বাঙালির অন্দরমহলে তিনি পরিচিত বাবু রাজচন্দ্র নামে। ছোট পর্দার সদস্যদের আমার আপনার অন্দরমহলে ঢুকে পড়তে বেশি সময় লাগে না, তাদের অভিনয় থেকে ব্যক্তিগত জীবনের চড়াই-উতরাই নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল হয়ে পড়ি। সম্প্রতি, এমনই এক নতুন মুখ সাড়া ফেলেছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তিনি হলেন রানি রাসমণি ধারাবাহিকের অভিনেতা গাজি আবদুন নূর। কর্মজীবন থেকে ব্যক্তিগত জীবনে তা নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় নূর।সেই গাজি আবদুন নূরের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় আরাত্রিকা দে।
সদ্য তোমার অভিনীত চরিত্র রাজচন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে, অনেক দিনের জার্নি শেষ হল, মিস করো?
খুবই মিস করি, সবাই একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলাম, তবে আগে থেকেই তো জানতাম একটা সময়ের পর এই চরিত্রটা শেষ হবে। তাই খানিকটা প্রস্তুতি ছিলই। আমি সবার সামনে কাঁদতে পারি না, তাই শেষ দিনও তেমন ভাবে কাঁদতে পারিনি। তবে ধারাবাহিকে যখন আমার বাবা মারা যান তখন আমি সত্যি সত্যিই কেঁদে ছিলাম। তবে এখনও মাঝে মাঝে আমায় ছোট কোনও পুরনো দৃশ্য এস্টাবলিশমেন্টের জন্য শর্ট দিতে যেতে হয়।
এই চরিত্রের সুযোগটা কীভাবে এল?
সোশ্যাল সাইট থেকে আমার ছবি দেখে ডিওপি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তবে ওটা একটা অন্য ধারাবাহিকের জন্য। আমি যখন অডিশন দিতে যাই তখন দেখি আমার দশ-বারোটা ছবি ওদের কাছে আছে, খুব অবাকই হয়েছিলাম, (হাসি)। ওইদিন ওখানে অনেক এক্সপিরিয়েন্সড লোকজনও অডিশন দিতে এসেছিলেন। আর সেদিনের আমার লুকটাও ছিল পুরো উলটো, আমাকে দেখে সবাই প্রথমেই বলেছিলেন গোঁফটা কাটতে হবে (হাসি)। সেদিনকার মতো লুক টেস্টে তো পাস করে গিয়েছিলাম।
অভিনয়ে আসাটা কি হঠাৎই নাকি কোনও পরিকল্পনা ছিল?
না, না হঠাৎ একেবারেই না। বাংলাদেশে আমি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তারপর কলকাতায় আসা রবীন্দ্রভারতীতে ড্রামা নিয়ে পড়ার জন্য, এবং আমি যখন কলকাতায় আসি তখনও আমার একটা নাটকের শো চলছিল। তবে ছোট থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেব। আমার বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তবে একটা সময় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভিতর এক অস্থির অবস্থা তৈরি হতে সিদ্ধান্ত বদল করি। ঠিক করি অভিনয় করব, প্রথমটা বাড়ি থেকে মানতে একটু অসুবিধা হয়, আস্তে আস্তে সব ধাতস্থ হয়ে যায়।
এখন ধারাবাহিক শেষ করার পর অবসর, কীভাবে সময় কাটাচ্ছ?
আমার তো এখনও অবসর নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকি। ইদানীং তো নকশিকাঁথার উপর পড়াশোনা করছি। আর সময় পেলেই নাটক দেখছি।
নতুন কী কী কাজ করতে চলেছ?
এখুনি কিছু করার ইচ্ছা নেই, কারণ রাজচন্দ্র মানুষের মনে এমন ভাবে গেঁথে আছে, যে আমি যদি অন্য কোনও লুকে তাঁদের সামনে ধরা দিই তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই একটা বছর তেমন কোনও কাজ করার ইচ্ছা নেই। নিজেকে এবং দর্শকদেরও ধাতস্থ হতে একটু সময় দিতে চাই। তাছাড়া এখনও তো রাসমণির সঙ্গে আমি যুক্ত। কিছু ছোট ছোট দৃশ্য করতে আমায় মাঝে মাঝেই আমায় যেতে হয়। তবে এবার আমি এটা থেকেও বেড়াতে চাই। তবে বাংলাদেশে একটা ছবি করছি, সেটা খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে।
এখন তো তোমার অনেক ফ্যান ফলোয়ার, তাদের নিয়ে মনে রাখার মতো কোনও ঘটনা আছে।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। দাগ কেটে যাওয়ার মতো অনেক ঘটনা আছে, এই তো কয়েকদিন আগে মিউজিক ডিরেক্টর বাপি লাহিড়ীর পরিবারের সবাই আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ওঁর মেয়ে আমায় বললেন তোমায় একটু ছুঁয়ে দেখব। (হাসি) এগুলো খুব ভাল লাগার স্মৃতি। তাছাড়াও অনেকে ভিন দেশ থেকেও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
তোমার তো অনেক ফিমেল ফ্যানও আছেন, তারা তোমার রিলেশন স্টেটাস জানতে চান?
আমার মনের মানুষের জন্য আমি গান লিখি, কবিতা লিখি, এই ভাবেই মনের ভাব আদান প্রদান করে থাকি (একটু থেমে) তবে সেই মনের মানুষটি আমার কল্পনায় আছে। বাস্তবে এখনও ধরা দেয়নি। এর আগে সম্পর্ক ছিল দু’জনের সঙ্গে তবে তাঁরা আমায় ছেড়ে চলে যান। তেমনভাবে দেখতে গেলে আমি এখন সিঙ্গেল।
বেশ অনেকদিন হল বাংলাদেশ ছেড়ে আছো, কতটা মিস করো নিজের জায়গা?
বাংলাদেশ আমার শিকড়, তাই মিস তো করবই, তবে কলকাতায় থাকতে থাকতে এটাও আমার প্রাণের শহর হয়ে উঠেছে, এখানকার অলিগলি আমার চেনা।
তোমার প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী?
উত্তমকুমার, এই সময়ের কেউ তেমনভাবে প্রিয় নয়। আর প্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। আর অবশ্যই এই তালিকায় দিতিপ্রিয়ার নামটা বলতেই হয়।
দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে তোমার অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি তো দেখেছি, কিন্তু রিয়েল লাইফে তোমাদের সম্পর্ক কেমন?
ওর সঙ্গে আমার সেটেই কথা হত, আর অন্য সময় হলেও কাজ নিয়েই হত, ও অনেক ছোট, তাই আমার লেগ পুল করলে মাঝে মাঝে রেগেও যেতাম, কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক… করতাম। তবে ওর মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল।
ক’দিন আগে দিতিপ্রয়ার গান যে ভাবে ট্রোল্ড হল, তোমাকে তাতে প্রতিবাদ করতেও দেখা গিয়েছে, সেই প্রসঙ্গে কী বলবে ?
আমি মানছি দিতিপ্রিয়া খুব বাজে গেয়েছে। তবে এমন ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা কখনওই কাম্য নয়। ভিডিওটা ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে ও যখন গান গাইছিল তখন দর্শক কিন্তু তা সাদরে গ্রহণ করেছেন, আসলে যাদের ট্রোল করার তারা করবেই।
আগামী দিনে লক্ষ্য কি ছোটপর্দা না বড়পর্দা?
যেহেতু আমি নাটকের তাই সবথেকে কাছের হল মঞ্চ, তারপরের পছন্দ বলতে গেলে অবশ্যই বড়পর্দা, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ওযেব সিরিজের অফারও পেয়েছিলাম, কিন্তু এক বছর কাজ করব না বলে সেই সুযোগ কাজে লাগাইনি। তবে আগামীদিনে ভাল কাজের জন্য অপেক্ষায় আছি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.