ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূল বলছে, “বাঘে অযথা ভয় পাবেন না। সে কিচ্ছু করতে পারবে না!” বনদপ্তর বলছে, “কোনও বাঘ-টাঘ নেই। গুজবে কান দেবেন না!” দলমার হাতি দাপানো শাল-পিয়ালের জঙ্গলে আচমকা বাঘের হানায় থরহরিকম্পিত সবাই। মানুষের মন থেকে ভয় তাড়াতে তাই প্রচার শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলের গ্রামে গ্রামে।
রাজ্যে জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই জেলায় জেলায় প্রচারে নেমে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলি। যেসময় লাল মাটির জঙ্গলমহলে মাত্রাছাড়া গরম। এমনকী, শাল-পলাশের শুষ্ক জঙ্গলের গভীরেও তাপ নেহাত কম নয়। কারও কারও আশঙ্কা, সে সময় জঙ্গলের খাদ্য বা জলে টান পড়লে বাঘের নজর গ্রামের দিকে পড়বে।
[অশান্তি বরদাস্ত নয়, হনুমান জয়ন্তী নিয়ে আগেভাগেই সতর্ক প্রশাসন]
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এ হেন উপদ্রবে মাথায় হাত সবার! কাঠফাটা গরম ও বাঘের আতঙ্ক, দুইয়ে মিলে এখন থেকেই ঘরবন্দি থাকার গান গাওয়া শুরু করেছে জঙ্গলমহলের তিন জেলার মানুষ। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, অবস্থা এমন হলে প্রচারে লোকই পাওয়া যাবে না। ঠেলাঠেলি করে লোক জোগাড় হলেও নির্বাচনের দিন ভোটারদের বুথমুখো করা যাবে তো? প্রশ্ন অনেকেরই।
তাহলে উপায়? পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাঘ নিয়ে নজরদারি চালিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু শুরুতেই ‘বাঘাতঙ্ক’-এ গলা শুকিয়ে গিয়েছে জঙ্গলমহলের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাইক ভাড়া করে প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় দিন-রাত প্রচার চলছে, “বাঘে অযথা ভয় পাবেন না।”
বাঘের সন্ধানে কলকাতা থেকে লালগড় যাওয়া লালবাজারের ড্রোন বিশেষজ্ঞ দলটি ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, জঙ্গলে বাঘ রয়েছে একটিই মাত্র। বাঘ দিনে কম করে ৮০ কিলোমিটার হাঁটতে পারে। তাই জঙ্গলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে একদিনে পৌঁছে যাওয়া তার কাছে অস্বাভাবিক কিছু না। জঙ্গলে তার উপাদেয় খাবারও মজুত। গরু, ছাগল, বুনো শুয়োরের অভাব নেই। মাঝেমধ্যে সেসবের ছাল-চামড়াও মিলছে। কিন্তু তারপরও মিলছে বাঘের পায়ের ছাপ। তা আবার বাড়িরই দোরগোড়ায়!
কিন্তু গরম বাড়লে বাঘ কি এ জঙ্গলেই থাকবে? রাজ্য বন্যপ্রাণ পর্ষদের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু জানাচ্ছেন, “বাঘ অত্যন্ত সহনশীল প্রাণী। গরম বাড়লে সে জঙ্গল ছেড়ে যে অন্যত্র পালিয়ে যাবে তেমনটা না-ও হতে পারে। এক যদি তার জল ও খাবারে না টান পড়ে।” এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গ্রামবাসীরা। এক বাঘ বিশেষজ্ঞের মতে, খাবারে টান পড়লে সে গ্রামের দিকে হানা দিতে পারে। তেমন হলে যদিও সময় হিসাবে দুপুর রোদ এড়িয়ে রাতকেই সে বেছে নেবে।
[সাংবাদিকদের জন্য সরকারি পেনশন প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি জারি, কারা পাবেন?]
সবটা শুনে আঁতকে উঠেছেন বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন। তাঁর কথায়, “এমন হলে তো সমূহ বিপদ।” পরিস্থিতি বিচার করেই দ্রুত বাঘ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে বলে খবর। এসব আতঙ্ককে থোড়াই কেয়ার পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর সহাস্য মন্তব্য, “জঙ্গলভর্তি বাঘ তো আর নয়। মোটে একটা। ও কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমরা মানুষকে বলছি যাতে ভয় না পান।”
কিন্তু বাঘের ভয় বলে কথা! মন্ত্রীর আশ্বাস, “ভোটের আগেই বাঘ ধরা পড়ে যাবে। আর একান্তই যদি ধরা না পড়ে, তবে পুলিশ দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। দরকারে জঙ্গল ঘিরে দেওয়া হবে।”- বাঘবন্দির এমনই উপায় বাতলেছেন মন্ত্রী। সঙ্গে তাঁর টিপ্পনি, “বাঘ সাধারণত লুকিয়েই থাকে। বেরলে রাতে বেরয়। সে তো আর দিনে বেরবে না। এক যদি না ভোট দিতে আসে!”
[উত্তরবঙ্গ জুড়ে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, দেখুন শিলাবৃষ্টির ভিডিও]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.