সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত জানুয়ারি মাস থেকেই সংবাদের শিরোনামে শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। গোটা দেশের কাছে সেই ব্যক্তি সইফ আলি খানের (Saif Ali Khan) বাড়ির ‘আততায়ী’ বলে পরিচিত হলেও নবাবের মুখে কিন্তু অন্য কথা। বরং বাংলাদেশ থেকে মুম্বইতে কাজ করতে আসা শরিফুলের জন্য সহানুভূতিই প্রকাশ করলেন সইফ। আক্ষেপের সুরেই অভিনেতার মন্তব্য, “ওর জীবন অনেক বেশি বিপর্যস্ত, বেচারা।”
জানুয়ারি মাসে নিজের সদগুরু শরণের অন্দরমহলে আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হন। এমনকী ছুরির ২ ইঞ্চি অংশ জটিল অস্ত্রোপচার করে বের করতে হয়। ছয় বার এলোপাথারি কোপ খেয়েও কিন্তু হামলাকারীর প্রতি কোনও ক্ষোভপ্রকাশ করলেন না সইফ। বরং অভিনেতা মনে করেন, এই ঘটনায় তাঁর জীবনের কোনও পরিবর্তন হবে না ঠিকই কিন্তু শরিফুলের জীবন তো বিপর্যস্ত হয়ে গেল। সম্প্রতি একা সাক্ষৎকারে ১৬ জানুয়ারির মাঝরাতের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বলিউড নবাব। সেখানেই তিনি জানান যে, “আমি মনে করি না, আমার জীবনের কোনও ঝুঁকি রয়েছে। আমি কোনও হুমকির মুখেও নেই। আরহ এই ঘটনায় আমার জীবনে কোনও পরিবর্তন হয়নি। হওয়াও উচিত নয়! তবে ওই ব্যক্তি পরিস্থিতি শিকার হয়ে জীবনে হতাশা থেকেই আমার বাড়িতে চুরি করতে এসেছিল। এটা কোনও পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণও ছিল না। আমার মনে হয়, ও শুধু আমার বাড়িতে চুরি-ডাকাতি করতেই ঢুকেছিল। আর সেটাই ওর ভুল হয়ে গিয়েছে। বেচারা, ওর জীবন আমার চেয়েও বেশি বিপর্যস্ত।”
এহেন মারাত্মক হামলার ঘটনার পর কি এবার থেকে বাড়িতে অস্ত্র রাখবেন? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সইফ সাফ জানান, “দেখুন আমি মনে করি না আমার প্রাণের কোনওরকম ঝুঁকি রয়েছে। আর এসব করেও কিছু পরিবর্তন হবে না। অনেকেই প্রস্ন তুলেছেন, সেলেব হয়েও আমাদের নিরাপত্তা নেই কেন? আমি বলতে চাই, আমি ওই তিন-চারজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরব, এরকম মানুষ কোনওদিনই ছিলাম না। এই ঘটনার পরও অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী রাখতে চাই না। এটা আমার জন্য দুঃস্বপ্ন! আমি সত্যিই মনে করি আমি বা আমার পরিবারের কারোরই প্রাণের ঝুঁকি নেই। আমাদের কেউ হুমকিও দেয়নি। যা ঘটেছে, ওই ব্যক্তি ভুল করে করে ফেলেছে।”
গত জানুয়ারি মাসে সইফ আলি খানের (Saif Ali Khan) হামলাকারীর বাংলাদেশ যোগ নিয়ে তুমুল শোরগোল হয় রাজনৈতিক মহলে। কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে? সেই প্রশ্নও ওঠে। কখনও সোশালপাড়ায় কেজরি-ফড়ণবিসের বাক-বিতণ্ডা আবার কখনও বা সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপির তরজাও হয়েছে। ধৃত শরিফুল ইসলাম শেহজাদ সম্পর্কে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্যও প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁর বাবা মহম্মদ রহুল আমিনই দাবি করেছিলেন, “শেখ হাসিনার জন্যই ভারতে অনুপ্রবেশ শরিফুলের।” রহুল আমিনের দাবি করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। বাংলাদেশের টালমাটাল পরিস্থিতির জন্যই শরিফুলকে ভারতে চলে আসতে হয়। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ধৃত শরিফুলের বাবা নিজেকে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, “হাসিনা সরকারের কারণেই ছেলেকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসতে হয়। বাংলাদেশেই অবৈধভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে গত বছর (২০২৪) এপ্রিল মাসে শরিফুল ভারতে চলে যায়। মুম্বইতে এক হোটেলে কাজও করছিল। পারিশ্রমিক পেত। আমরা বাংলাদেশের জালোকাঠি জেলার বাসিন্দা। আমি বিএনপি দল করতাম। আমার দুই সন্তানও সেই পার্টির সঙ্গেই যুক্ত ছিল।” ধৃত শরিফুলের বাবার আরও বিস্ফোরক দাবি, “সেইসময়ে শেখ হাসিনা অনেক মানুষকে মেরে ফেলছিলেন। তাই আমার ছেলের পক্ষে আর বাংলাদেশে থাকা সম্ভব হয়নি। ভারতে পালিয়ে যাওয়া ছাড়াও আর কোনও উপায় ছিল না ওর কাছে।” এবার সইফ খোদ ধৃত শরিফুলের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করলেন।
উল্লেখ্য, ১৬ জানুয়ারি রাতে সইফের বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালায় এক দুষ্কৃতী। তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর ওই ঘটনায় বাংলাদেশি নাগরিক শরিফুলকে গেপ্তার করে পুলিশ। মুম্বই পুলিশকে দেওয়া বয়ানে সইফ জানিয়েছেন, সেদিন স্ত্রী করিনার সঙ্গে ঘরেই ছিলেন তিনি। আচমকা বাইরে থেলে পরিচারিকা এলিমা ফিলিপসের চিৎকার শুনতে পান। এলিমা করিনাদের ছোট সন্তান জেহ-র দেখাশোনা করেন। জেহ রাতে তাঁর সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। এলিমার চিৎকার শুনে সইফ এবং করিনা ছুটে যান এলিমার ঘরে। দেখতে পান দুষ্কৃতীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি চলছে এলিমার। অভিনেতা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতী জেহ-র ঘর থেকে বের করার জন্য তিনি তাঁকে জাপটে ধরেন। সেসময় ওই দুষ্কৃতী তাঁকে এলোপাথাড়ি ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালানোর চেষ্টা করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.