বাড়ল আবার গ্যাসের দাম। সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তর জীবন ওষ্ঠাগত। সাধারণ মানুষের জীবন কি শুধুই পিষবে?
রান্নার গ্যাস আর মধ্যবিত্তর জীবন– সম্পর্কটা ঠিক যেন ব্যস্তানুপাতিক। একটি বাড়লে অবধারিতভাবে আরেকটির মান পড়ে। অথচ তাদের উপস্থিতি জীবনে অপরিহার্য। গ্যাস বিনে গতি নেই। সেই গ্যাসের দামেই এবার মধ্যবিত্তর হেঁশেলে আগুন। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ধাক্কায় শেয়ার বাজার বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে, ক্রমাগত বাড়ছে নানান আশঙ্কা। তারই মাঝে এল রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবর। সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা করে দাম বৃদ্ধির কথা সোমবার মধ্যরাতে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় থাকা ক্রেতাদেরও গুনতে হবে অতিরিক্ত দাম।
পেট্রোল, ডিজেলের ওপর আবগারি শুল্কের বোঝা বেড়ে যাওয়ার পরই রান্নার গ্যাসের দাম একলাফে বেড়ে গেল। কলকাতায় রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৮২৯ টাকা। ৫০ টাকা বৃদ্ধির ফলে এখন সেই গ্যাসের দাম বেড়ে দাঁড়াল ৮৭৯ টাকা। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী জানাচ্ছেন মধ্যবিত্তকে বিপদে ফেলা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তেল সংস্থাগুলির ক্ষতি কমাতেই এই উদ্যোগ। গ্যাসের দামে ভরতুকি দেওয়ার কারণে নাকি তেল সংস্থাগুলির ৪৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সব কোপ কেন পড়ে মধ্যবিত্তর মাথায়? প্রথমে ওষুধের দাম, এখন গ্যাস। মধ্যবিত্তর জীবনে দুটোই বেসিক ‘নিড’।
সেই নিত্যপ্রয়োজনীয়র দাম বাড়ানোর কি খুব প্রয়োজন ছিল? জীবনের সর্বক্ষেত্রে শুধু মধ্যবিত্তই পিষছে। মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে চাকরি-হারানোর যন্ত্রণা– ভুগছে জনসাধারণ। মধ্য বা নিম্ন– তাদের সেই বিত্ত কোথায় যে, অতিরিক্ত ৫০ টাকার সঙ্গেও সমঝোতা করে নেবে! এমনিই ভাল স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে মাথার ঘাম পায়ে পড়ে। তার মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি মরার উপর খাঁড়ার ঘা। লোন আর ইএমআই-নির্ভর জীবনে পড়ে থাকে বেতনের ভগ্নাংশ।
আর তাই চাপ সামলাতে না পারলে কখনওসখনও শেষ সময়ের সঙ্গী হয় মেট্রোর থার্ড লাইন। অন্নপূর্ণাকে ঈশ্বরী পাটনী বলেছিলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ সেই দুধ-ভাতটুকুও ফোটাতে গেলে গ্যাসের প্রয়োজন। ইন্ডাকশনের বিলাসিতা কি গরিব মানুষ করতে পারে? না কি ফিরে যাওয়া সম্ভব আর উনুনের যুগে? ভোটের আগে দাম কমিয়ে কতবার আর মানুষকে বোকা বানানো যাবে? ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড় সবই আইওয়াশ। কেন্দ্রের হাতে আছে ব্রহ্মাস্ত্র।
যখন-তখন যেমন খুশি সেটা চালিয়ে দিতে পারে। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে ফোটাতে পারে উন্নয়নের বুলি। মধ্যবিত্তকে ফাঁদে ফেলার হাজারো বন্দোবস্ত তার জানা আছে। চরম গরমে সূর্যের প্রখর তাপ যেমন শুষে নেয় মানুষের জীবনীশক্তি, তেমন মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম সম্বলটুকুও শুষে নিতে চাইছে কি তারা? জনতা-সরকারের ভাতে না মেরে পাতে মারার এ কেমন মোক্ষম চাল?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.