Advertisement
Advertisement
Rabindranath Tagore

রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রথম এবং শেষ ভাস্কর্য ‘দ্য হার্ট’! নিলামে বিক্রি হল সেই হৃদয়-খণ্ড

এই পাথরের হৃদয় থেকে হয়তো এখনও বিন্দু-বিন্দু ঝরে রক্ত!

‘Heart of stone’ carved out: Rabindranath Tagore's only attempt at sculpture
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 4, 2025 2:28 pm
  • Updated:July 4, 2025 2:28 pm  

এক কাদম্বরী-কাতর দিনে কবিগুরু কারোয়ার সমুদ্রতীরে পেলেন এমন এক শিলাখণ্ড যার মধ্যে তিনি দেখলেন তাঁর বিক্ষত হৃদয়ের অবিকল অবয়ব। সেই পাথর কেটে তৈরি করলেন জীবনের প্রথম এবং শেষ ভাস্কর্য! ‘দ‌্য হার্ট’। সম্প্রতি নিলামে বিক্রি হয়ে গেল হৃদয়-খণ্ড। লিখছেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ নিজের ছবি এঁকেছেন বারবার। আর লিখেছেন, ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইল না কেহ।’ তিনি কি নিজের হৃদয়ের ছবি এঁকেছেন কি কখনও? সম্প্রতি জানা গেল, ১৮৮৩ সালে ২২ বছরের রবীন্দ্রনাথ পাথর খোদাই করে তৈরি করেছিলেন নিজের হৃদয়। ভাস্কর্যটির নাম, ‘দ্য হার্ট’। এই হৃদয় িতনি উৎসর্গ করেছিলেন তঁার ২৪ বছরের নতুন বউঠান, নতুন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী, কাদম্বরীদেবীকে। এই ঘটনার এক বছরের মধ্যে কাদম্বরীদেবী আত্মহত্যা করেন। সম্প্রতি কলকাতায়, ‘আস্তাগুরুস কালেক্টর্‌স চয়েস’ নিলাম সংস্থার আয়োজনে রবীন্দ্রনাথের পাথরের হৃদয় বিক্রি হল ১ কোটি ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ২১০ টাকায়। পাথর কেটে তৈরি এই হৃদয়ের উপর রবীন্দ্রনাথ বাংলায় লিখেছেন, ‘পাথর কেটে বের করে এনেছি যে হৃদয় তাতে নিজের হাতে লিখে গেলাম, চোখের জল কি কখনও মুছে দেবে এই লেখা?’

রবীন্দ্রনাথের এই হৃদয়-ভাস্কর্যের কথা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪১ সালে ‘দ‌্য ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট’-এ। এবং ভাস্কর্যের একটি ছবিও িছল সেই খবরের সঙ্গে। খবরে লেখা ছিল, “a piece of quartzite stone cut in the form of a heart by the poet’s own hands”. রবীন্দ্রনাথ সরাসরি কাদম্বরীদেবীর হাতে দেননি এই ভাস্কর্য। দিয়েছিলেন তঁার নতুনদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বন্ধু অশোকচন্দ্র চৌধুরীর হাতে। খোদাই করা পাথরের এই হৃদয় উঠে এসেছিল কাদম্বরীর প্রতি তঁার তীব্র সোহাগ এবং ব্যর্থ প্রেমের দহন থেকে।

১৮৮৩ থেকে ১৮৮৪– রবীন্দ্রনাথের প্রেমজীবন ও হৃদয়ের এক রক্তাক্ত সময়। অশোকচন্দ্র নিজেও একজন কবি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তঁার নতুন বউঠান কাদম্বরীর নিবিড় সম্পর্কের কথা নিশ্চয়ই জানতেন। অশোকচন্দ্র খুব যত্নে রক্ষা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে পাথরকাটা এই হৃদয়। অশোকচন্দ্রের মৃত্যুর পরে এটি আসে তঁার কন্যা দেবযানীর হাতে। দেবযানীর সঙ্গে শিল্পী অতুল বোসের বিয়ে হয়। এবং তঁাদের কাছে বহু যত্নে রক্ষিত হয় রবীন্দ্রনাথের এই ‘হৃদয়’। ২০২৪ সালে একটি প্রদর্শনীর অঙ্গ হয়ে ‘হৃদয়’ সাধারণের দৃষ্টির সামনে আসে প্রথমবার। তারপর সেই হৃদয় বিকিয়ে গেল নিলামে। এই হৃদয়-ভাস্কর্য কিন্তু ২২ বছরের রবীন্দ্রনাথ তৈরি করেননি তঁার জোড়াসঁাকোর বাড়িতে। কেননা জোড়াসঁাকোর বাড়ির পরিবেশ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে তঁার জন্য বউদি কাদম্বরীর সঙ্গে তঁার সম্পর্কের সূত্র ধরে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর চেষ্টা করছেন যত তাড়াতাড়ি কবির বিয়ে দিয়ে তাকে এই হৃদয়সমস্যা থেকে উদ্ধার করার।

কিন্তু অতই কি সহজ? রবীন্দ্রনাথ জোড়াসঁাকোর প্রাত্যহিক জ্বলন থেকে অন্তত কিছু দিনের জন্যে দূরে সরে গেলেন। আইসিএস মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মেজ বউদিদি জ্ঞানদানন্দিনী তখন কর্নাটকের কারোয়ারে। সেখানে গিয়েও কাদম্বরী-তাড়না থেকে বঁাচতে পারলেন না রবীন্দ্রনাথ। তঁার হৃদয় রক্তাক্ত হতে লাগল। এমনই এক কাদম্বরী-কাতর দিনে তিনি কারোয়ার সমুদ্রতীরে পেলেন এমন এক শিলাখণ্ড যার মধ্যে তিনি দেখলেন তঁার বিক্ষত হৃদয়ের অবিকল অবয়ব। এবং সেই পাথর কেটেই তিনি তৈরি করলেন তঁার জীবনের প্রথম এবং শেষ ভাস্কর্য! ‘দ‌্য হার্ট’।

সেই ভাস্কর্যের প্রথম দর্শক রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা সত্যেন্দ্র এবং মেজো বউদি জ্ঞানদানন্দিনী। তঁারা যেন বুঝেও বোঝেননি রবির হৃদয়বেদনা, বজায় রাখলেন এমন রক্ষণশীল ভান। কিছুদিনের মধ্যেই জ্ঞানদানন্দিনীর কাছে চিঠি এল দেবেন্দ্রনাথের, যত তাড়াতাড়ি পারো রবির বিয়ের ব‌্যবস্থা করো। ১৮৮৩-তেই বিয়ে হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের। তঁার বিয়ের আড়াই মাসের মধ্যে কাদম্বরীর আত্মহত্যা। এই পাথরের হৃদয় থেকে হয়তো এখনও বিন্দু-বিন্দু ঝরে রক্ত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement