Advertisement
Advertisement
Moushumi Chatterjee

‘এখন ভালো ছবি তৈরি হয় কম, ক্রিয়েটিভিটিও কমেছে, যে লক্ষণটা ভালো নয়’, আক্ষেপ মৌসুমীর

একযুগ পর বাংলা ছবিতে ফিরে কেমন অনুভূতি? জানালেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়।

Actress Moushumi Chatterjee on Aarii, personal life
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 25, 2025 1:27 pm
  • Updated:April 25, 2025 5:02 pm  

একযুগ পর বাংলা ছবিতে। কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে আসার প্রাক্কালে মুম্বই থেকে ফোনে ধরা দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। চিরচেনা হাসিখুশি মেজাজে তাঁকে পাওয়া গেল। যশ-নুসরতকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। বললেন, ‘নুসরতকে কী সুন্দর দেখতে। ওঁর নাম দিয়েছি প্যাকাটি সুন্দরী।’ ব্যাক্তিগতজীবন, ‘আড়ি’ রিলিজ থেকে বাংলা সিনেমায় শর্মিলা ঠাকুর, রাখী গুলজারের প্রত্যাবর্তন, সবকিছু নিয়ে দিলখোলা আড্ডায় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Moushumi Chatterjee)। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।

প্রায় ১২ বছর বাদে বাংলা ছবিতে ফিরলেন। তাই তো?
– ফিরলাম মানে, আমি তো এখানে-ওখানে দু’জায়গাতেই আছি, আর্টিস্ট আবার কোথায় যাবে? তবে হ্যাঁ, প্রায় অনেক বছর পরে তো বটেই।

Advertisement

কেমন লাগছে? ‘আড়ি’ তো ২৫ এপ্রিল মুক্তি (আজ)।
– ভালো লাগছে খুব। আবার ভয়ও লাগছে একটু। কারণ, ঝগড়া করা, রান্না করা, খাওয়া-শোওয়া ছাড়া, আমি তো অভিনয়টাই জানি।

এতদিন বাদে একটা বাংলা ছবির জন‌্য রাজি হলেন কীভাবে?
– ২০২৪ সালেই প্রথম কথা হয়। এটার গল্পটা আমাকে আকর্ষণ করেছিল। যে ভদ্রমহিলার চরিত্রে আমি করেছি, তার সঙ্গে আমার অনেকটা মেলে। আমার মধ্যে যেমন একটা স্বাভাবিক কমেডি আছে, যেটা ভানুকাকু বলতেন আমাকে, ‘তুই হচ্ছিস, আসল আর্টিস্ট, যে একইসঙ্গে হাসাতে পারে, কাঁদাতেও পারে।’ যেটা আমার কাছে পুরস্কার প্রাপ্তি। এই চরিত্রের কিছু কিছু জায়গা খুবই আমার স্বভাবের মতো। সেটা শুনে আমার খুব ভালো লেগেছিল। আর এই স্টেজে এতটা ফুটেজ এবং আবেগ ব‌্যক্ত করার জায়গা তো কম লেখক রাখেন। মানে আমার মতো সিনিয়র আর্টিস্টের জন‌্য এতটা পরিসর এখন কম চিত্রনাট্যে পাওয়া যায়।

প্রস্তাব নিয়ে কি পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী এসেছিলেন, না নুসরত-যশ?
– জিৎ-ই প্রথমে এসেছিল। আগে আমি নুসরতকে সেভাবে চিনতাম না। ফোন করেছিল জিৎ প্রথমে। আমার মেয়ে মেঘা বলল, ‘মা ওদের একটা অ‌্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছি, অনেকদিন ধরে ওরা ফোন করছে।’ আমি বললাম, ‘ধুর বাবা, এখন কে যাবে গল্প শুনতে!’ মেঘা জোর করল যে, ‘তুমি একবার শুনে নাও, ওরা এতদূর থেকে আসতে চাইছে, না করলে বলে দেবে।’ এ ভাবেই মেঘা সময় দিয়ে দেয় ওদের। জিতের অ‌্যাটিটিউডটা খুব ভালো লেগেছিল আমার। ও এসে একদম মাটিতে বসে পড়েছিল। বলল, দিদি, আপনি যদি এটা না করেন, তা হলে আমি বানাব না।’ আমি বললাম, ‘ছোট করে শোনাও’। জিৎ খুব স্মার্ট, ঠিক পুরোটা শুনিয়ে দিল। আমার খুব ভালো লাগল। ভেবে দেখলাম, কলকাতায় তো অনেক বছর যাই না, একটা কাজ নিলে হয়তো পায়েলকে (বড় মেয়ে) কম মিস করব।

ছবিতে মা-ছেলের সম্পর্কের বড় জায়গা। যশের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগল?
– প্রত্যেকের জীবনেই তাই। মানুষগুলো থাকাকালীন আমরা বুঝতে পারি না। চোদ্দো আনা তো উপভোগ করেইছি। কারণ, মেঘা খুব ভালোভাবে যশকে তৈরি করে দিয়েছিল। বলেছিল যে, ‘মাকে এই কলকাতায় রেখে গেলাম, আমার পরে তুমি ওঁর দেখভাল বা যত্নআত্তি করবে।’ এবং সত্যি যশ-নুসরত আমার দারুণ টেক কেয়ার করেছে। স্পটবয়, মেকআপ ম‌্যান অভিজিৎ, ক‌্যামেরা ম‌্যান চিন্টু থেকে শুরু করে সকলে খুব যত্ন করেছে। আমি এত স্পেশাল ফিল করেছি কী বলব! আমি যে বলতাম, কলকাতা আমার বাপের বাড়ি আর বম্বে হচ্ছে শ্বশুরবাড়ি, এটা ওরা প্রমাণ করে ছেড়েছে।

এতদিন বাদে যে কলকাতায় শুটিং করে গেলেন তখন কী বুঝলেন, কতটা টান এখনও বেঁচে?
– এটা তো একটা দায়িত্ব নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই সময় আমার শরীরটা ঠিক ছিল না। মাইল্ড স্ট্রোক হয়ে গিয়েছিল। তখন কাউকে বলিনি। মেঘা আমাকে খুব যত্নে রেখেছিল। আর এখানেও এরা খুব যত্ন নেয়। ষোলোআনা টান এখনও কলকাতার প্রতি। প্রিমিয়ারে থাকব। (হাসি)

মুম্বইয়ে দিন কেমন কাটে?
– এত বাজে গরম, বিশ্বাস করতে পারবে না! আর বম্বেতে আমার খুব টেনশন। কেন জানো? আমার বর তো এখনও পায়েলের শোক কাটাতে পারেনি। কিছুতেই মেনে নিতে পারে না আজও। ওই জন‌্য আমার কলকাতায় আসা খুব মুশকিল। চেয়েছিলাম, ছবি রিলিজের এক সপ্তাহ আগেই চলে আসি। কিন্তু বরকে ছেড়ে যাওয়া মুশকিল, ও খালি আমাকেই মানে। বুড়ো বয়সে যেমন, দিলীপকুমারকে দেখেছি খালি সায়রা বানুর দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, সেইরকম (হাসি)। ওকে নড়াতে আমার সময় লাগে। কত বলি, যাও একটু কার্টার রোডে ঘুরে এসো, যাও একটু মন্দিরে গিয়ে বসো, চলো একটু রামকৃষ্ণ মিশনে আমার সঙ্গে ভাল্লাগবে, নয়তো ও চুপ করে এক জায়গায় বসে থাকবে। আমি থাকলে তাও একটু নড়ে বসে। আমার ভয়ে করে, না আমাকে ভালোবেসে করে, সেটা আমি বুঝি না। তবে এমন চেঁচাই আমি, বলি জঙ্গলে রেখে আসব তোমাকে নয়তো (জোরে হাসি)। আমি নিজে ওই জন‌্য কোনওদিন ব্রেক ডাউন করতেই পারিনি। এই ছবিতেও আমার চরিত্র তেমনই। শি হ‌্যাজ টু বি লিটল লাউডার দ‌্যান নরমাল পার্সন। ট্রেলার দেখে আমি নিজেও কেঁদে ফেলেছি।

এই একই সময়ে আপনি, শর্মিলা ঠাকুর এবং রাখী গুলজার-এর মতো বর্ষীয়ান শিল্পীদের আবার বাংলা ছবিতে পাওয়া গেল।
– আমার মনে হয় ত্র‌্যহস্পর্শ! অন্তত এঁদের দেখতে মানুষ হল-এ আসুক। ওই অক্ষয় তৃতীয়ার মতো (হাসি)। ভয়ও সেই কারণেই লোকে কীভাবে গ্রহণ করবে। নুসরত খুব ভালো প্রযোজক। আমি তো চাইব প্রযোজকেরও লাভ হোক, আমার অভিনয়ই তো সব কিছু না। যশ তো খুব ভালো কাজ করেছে। রাখীদির ছবি কবে আসছে ঠিক জানি না। শর্মিলার ছবি যদি ভালো ব‌্যবসা করে খুব খুশি হব। আমি তো আশা করে আছি, ছবি যাই হোক, মানুষ তো এদের দেখতে যাবে। যারা আমাদের ভালোবাসত, তারা অর্ধেকের বেশি তো পটল তুলেছে। এখনকার প্রজন্ম তো অতো জানে না। ওরা ইতিহাস না জেনেই লেখে। এমনকী, অনেক সাংবাদিকও তাই করে, তাড়াহুড়ো করে।

আপনাকে এখনও সেই ‘বালিকা বধূ’ হিসেবেই বাংলার মানুষ মনে রেখে দিয়েছে।
– এটাও আমি জানি। গলার স্বর শুনে লোকে বুঝে যায়, আরে! এ তো মৌসুমীর গলা। আমি ভাবি ওহ, মাই গড! সেই কবে শুনেছে, এখনও মনের ভিতরে আমার জন‌্য এত ভালোবাসা! আমি আপ্লুত। (হাসি)

এখন তো ইন্ডাস্ট্রি অনেকটা বদলে গিয়েছে, আপনি সাতের দশকে যখন কাজ করতেন, তার চেয়ে। তফাত কেমন বুঝলেন?
– এখন ছবি তৈরি হয় কম। বেশিরভাগ ভালো ছবি তৈরি হয় না বলে, রি-রিলিজ হয়। সেটা দেখতেই পাচ্ছি, যে লক্ষণটা ভালো নয়। ক্রিয়েটিভিটি-ও কমেছে। আমাদের পরিচালক জিৎ খুব ভালো ছেলে আর ব্লেসড বাই গড কিন্তু একটু সিনসিয়ারিটির অভাব বোধ করি। এখনকার মানুষের মধ্যেই প‌্যাশন কম, ফরগেট অ‌্যাবাউট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। আমরা যেন কোনও বিষয়েই প‌্যাশনেট না এখন।

২৬ এপ্রিল জন্মদিন, কী পরিকল্পনা?
– অর্ধেকদিন কলকাতায় কাটবে যশ-নুসরতের সঙ্গে। বাকি অর্ধেক বম্বে গিয়ে বরের সঙ্গে (হাসি)।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement