সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: #MeToo আন্দোলনে যাঁরা এযাবৎ অভিযুক্ত হয়েছেন তাঁরা কি দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার যোগ্য? নাকি #MeToo অভিযোগ ওঠার পর ফিল্মি দুনিয়ার বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা বা তারকারা যেভাবে তাঁদের একঘরে করে দিচ্ছেন, তেমনটাই তাঁদের সঙ্গে চলতে থাকবে আজীবন?
উত্তরটা এখনও ভারতীয় ফিল্মি দুনিয়ার জানা নেই। কারণ, এখনও পর্যন্ত বলিউড-সহ ভারতীয় ফিল্ম জগতে যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব #MeToo অভিযোগে প্রকাশ্যে পর্যদুস্ত হয়েছেন, তাঁদের ব্রাত্য করার পর্যায়েই রয়েছেন ভারতীয় #MeToo আন্দোলনকারীরা। কোনও মামলা কিংবা আইনি লড়াই নয়। স্রেফ মুখের কথায় #MeToo অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘কাজ করব না’ জানিয়ে ছবি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন বেশ কিছু নামী তারকা। আবার অভিযুক্ত পরিচালকদের ক্ষেত্রে তাঁদেরই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ছবির পরিচালনার দায়িত্ব থেকে। তৈরি হয়ে গিয়েছিল যেসব ছবি, তার পোস্টার থেকে বাদ পড়েছে #MeToo অভিযুক্ত পরিচালকের নাম। ছবির প্রচার থেকেও দূরে রাখা হয়েছে তাঁদের।
কিন্তু, এরপর? এক বছর পরেও কি এমনটাই চলবে? অভিযুক্ত ওই পরিচালক বা তারকারা কি আর সিনেমা করবেন না? আর যদি বা করার সুযোগ পান তবে কী হবে? ধরা যাক, অলোকনাথ বা বিধু বিনোদ চোপড়া ভবিষ্যতে আবার কোনও ছবি করলেন। তখন তাঁদের সহকর্মী বলিউডের মহিলা কলাকুশলীদের ঠিক কেমন মনে হবে? তাঁরা কি কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করবেন? যদি না করেন তবে কাকে সরানো হবে? যিনি নিরাপদ বোধ করছেন না তাঁকে, নাকি #MeToo আন্দোলনের সেই অভিযুক্তকে। যাঁর ভাবমূর্তি বা কাজ নিরাপত্তার অভাব বোধ করাচ্ছে সহকর্মীদের?
[ এয়ারস্ট্রাইকের পর দেশপ্রেম নিয়ে ছবির হিড়িক বলিউডে ]
এ সব প্রশ্নের মুখোমুখি বলিউড এখনও না হলেও #MeToo আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হলিউড ইতিমধ্যেই হয়েছে। আর তা নিয়েই এক হলিউড অভিনেত্রীর খোলা চিঠি #MeToo আন্দোলনকারীদের নতুন করে ভাবাচ্ছে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
চিঠিটি হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এমা থম্পসন লিখেছেন দিন কয়েক আগে। গত মঙ্গলবার তা প্রকাশ করে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এবং ভ্যারাইটি পত্রিকা। থম্পসন তাতে প্রশ্ন তুলেছেন, হলিউডের জনপ্রিয় অ্যানিমেটর জন ল্যাসেস্টরের হলিউডে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে। হলিউডের দুই বিখ্যাত অ্যানিমেশন ছবি প্রযোজনা সংস্থা ডিজনি এবং পিক্সারে প্রাক্তন প্রধান ল্যাসেস্টরের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ওঠে #MeToo অভিযোগ। ততদিনে পিক্সার সংস্থাটিকে কিনে নিয়েছে ডিজনি। তৈরি হয়েছে নতুন সংস্থা ডিজনি-পিক্সার। সংস্থাটির বহু মহিলাকর্মী ল্যাসেস্টারের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন। যার জেরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে পিক্সার থেকে ছ’মাসের ছুটি নিয়ে পালাতে হয় ল্যাসেস্টারকে। পরে ডিজনি ২০১৮ সালের ৮ জুন ঘোষণা করে বছর শেষের আগেই ডিজনি-পিক্সার ছাড়বেন ল্যাসেস্টার।
সমস্যা তৈরি হয় এর কিছুদিন পর। যখন ল্যাসেস্টারকে প্রধানপদে নিয়োগ করে হলিউডের আর এক প্রযোজনা সংস্থা স্কাইডান্স অ্যানিমেশন। গত ৯ জানুয়ারি তাঁর কাজে যোগ দেওয়ার পরেই স্কাইডান্সের আসন্ন অ্যানিমেশন ফিল্ম ‘লাক’ থেকে বেরিয়ে আসেন অভিনেত্রী এমা থম্পসন। ল্যাসেস্টারের নিয়োগই যে ওই সিদ্ধান্তের কারণ, তা অনেকে বুঝলেও খোলাখুলি সেকথা তখনই বলেননি অভিনেত্রী।
মুখ খুললেন বেশ কিছুদিন পর। ওই চিঠিতে। যেখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। থম্পসন জানতে চেয়েছেন, “যে পুরুষ এক দশক ধরে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অসম্মান করেছেন, তাঁদের অশ্লীলভাবে স্পর্শ করেছেন, তিনি এখন তেমন কিছু করছেন না বলেই কি তাঁর অধীনে কর্মরত মহিলারা নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে চুপচাপ পেশাদারিত্ব দেখাবেন? সেক্ষেত্রে তা না করলে কি সংস্থার তরফে তাঁকে চুক্তিমাফিক পেশাদারিত্ব দেখাতে বাধ্য করা হবে?”
[ বিয়ে পাকা মালাইকা-অর্জুনের! কোন মতে বিয়ে করছেন তাঁরা? ]
থম্পসনের দ্বিতীয় প্রশ্ন, “যদি কোনও পুরুষ অতীতে তাঁর সংস্থায় অধস্তন কর্মীদের মানুষজ্ঞান না করে, হেয় করে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে অসম্মানজনক ব্যবহার করে থাকেন, তবে নতুন সংস্থায় যখন তিনি মহিলা সহকর্মীদের সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন, তখন তাঁরা কেন ভাববেন না যে তিনি অভিনয় করছেন? এক্ষেত্রে কি বক্তব্যটা এমন হল না যে, “আমি মেয়েদের প্রতি সম্মানবোধ করতে সবে শিখছি। তাই মহিলারা ধৈর্য ধরুন। ব্যাপারটা অত সোজা নয়!” থম্পসন জানতে চেয়েছেন, “ল্যাসেস্টারকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার কথা অনেকেই বলছেন। কিন্তু, এই দ্বিতীয় সুযোগের সঙ্গে তাঁকে তো লক্ষ্য কোটি ডলারও দেওয়া হচ্ছে। তার কী হবে?”
থম্পসনের প্রশ্ন, “এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির সঙ্গে যাঁদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাঁদের মতামত জানতে চাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ নয় কি? যে তাঁরাও তাঁকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে চান কি না? তাঁদের না চাওয়ার ভোট বেশি হলে কি ওই ব্যক্তি কাজ হারাতে পারেন? নাকি ব্যাপারটা কর্মীদের উপর চাপিয়ে দেওয়াটাই রীতি। বার্তাটা এরকম যে। ইনি থাকবেন। তোমার ভাল লাগলে থাক, না লাগলে কাজকে বিদায় জানাও। অভিনেত্রী এমা থম্পসনের এই সব প্রশ্ন এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে #MeToo আন্দোলনকে। এখন দেখার দুনিয়া জোড়া এই আন্দোলন ক্ষমতাশালীদের সিংহাসন টলানোর পর এই বেড়াও টপকাতে পারে কি না!