Advertisement
Advertisement

Breaking News

কে সেই ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’? খোঁজ করে বেড়াচ্ছেন কৌশিক

আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নিয়ে থ্রিলার ওয়েব সিরিজের মুখ্য চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

Koushi Ganguly palying lead in 'Sat Nombor Sanatan Sanyal's
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:July 23, 2019 8:58 pm
  • Updated:July 23, 2019 8:58 pm

নিজের সমনামীদের খোঁজে শহরে ঘুরে বেড়ানো এক মানুষের মনন সত্তায় প্রবেশের কাহিনিই উঠে এসেছে পরিচালক অন্নপূর্ণা বসুর ছবি ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’-এ। থ্রিলারের মোড়কে আবর্তিত এই ছবিতে এক অন্য রকমের চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। জি ফাইভে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে স্ট্রিমিং।লিখছেন সোমনাথ লাহা

তথাকথিত ফর্মুলা মেনে নয়। বরং স্বাদে-বর্ণে-বৈচিত্রে অন্য ধরনের বিষয় ভাবনাকেই নিজের মোবাইল স্ক্রিনে দেখতে পছন্দ করেন মানুষ। ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মের সেই গল্পও তখন আঙ্গিক ও ন্যারেশনের দিক থেকে তৈরি করে নতুন প্যাটার্ন। আর সেই ভাবনাকেই কাজে লাগিয়ে ওয়েব অঙ্গনে উঠে আসছেন নতুন পরিচালকরা। নতুন ভাষার সন্ধান নিয়ে। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন পরিচালক অন্নপূর্ণা বসুর ছবি ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’। জি-র ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভের জন্য এই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিটি তৈরি করেছেন অন্নপূর্ণা। আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের মতো বিষয় ভাবনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এই ছবির কাহিনিতে রয়েছে এমন এক মোচড়, যা থ্রিলারের স্বাদ নিয়ে আসে গল্পে। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। মূলত তাঁকে ভরকেন্দ্রে রেখেই এই ছবির চিত্রনাট্যর বুনন করেছেন পরিচালক। ছবিতে অনান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন শিলাজিৎ মজুমদার, সাহেব ভট্টাচার্য, বিভাস চক্রবর্তী, দেবদূত ঘোষ, শাঁওলি চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কারতি পাল, কৌশিক অধিকারী, সোহম মৈত্র ও অন্যান্য শিল্পীরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন:  দেশজুড়ে গণপিটুনিতে হত্যা নিয়ে সরব নাসিরুদ্দিন, দাঁড়ালেন আক্রান্তদের পরিবারের পাশে]

Advertisement

প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে অন্য একটি ডিজিটাল ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য ‘শশীভূষণ’ ও ‘পকেটমার’-র মতো দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের কনটেন্ট তৈরি করেছিলেন অন্নপূর্ণা। এসআরএফটিআইয়ের এই প্রাক্তনী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সহকারী হিসাবে। ‘ছোটদের ছবি’, ‘নগরকীর্তন’-সহ সাতটি ছবিতে কৌশিকের সহকারী ছিলেন অন্নপূর্ণা। কাহিনি ও বিষয় ভাবনার দিক থেকে সত্যিই এক অন্যরকমের আবহে মাখা ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’। উত্তর কলকাতায় বসবাসরত ৪৫ বছর বয়সি এক ছাপোষা মানুষ সনাতন সান্যাল (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়)। চাকরি জীবনেও সে বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারেনি আর বিবাহিত জাবনেও সে বিশেষ সুখী নয়। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সনাতন অন্যদের মতো জীবন উপভোগ করতে চান কিন্তু পেরে ওঠেন না। কংক্রিটের জঙ্গলে তাই প্রতিনিয়ত নিজের পরিচয় খুঁজে পাওয়ার জন্য সংগ্রামরত এই মানুষটি। তার স্ত্রী ডলি (শাঁওলি) পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম। ডলির টাকাতেই সংসার চলে। ফলে এইভাবে কম্প্রোমাইজ করে তার সঙ্গে আর থাকতে চায় না ডলি। এমতাবস্থায় এক অদ্ভুত চাকরি পান সনাতন। সমনামের লোকেদের এক তালিকা তৈরি করে সেই নেমসেকদের কাছে গিয়ে বিক্রি করেন এক বিশেষ আতর। আর তার পরেই একে একে হারিয়ে যেতে থাকে তারা। কিন্তু কোথায় হারিয়ে যায়? গুম খুন হয়। কি বাকি সনাতনরা? কী তাদের পরিণতি? এর ফলে সনাতনের কী পরিণতি হয়? তা জানতে হলে দেখতেই হবে এই ছবি। কারণ সেটাই ছবির মূল উপজীব্য। ছবির কাহিনি লিখেছেন অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিচালক নিজে। চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। সংগীত পরিচালনায় ইন্দ্রনীল মজুমদার। সিনেমাটোগ্রাফার রামানন্দ সরকার। প্রযোজনায় এস কে মুভিজ ও ফিল্মি ফ্যামিলি প্রোডাকশন। দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতা মিলিয়ে হয়েছে এই ছবির শুটিং।

ছবিতে ছাপোষা সনাতন সান্যালের চরিত্রটিকে নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে রক্তমাংসের জীবন্ত করে তুলেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। বাকি ছয়জন সনাতনের চরিত্রে শিলাজিৎ, সাহেব, বিভাস চক্রবর্তী, দেবদূত, অধিকারী কৌশিক ও সোহম মৈত্রের প্রশংসা করতেই হয়। তবে বিশেষভাবে বলতে হয় সাহেব ভট্টাচার্য, দেবদূত ঘোষ ও বিভাস চক্রবর্তী রূপী সনাতনের সঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় রূপী সনাতনের কথোপকথনের মুহূর্তগুলি। ছবির অন্যতম প্রাণস্পন্দন সেগুলি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডলির চরিত্রে শাঁওলির স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ অভিনয় রীতিমতো দাগ কেটে যায়।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও ক্যামেরার কাজটিও বেশ ভাল। ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে অন্যরকম গল্পের আস্বাদ দেওয়া পরিচালক অন্নপূর্ণা কর ভবিষ্যতে যে আরও অন্যরকমের কাজ দর্শকদের উপহার দেবেন সে আশা করাই যায়। ছবির ছোটখাটো ডিটেলিং-সহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলি দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন পরিচালক। ৭ জুলাই থেকে ইতিমধ্যেই জি ফাইভে স্ট্রিমিং শুরু হওয়া এই ছবির সম্প্রতি একটি বিশেষ স্ক্রিনিং রাখা হয়েছিল বালিগঞ্জ স্থিত এক মাল্টিপ্লেক্সে। উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক, পরিচালক-সহ অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরা।

[আরও পড়ুন: যৌনতা সংক্রান্ত যাবতীয় সামাজিক ট্যাবু ভাঙার গল্প নিয়ে আসছেন সোনাক্ষী]

নিজের এই ছবি প্রসঙ্গে অন্নপূর্ণা জানান, “এই গল্পটা মূলত একজন মানুষের নিজের পরিচয় খুঁজে পাওয়ার। একই নামের আলাদা আলাদা মানুষের মধ্যে এতটা বৈপরীত্য হতে পারে সেটা আমার মাথায় এসেছিল। সেখান থেকেই এই গল্পের ভাবনা।” কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ প্রসঙ্গে অন্নপূর্ণার অভিমত “কৌশিকদা কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন। তাই অস্বাচ্ছন্দ্য বিষয়টা অনুভব করতে পারিনি।” ছবিটা দেখলে দর্শকরা বুঝবেন এই চরিত্রটা কৌশিকদা ছাড়া আর কেউ কেন করতে পারত না।” কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এটা খুবই সিরিয়াস একটা চরিত্র। তাই কঠিনও। মানুষ এই শহরে নিজেকেই নিজে খুঁজে বেড়ায়। একা একেলার মতো। সনাতন সান্যাল ও তার সমনামের লোকেদের খোঁজে। গল্পটা পড়েই আমার বেশ ভাল লেগেছিল। আসলে এটা সনাতনের মন, তার সত্তায় প্রবেশ করার গল্প।”

সাহেবের মতে “আমার চরিত্রটা একজন দয়ামায়াহীন, উদ্যমী ব্যবসায়ীর। এই চরিত্রটার সঙ্গে যখন কৌশিকদার দেখা হয় তখন দু’জনের মধ্যে একটা সংঘাত তৈরি হয়। সেটা বেশ ইন্টারেস্টিং।”দেবদূতের কথায় “আমি এখানে একজন জো্যতিষের চরিত্রে অভিনয় করেছি। জ্যোতিষ নিয়ে মানুষের মনে শ্রদ্ধা-অশ্রদ্ধা দুই-ই রয়েছে। আমি নিজে জ্যোতিষে বিশ্বাসী নই। তবে জ্যোতিষীদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি। তবে এখানে এই জ্যোতিষ সনাতন একজন ভণ্ড মানুষ।” শাঁওলির মন্তব্য, “এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। কৌশিকদা ও শিলাজিৎদার সাথে স্ক্রিন শেয়ার করার সময় একটা ভয় প্রথমদিকে থাকলেও দু’জনের সহযোগিতাও সর্বোপরি পরিচালকের সঙ্গে আমার মিলমিশ ভাল হওয়ায় ভাল করে কাজটা করতে পেরেছি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ