেন তপোবন। আর রবীন্দ্রনাথ অরণে্যর ঋষি।
বিজয়া ঝুঁকে পড়ে দেখেন রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা। রবীন্দ্রনাথ হাত রাখেন খুব ধীরে তঁার একটি স্তনের উপর। বিজয়ার মনে হয়, যেন এক ঋষি ভোরের আলোয় একটি ফলের গায়ে হাত রেখেছেন, এমন কোমল সেই স্পর্শ। এ-স্পর্শে যেন উচ্চারিত হল প্রাচীন ভারতের গূঢ়মন্ত্র। সর্ব দহনের ঘটল প্রশমন। কেন আরও কিছুক্ষণ রবীন্দ্রনাথের স্পর্শটি থাকল না তঁার বুকে? স্বর্গ এমন ক্ষণস্থায়ী কেন? বিজয়ার সমস্ত মন চাইল রবীন্দ্রনাথের ওষ্ঠ। একটি ঘন চুম্বনের ইচ্ছা ফুটে উঠল বিজয়ার ঠেঁাটে। বুজে এল তঁার চোখ।
১০০ বছর আগে দুই বিশ্ববিখ্যাত নর-নারীর জীবনে, বিপুল ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যবধান পেরিয়ে, ঘটেছিল এই আদানপ্রদান, সম্পর্ক, মিলন, বিচ্ছেদ ও বেদনা। তঁারা খুব কাছে এসেও, দূরে সরে যেতে, বাধ্য হয়েছিলেন। পেরতে পারেননি নিয়তি-নির্ধারিত বাধা।
এই প্রেম ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর থেকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে। লিখছেন কেতকী কুশারী ডাইসন তঁার ‘ইন ইয়োর ব্লসোমিং ফ্লাওয়ার-গার্ডেন’ বইয়ে রবীন্দ্রনাথের সেই যন্ত্রণার কথা: ‘It must have been Tagore, Who, in the end, suffered much more than Ocampo from the difficulties that were inherent in the situation between them. It was he who was more vulnerable.’ কেন বিচ্ছেদ-যন্ত্রণার সহজতর শিকার হলেন ৬৩ বছরের রবীন্দ্রনাথ ৩৪ বছরের ভিক্টোরিয়ার থেকে? তিনটি কারণ দেখিয়েছেন কেতকী কুশারী ডাইসন: ‘মনে রাখতে হবে তঁার একচল্লিশ বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথ মৃতদার। দ্বিতীয় কারণ, তঁার পঁাচ সন্তানের মধে্য তিনি তিনজনকে হারিয়েছেন। তৃতীয় কারণ, রাণু নামের যে কিশোরীর সঙ্গে সাত-আট বছর ধরে যে-সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা-ও ভেঙে গেছে ১৯২৪-এই।’ এরপর কেতকী লিখেছেন এই সাহসী বাক্যটি: ‘There was no opportunity to court a woman with whom a joint life could have been carved out again.’
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন ৬৩ বছর বয়সেও দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তঁার জীবনে ‘দ্য নিড ফর আ উওম্যান স্টেড অন’– লিখেছেন কেতকী। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন, ভিক্টোরিয়া শান্তিনিকেতনে আসুক, তঁার সঙ্গে শেষ জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলেন কবি। ভিক্টোরিয়া কোনও দিনই
ভারতে আসেননি। যদিও ইউরোপে গিয়েছেন বারবার। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়ার কথা ক্রমাগত ভেবেছেন–‘উইথ হোপলেস নস্টালজিয়া’। রবীন্দ্রনাথের বয়সটা যদি আরও দশ বছর কম হত, তাহলে হয়তো রবীন্দ্রনাথ-ভিক্টোরিয়ার গল্পের শেষটা হত অন্যরকম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.