সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘পুষ্পা ২’র আইটেম গান ‘কিশিক’। উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া এই গানের বাংলা ভার্সান ইতিমধ্যেই হইচই ফেলে দিয়েছে। শ্রীজাতর লেখা এই গান নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় বিস্তর আলোচনা। মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তা কেমন ছিল এই গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা? ‘উহ আন্টাভা’র জনপ্রিয়তাকে কি পিছনে ফেলতে পারবে এই গান? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন শিল্পী উজ্জয়িনী । শুনলেন আকাশ মিশ্র
‘পুষ্পা ২’ ‘কিশিক’ গানের বাংলা ভার্সান নিয়ে রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন?
উজ্জয়িনী : ভালোই রেসপন্স পাচ্ছি। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত থেকে খুব ভালো রিভিউ পাচ্ছি গানটা নিয়ে। বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের থেকে খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। বিক্রমদা (বিক্রম ঘোষ) তো জানতেনই আমি রেকর্ডিং করতে যাচ্ছি। উনিও আলাদা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই শুভেচ্ছাগুলোই খুব বড় প্রাপ্তি। যখন নিজের ফ্রেটারনিটি লোকেরা, আমার কাজ পছন্দ করেন, তখন সত্যিই খুব ভালো লাগে। অনুপ্রেরণা পাই। তবে এখানে একজনের কথা আলাদা করে বলতে চাই, কয়েকদিন আগেই মধুমন্তী বাগচীর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল, মধুবন্তী আমাকে বলল, দেবী শ্রী প্রসাদ (পুষ্পা ২ সুরকার) আমার গান খুব পছন্দ করেছেন। একথা শুনে আমি আপ্লুত। উনি অবশ্য রেকডিংয়ের সময় ছিলেন না। পরে শুনেছেন। দেবী শ্রী প্রসাদের মতো আইকনিক সুরকারের কাছ থেকে এমন প্রশংসা পাওয়া সত্য়িই খুব আনন্দের। খুব অনুপ্রাণিত অনুভব করেছি।
প্রথম যখন অফার এল, ‘পুষ্পা ২’র গান গাইতে হবে। তাও আবার বাংলায়। শুনে কী মনে হয়েছিল?
উজ্জয়িনী : প্রথমে তো জানতাম না যে, ‘পুষ্পা ২’র বাংলা ভার্সানের জন্য গানের অফার। চেন্নাইয়ে পৌঁছে জানতে পারি। গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার জন্য বিক্রমদার সঙ্গেই মুম্বইয়ে মহড়া দিচ্ছিলাম। তখন আমার কাছে ফোনটা আসে। তিমিরদা (গায়ক তিমির বিশ্বাস) আমার নাম রেফার করেছিল। সত্য়িই আমি কৃতজ্ঞ। তারপর মুম্বই থেকে সোজা চেন্নাই। রাত একটার সময় রেকর্ডিং স্টুডিওতে ঢুকি। আমার সঙ্গে এসপি অভিষেক ছিলেন। খুব ভালো একজন গায়ক। আর ফোনে ছিলেন শ্রীজাতদা। ফোনে শ্রীজাতদা যেভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন, তা বলে বোঝানো যায় না। অদ্ভুত একটা ভরসা পেয়েছিলাম। শেষমেশ সব কাজ মিটল ২ টোর সময়।
বাংলায়, মুম্বইয়ে কাজ করার স্টাইল আর দক্ষিণের স্টাইলের মধ্যে কোনও তফাৎ খুঁজে পেলেন?
উজ্জয়িনী : আসলে ওখানে অ্যাপ্রোচটাই আলাদা। আমরা এখনও সেইরকম অ্যাপ্রোচে গান রেকর্ডিং করি না। ‘পুষ্পা ২’র এই গানটার ক্ষেত্রেই বলা যায়। এটা একটু র্যাপ ঘরানার। র্যাপের পর একটা, দুটো লাইন রয়েছে, যেটা মেলোডি, মূলত যা কোরাসে রয়েছে। এই ঘরানার গান পাশ্চাত্যেও হচ্ছে আজকাল। বলিউডেও ডান্স নাম্বারেও এমন কাজ হচ্ছে। তবে কম। আমার মনে হয়, নতুন প্রজন্মকে ধরার জন্যই এই ধরনের গানের চল।
গানটা শুনে শ্রীজাত কী বললেন?
উজ্জয়িনী : হ্যাঁ, আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এমনকী, আমার ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সেও লিখেছেন। সত্যিই আমি আপ্লুত।
‘থাপ্পড় পড়বে রে রাজা…’, দক্ষিণী ভাষার বাংলা সংস্করণ, আসল মেজাজটা কি ধরা পড়বে?
উজ্জয়িনী : এটা সত্যিই খুব ভালো প্রশ্ন। এটা অনেক ক্ষেত্রেই হয়। এই যেমন, মধুমন্তীর গাওয়া ‘আজ কি রাত’ গানটার একটা বাংলা ভার্সান হয়েছে। যেটা আমিই গেয়েছি। সেই গানটা করার সময় এবং শোনার সময় আমার মনে হয়েছে, শব্দের মধ্যে সেই ভাবপ্রকাশ হয়নি। যেটা হিন্দিতে রয়েছে। সেই কারণেই কিন্তু শ্রোতাদের তরফ থেকেও একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তবে এখানে শ্রীজাতদার লেখার হাতযশ যে এই গানটার মূলভাবটা নষ্ট হয়নি। বরং কিছু কিছু জায়গায় আসলটার থেকেও অনেক বেশি শ্রুতি মধুর হয়েছে। এটা কিন্তু শ্রোতারাই বলছে। এখানেই কিন্তু একটা অভিজ্ঞতা কাজ করে। আসলে, সুরকার দেবী শ্রী প্রসাদ খুব স্পষ্ট ছিলেন, তিনি কী চান! ওরা ঠিক যেমনটা চাইছেন, তেমনই কাজটা দিতে হবে। সেদিক থেকে কিন্তু একেবারে পারফেক্ট হয়েছে এই গানটি।
এই গান নিয়েও কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকেই বলছে বাংলা শব্দগুলো কানে লাগছে। আপনার কী মত?
উজ্জয়িনী : টেকনিক্যালি বলতে হলে, গানের ক্ষেত্রে কিছু শব্দ রাখতে হয়, যা রিদিমকে স্পষ্ট করে। এই গানের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু শব্দ রয়েছে। যা মধ্যে দিয়ে কিনা সাউন্ডটাকে বোঝানো হয়েছে। রিদিমটাকে ধরা হয়েছে। আগেও বহু গানে এমন হয়েছে। শুধু গানের ছন্দ বজায় রাখার জন্য শব্দও সৃষ্টি হয়েছে। আর সত্য়ি কথা বলতে, আমার কাজ আমরা করে যাব। সেই কাজের পজিটিভ প্রতিক্রিয়া গুলোই মাথায় রাখব। বাদ বাকি নয়। আসলে, সবাইকে খুশি করা যায় না। আমার তো মনে হয়, ট্রোলিং একটা পেশা। অনেকই বসে থাকেন কীভাবে নতুন নতুন পদ্ধতিতে ট্রোল করা যায়। তাই এসব ভেবে কাজ নেই।
ইন্টারনেট বলছে, ‘উহ আন্টাভা’র ধারে কাছে নয় এই গান, আপনার কি মত?
উজ্জয়িনী : আমি কখনই একটা গানের সঙ্গে আরেকটা গানের তুলনা করব না। তাহলে তো ‘চুপি চুপি রাত’ গানটার সঙ্গে আমার সব গানের তুলনা করতে হয়। আমি সেভাবে ভাবি না। ওটা ছিল ‘পুষ্পা’, এটা ‘পুষ্পা ২’। কলাকুশলীরা এক হলেও, প্রেক্ষাপট আলাদা। ওখানে ছিলেন সামান্থা, এখানে শ্রীলীলা। পুরো প্রেক্ষাপটটাই আলাদা। লোকে তুলনা করছে, করুক। কিন্তু আমি বলব, এটাকে একটা ফ্রেশ গান হিসেবেই দেখুন।
সম্প্রতি লগ্নজিতা আপনাকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না বলে লম্বা পোস্ট করেছেন। এই নিয়ে আপনার কী মত? সত্য়িই কী এমনটা ঘটে?
উজ্জয়িনী : লগ্নজিতা যেটা করল, সেটা খুবই সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। এটা কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পথ তৈরি করে রাখল। উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। আমরা তো শুনে থাকি যে, আমাদের জগতে, বিশেষ করে সঙ্গীতমহলে কোনও শিল্পীই, আরেক শিল্পীর বিষয়ে ভালো কথা বলেন না। আমরা সবাই ইঁদুর দৌঁড়ে রয়েছি। এটা যে পুরোটা সত্যি নয়, তা লগ্নজিতা দেখিয়ে দিল। আমি আশাই করিনি, লগ্নজিতা এরকমটা পোস্ট করবে। আমাকে মেসেজও করেছিল, যে না জানিয়ে এমনটা করল। আমি বললাম, বেশ করেছিস। আসলে লগ্নজিতা এরকমই। খুবই স্পষ্টবক্তা। এরকমটা ঘটে বলেই তো লিখেছে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.