সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই‘-এর প্রচারে বড় খবর দিলেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। এবার শুরু হতে চলেছে তাঁর বলিউড ইনিংস। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ডেবিউ নিয়েই অকপট অনন্যা। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
কেমন কাটল জন্মদিন? কী করলেন?
– বাড়িতেই কাটল। কিছুই করিনি । বন্ধুরা কেক পাঠায় । কিছু বন্ধু বাড়িতেও এসেছিল। ওই একটু কাটলাম, নিজেদের মত করে আড্ডা দিলাম
বয়স বাড়ল না কমল?
– আমার যত বয়স বাড়ছে , তত কমছে বলে মনে হয়।
আচ্ছা আপনার কী মনে হয়, সাধারনত মহিলাদের বয়স বাড়া নিয়ে এত চাপানউতোর কেন? কউ পুরুষদের পাকা চুল তো অভিজ্ঞতার ছাপ বলে কদর করা হয়। আপনি কীভাবে দেখেন?
– এখনকার যুগে এটা খুব হাস্যকর লাগে । এটা তো দীর্ঘদিনের পিতৃতন্ত্রের ফসল। পুরুষ যেভাবে নারীকে দেখতে চায় সেইভাবেই নারীকে নিজেকে সাজিয়ে রাখতে হবে। আমার তো মনে হয় মহিলাদের যত বয়স বাড়ে তত সুন্দর লাগে । অপর্ণা সেনকে দেখো। তাবু, কেট উইন্সলেট, ডিম্পল কাপাডিয়া , এমন অসংখ্য নাম করতে পারি ।
বহুদিন পর বড় ব্যানারের ছবিতে আপনাকে দেখা যাবে, তাও আবার সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি। একটা শোরগোল তো হয়ই। সেটা কতটা টের পাচ্ছেন?
*প্রোমোশন চলছে, এবং একটা যে শোরগোল হচ্ছে সেটা টের পাচ্ছি। অনেকেই বলছেন যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর নিজস্ব ঘরানায় ফিরেছেন। এত বড় কাস্ট! এতজন অভিনেতা একসঙ্গে , সেটা নিয়েও মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে এদের মধ্যে সমস্যা হল কি না, সেটা নিয়েও মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
গত তিন বছর আপনার ফিল্ম কেরিয়ারে বড় রিলিজ খুব একটা ছিল কী?
– আমার নিজেরই মনে পড়ছে না (হাসি)।
তো এতদিন পর একটা বড় রিলিজ, সেটা নিয়ে ব্যস্ততা কতটা আনন্দ দিচ্ছে?
– এটার জন্য তো আমরা অপেক্ষা করে থাকি, তাই না! একটা ভালো কাজ হবে, ভালো চরিত্র পাব। তারপর সেটা যখন মুক্তি পাবে সেটা নিয়ে দর্শক চর্চা করবে, দেখতে চাইবে। এটার জন্যই তো অভিনেতারা অপেক্ষা করা থাকে। আর আমার ক্ষেত্রে অপেক্ষার কালটা একটু বেশিই হয়, তাই আমার একটু বেশিই এক্সাইটেড লাগছে।
এই অপেক্ষার আড়াই-তিন বছরটা কেমন ছিল আপনার জন্য?
– অপেক্ষা করতে করতে যখন মনে হয় আর পারা যাচ্ছে না, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, তখন আবার নিজেকে নতুন করে বোঝাই যে এইভাবে অপেক্ষা করেই ভালো কাজ পেয়েছি, ফলে আমার তো ধৈর্য্য হারালে চলবে না। এর মধ্যে ছবি মুক্তি না পেলেও, আমি ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘অন্নপূর্ণা’ ছবির শুটিং করেছি। এই ছবিগুলো এবার মুক্তি পাবে।
আচ্ছা সৃজিত মুখোপাধ্যায় নিশ্চয়ই আপনাকে ট্যাঁশ ভাবে তাই না ? না হলে প্রচণ্ড নাক উঁচু ‘রূপা’-র চরিত্রে আপনাকে কাস্ট করলেন কেন? আর বাকিদের আপনার সম্পর্কে এই ধারনা তো এবার আরও পোক্ত হবে!
– এটা হতেই পরে যে সৃজিত আমাকে ট্যাঁশ ভাবে তাই আমাকে এমন চরিত্রে কাস্ট করেছে, আবার এটাও হতে পারে যে সৃজিত জানে আমি ট্যাঁশ নই তাই আমাকে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছে (হাসি)। এবার সত্যি কোনটা যারা আমাকে চেনে তারা জানে (হাসি)।
তবু ‘রূপা’ সম্পর্কে জানতে চাই।
– রূপা বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করে। আর সে হচ্ছে যাকে বলে ‘ব্র্যাকেটে বম্ব’। একেবারে টিপিকাল চরিত্র যে মনে করে বম্বেতেই সব কাজ ভালো হয়। কলকাতার সব খারাপ। কথায়-কথায় ইংরেজি বলে, শো অফ করে , ঠেস দিয়ে কথা বলে। আমি মজা পেয়েছি চরিত্রটা করতে। আমি যেটা নই সেটা হয়ে উঠতে খুব মজা পেয়েছি। এই ছবিতে আমি কৌশিক সেনের স্ত্রী।আর ব্রজেশ্বর মানে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছবিতে আমার স্বামীর বন্ধু।
এই ছবিতে যতই আপনাকে ‘ব্র্যাকেটে বম্বে’ বলুক, আপনি একজন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড উইনার হয়েও সেভাবে মুম্বইয়ে গিয়ে ‘স্ট্রাগল’ করেননি। কেন?
– আসলে এই ইচ্ছেটাই হয়নি যে আমি মুম্বই গিয়ে ওখানে পড়ে থেকে, বাড়ি ভাড়া করে, কাস্টিং ডিরেক্টরদের কাছে গিয়ে, অডিশন দিয়ে, শো-রিল দেখিয়ে কাজের চেষ্টা করব। এটা আমি করতে পারিনি। কারণ তখন আমার মনে হয়েছিল কলকাতায় যদি থাকি, তাহলে কিছু ভালো কাজ পেতে পারি। কেউ কাজ দেখে কাজ দিলে বেশি ভালো লাগে।
এখন তো অডিশন দিয়ে কাজ হয় মুম্বইয়ে।
– না, অডিশন দিতে কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু সেটাও তো আসতে হবে।
তবে খুব শীঘ্রই এটা পাল্টাবে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি ফতিমা সানা শেখের সঙ্গে ছবি দিয়েছেন। শুনেছি নেটফ্লিক্স অরিজিনালের জন্য্ কাজ করলেন?
– এটা নিয়ে তো এখন কথা বলতে পারব না ।
বিবেক সোনি পরিচালিত রোম্যান্টিক কমেডি । অসম বয়েসি প্রেমের গল্প । মাধবন রয়েছে…
– ও এতটা জান তাহলে বলতে পারি। হ্যাঁ অল্প বয়সি মেয়ের সঙ্গে বেশি বয়সের পুরুষের প্রেম ।ফাতিমার চরিত্রটা বাঙালি পরিবারের। মাধবন জামশেদপুরের। আমি ফাতিমার পরিবারের সদস্য।
মায়ের চরিত্রে ?
– মা , বা দিদি কোনওটাই তবে খুব কাছের।
তার মানে মুম্বই ইনিংস হচ্ছেই। সেটা কীভাবে সামলাবেন?
– হ্যাঁ , এখন যদি মুম্বইয়ে কাজ করি, তাহলে সেই জায়গাটা আমাকে বুঝে নিতে হবে, যেভাবে আমি কলকাতাকে বুঝে নিয়েছি।
আপনি কতটা অ্যাম্বিশ্বাস?
– অ্যাম্বিশন আসলে একেকজনের কাছে একেকরকম। কেউ যদি জিগ্যেস করে তুমি কী ভালো কাজ করতে চাও না, অবশ্যই করতে চাই। আমি সারাবছর অপেক্ষা করি, মরে যাই একটা ভালো চরিত্র পাওয়ার জন্য। কিন্তু কাজ করতে চাই মানেই কাজ পেতে বাকি যে আনুষঙ্গিক প্রসেস আছে সেটার মধ্যে জড়িয়ে পড়তে পারব না। আর আমার কাছে ভুরি ভুরি কাজের অফার আসে না। আমার কাছে যে দুটো, তিনটে ছবির অফার আসে তার মধ্যে থেকে বেছেই করব। আর এই অল্প ছবি করে তো আমার সারভাইভাল চলবে না, আর সৌভাগ্যছবশত যেহেতু সারভাইভালের জন্য ছবির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নই, সেক্ষেত্রে যে কাজ করে ক্রিয়েটিভ খিদে মিটবে সেটাই করি। আর আমি খুব বিলাসবহুল জীবনযাপন করিও না। সব দিকটা বুঝেই জীবনযাপন করি।
আপনার আর সৌরসেনীর কেমিস্ট্রি কেমন এই ছবিতে?
– আমাদের অফ স্ক্রিন কেমিস্ট্রি দুর্দান্ত। আমরা খুব মজা করেছি। এটাই ওর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা আমরা ইমপ্রোভাইস করেছি, তৈরি করেছি। সেটা দেখলে যদি বোঝা যায় তাহলেই সার্থক।
একঝাঁক তুখোড় অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ। ক্রিয়েটিভ প্রেশার ফিল করেছিলেন।
– আমার মনে হয় যে যাই বলুক প্রচ্ছন্নভাবে একটা হেলদি কমপিটিশন কাজ করেই সবার মধ্যে। তার সঙ্গে যেটা হয়েছে, যেহেতু এখানে সকলেই খুব পেশাদার , সিনসিয়ার এবং দক্ষ অভিনেতা, প্রত্যেকে, প্রত্যেকের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ফলে ওই যে প্রচ্ছন্ন কমপিটিশন সেটা প্রচ্ছন্নই ছিল, আমরা সবাই এগিয়ে গিয়েছি।
প্রেমে যখন বিচ্ছেদ হয় তখন বন্ধুদল ভাগ হয়ে যায়। কেউ বলে যে ছেড়ে গিয়েছে, সে দোষি, অন্য দল হয়তো বলল যে রয়ে গেল তারও অনেক দোষ। সত্যিটা কী বাকিরা জানতেও পারে না। আবার সমাজের দিকে তাকালে অভয়া হত্যার মতো বড় ঘটনাতেও সত্যিটা জানা যায় না। এই গোটা বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
– একটা কথা আমি খুব বিশ্বাস করি যে, সত্যি -মিথ্যে-ঠিক-ভুল কিছুটা পারস্পেকটিভ, কিছুটা রিলেটিভ। আর যখন কোনও ঘটনার ইমপ্যাক্ট খুব বড় স্কেলে হয় তখন এত ন্যারেটিভের মধ্যে আমি নিজেকে একটু গুটিয়ে নেওয়া শ্রেয় বলে মনে করি। সেখানে সত্যি-মিথ্যেের নানান ভার্সানের এমন ঘূর্ণি তৈরি হয় যে তার মধ্যে হারিয়ে যেতে পারি।
ব্যক্তিগত স্তরে বন্ধুদের মধ্যে পক্ষ নেওয়ার আবর্তের মধ্যে পড়েছেন?
– অবশ্যই পড়েছি। বন্ধুদের মধ্যে হয়তো ব্রেকআপ হয়েছে, তখন দেখলাম বাকি বন্ধুরা দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেল। এটা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি। এ বলে ও ঠিক, অন্য পক্ষ বলে অন্যজন ঠিক। তাই নিয়ে দু-দলে ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ হতেও দেখেছি। হয়তো দেখলাম যাদের ব্রেকআপ তারা পরবর্তীকালে বন্ধু হয়ে গেল। বাকিরা বন্ধুত্ব ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
সত্যি বলে কিছু নেই এটা মনে করেন?
– না, আমি সেটা মনে করি না। এই যে সকালে উঠছি এটা তো একটা সত্যি , সূর্য উঠছে, ডুবছে এটাও সত্যি । একটা সময় তো মানুষ বিশ্বাস করত পৃথিবীটা ফ্ল্যাট। সেটা আজকে আর সত্যি নয়। তাই যখন আগু পিছু মিলিয়ে সব সত্যিটা জানতে পারি না, তখন আমার কাছে বর্তমান সময়ে, আজকের দিনে যেটা সত্যি সেটাতে বাঁচার চেষ্টা করি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.