বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীত স্মৃতিচারণা এবং এবারের নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালে লিখলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
২০১৫ সাল থেকেই গ্রীষ্মকালে আমাদের ছবি রিলিজ করে। ফলে, সিনেমা সম্পর্কিত কাজ নিয়েই আমাদের নববর্ষ কেটে যায়। হয় প্রচারমূলক কোনও অনুষ্ঠান থাকে, নয়তো ছবির গান রিলিজ হয়। তাই প্রতিবার পয়লা বৈশাখে নতুন সিনেমা রিলিজের সঙ্গে মেতে থাকি আমরা। এবছর যেমন নববর্ষকে মাথায় রেখেই ‘আমার বস’ ছবির প্রেমের গান ‘মালাচন্দন’ রিলিজ হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তী গান রিলিজের তোড়জোর চলছে। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ট্রেলার মুক্তি পাবে। সেটা নিয়েও বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছি। আর যেটা থাকে, নববর্ষে জামাকাপড় দেওয়ার চল। নন্দিতাদি (রায়) প্রতিবার পয়লা বৈশাখে আমাকে জামা উপহার দেন। দিদির কাছে আমার আবদার থাকে, সাদা ফতুয়া আর সাদা পাজামার, সেটা আমার বড় প্রিয়। নন্দিতাদিকে বলি- দিদি আর কারও কাছ থেকে এটা চাইব না, আপনিই আমাকে দেবেন। সেটা প্রতিবার ম্যান্ডেটরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় অধিকাংশ সময়ে বাড়িতেও সেটা জানিয়ে রাখি। তার কারণ সেই জামাটা পরেই সারাবছর আমি শুটিং করি। আমার সমস্ত শুটিংয়ে ওই পোশাকেই দেখা যায় আমাকে। একটু মজা করে বলতে গেলে, এখন সমস্ত আর্টিস্টের আমাকে দেখে বেশ ঈর্ষা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এটাই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে সামার কস্টিউম (গ্রীষ্মকালীন পোশাক)। আরেকটা যেটা মাস্ট, সেটা বউয়ের উপহার। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে জিনিয়া (সেন) আমাকে গেঞ্জি বা অন্য কোনও উপহার দেবেই।
নতুন বছরের পয়লা দিন উপলক্ষে আমাদের বাড়িতেও রান্নাবান্না হয় বটে, তবে এই দিনটিতে আমাদের নিরামিষ খাওয়ার চল রয়েছে। তার অন্যতম কারণ, নববর্ষের সঙ্গে আমার স্মৃতিটা যতটা আনন্দের, তার অনেকটা বিষাদেরও। এক পয়লা বৈশাখে আমার বাবা এবং কাকা দুজনেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সেটাও বারো ঘণ্টার তফাতে। তার পর থেকেই এই দিনটি আমাদের পরিবারের কাছে অন্যরকম। আর সেই প্রেক্ষিতে প্রতিবার তর্পণের একটা বিষয় থাকে। পুরোটাই আমি করি। তাই পয়লা বৈশাখে বাবা এবং কাকার প্রিয় পদগুলোই আমাদের বাড়িতে রান্না হয়। আমি যতক্ষণ পুজো করি, মা আমার জন্য অপেক্ষা করেন। দাদাও আসেন। চেষ্টা করি, এদিন মাকে বিষাদ-স্মৃতি থেকে দূরে রাখার। বাড়়িতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ জানাই। যাতে গল্পগাছা করলে, আড্ডা দিলে মায়ের একটু ভালো লাগে।
আগে নববর্ষ উপলক্ষে আমার বাড়িতে নাচ-গান, কবিতা, নাটকের আসর বসত। আমার স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধবরা আসত। সেসব আয়োজনের মূল লক্ষ্যই থাকত, মা যাতে ভালো থাকেন। সেকারণেই মাকে বলতাম- রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ নাটকটা করছি, তুমি গুণবতী হও, আমি গোবিন্দ মাণিক্য হব। আবার কখনও বলতাম, তুমি রঘুপতি হও, আমি জয়সিংহ হব। কিংবা কোনও বছর হয়তো ‘কর্ণকুন্তী সংবাদ’ করলাম। মা এসবে ভালো থাকতেন। নববর্ষের দিন বাড়িতে যেন বিষাদের সুর না থাকে, বাবা-কাকা চলে যাওয়ার পর থেকে এই দিনটিতে সেই চেষ্টাই করেছি বরাবর। আমার মনে হয়, মা ভালো থাকলে কিংবা বাড়ির পরিবেশটা ভালো হলে, বাবা-কাকাও খুশি থাকবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.