Advertisement
Advertisement
Speedy Delivery

‘রেটিং’ ও ‘ইনসেনটিভ’-এর নেশা, গতিযুদ্ধে বিপদ বাড়ল ডেলিভারি এজেন্টের?

ঘরে-ঘরে ডেলিভারি বাণিজ্যের প্রতিশ্রুত স্পিড।

Editorial on Road Safety and Speedy Delivery
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:November 6, 2024 6:48 pm
  • Updated:November 6, 2024 6:48 pm  

‘রেটিং’ ও ‘ইনসেনটিভ’-এর নেশা ডেলিভারি এজেন্টদের বাইকের গতি বাড়িয়ে তাদের পরিবার-ভবিষ‌্যতের ভাবনা থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। 

আমাদের যাপিত জীবন ও আধুনিক যাপনের দ্রুতি, এদের অঙ্গাঙ্গি সহবাসের বুনন এমনই ঘনবদ্ধ যে, আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। আধুনিক জীবন এবং গতির মিশ্রণ প্রায় অনিবার্য বললেও অতিশয়োক্তি হবে না। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে-সঙ্গে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আমাদের জীবনের গতি, কমছে শ্লথতার পরিসর। গতিময় জীবনে এসেছে অনেক সুবিধা, নিশ্চয়তা, সহজলভ‌্যতা এবং সাংসারিক আরাম, সামাজিক বিস্তার। কিন্তু সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন বিপদ, সংকট, ব‌্যাধি।

Advertisement

সাম্প্রতিক যে-‘ব‌্যাধি’র সংক্রাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে প্রাত‌্যহিক জীবনযাত্রায়, তা হল ঘরে-ঘরে ডেলিভারি বাণিজ্যের প্রতিশ্রুত স্পিড। বিশেষ করে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় অবিশ্বাস‌্য গতির প্রতিযোগিতা। অর্ডারের আধঘণ্টা, বা বিশ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিতে না-পারলে পয়সা ফেরত– এমন ‘ক‌্যাচি’ বিজ্ঞাপনও দেখা যায়। শুধু খাবার কেন, দৈনন্দিন ব‌্যবহার্য জিনিসও অবিশ্বাস‌্য দ্রুততায় বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে বাইক আরোহী ডেলিভারি এজেন্টরা। জীবন-বিপন্ন-করা এমন গতি প্রতিদিন দেখছি রাস্তায়-রাস্তায়, খবরের কাগজে পড়ছি এমন জীবন ঝুঁকি-নেওয়া গতির পরিণাম। ভাল ‘রেটিং’ এবং ‘ইনসেনটিভ’ পাওয়ার জন‌্য ডেলিভারি বয়দের জীবন আচ্ছন্ন করে ফেলেছে গতির দাপট ও নেশা। পালানোর পথ নেই।

এসব ক্ষেত্রে বাইক বিপর্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে– বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহকারী কয়েকটি সংস্থাকে এই মর্মে পত্র পাঠানো হবে যাতে নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি করতে না-পারলেও যেন কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ’ কাটা না-হয় এবং তাদের কর্মজীবনের উপর যেন এই ‘না-পারা’র প্রভাব না পড়ে। শহরের রাস্তায় কখনওই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রুদ্ধশ্বাস গতিতে বাইক চালানো উচিত নয়।

ডেলিভারি এজেন্টদের চাকরির শর্ত হিসাবে এই চাপ মেনে নিতে বাধ‌্য করাও অনুচিত। সমস‌্যা হল, ঠিক সময়, এতটুকু দেরি না-করে, প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিতে পারার জন‌্য যে অতিরিক্ত মূল‌্য নেওয়া হচ্ছে ক্রেতার থেকে, তার কী হবে? সেই শর্তটি যে এই ‘ডেলিভারি’ কাজটির সঙ্গে সূক্ষ্ম বা বিজ্ঞাপিত বুননে জড়িয়ে!

এমন অবিশ্বাস‌্য দ্রুতির সংস্কৃতিকে মিলান কুন্দেরা তাঁর ‘স্লোনেস’ উপন‌্যাসে এক অতি আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। লিখেছেন, ‘দেয়ার ইজ আ সিক্রেট বন্ড বিটুইন স্লোনেস অ‌্যান্ড মেমোরি, বিটুইন স্পিড অ‌্যান্ড ফরগেটিং।’ একটা মানুষকে বাইকে চাপিয়ে দাও। বাড়তে থাকুক তার গতি। গতি মুহূর্তে সেই পর্যায়ে পৌঁছবে যখন সেই গতির সঙ্গে তার শরীরের আর কোনও সম্পর্ক নেই। সেই গতি তখন মেশিনের। সেই গতি তাকে ভুলিয়ে দেয় তার শরীর, ভাল-মন্দ, তাকে বিচ্ছিন্ন করে সংসার, সন্তান এবং এমনকী ভবিষ‌্যৎ থেকেও। বিশুদ্ধ গতি তার সবটা গিলে ফেলে। সে ভুলে যায়, একটি গতিশূন্য বাগানে সে পায়ে-পায়ে মন্থরভাবে কখনও হাঁটত। এমন গতি কখনও কোনওভাবে মাঙ্গলিক হতে পারে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement