Advertisement
Advertisement

Breaking News

Shoojit Sircar

‘ডিভোর্সের গুজব অভিষেককে বিচলিত করে না’, জানালেন সুজিত

'আই ওয়ান্ট টু টক' নিয়ে আড্ডায় সুজিত সরকার।

Shoojit Sircar on working with Abhishek Bachchan in I Want to talk
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:November 29, 2024 4:25 pm
  • Updated:November 29, 2024 4:35 pm  

নতুন ছবি ‘আই ওয়ান্ট টু টক’ (I Want to talk) থেকে অভিষেক-ঐশ্বর্যকে নিয়ে নানা গুঞ্জন, বাংলা সিনেমার পরিকল্পনা নিয়ে আড্ডায় সুজিত সরকার (Shoojit Sircar)। শুনলেন শম্পালী মৌলিক

আপনার সাম্প্রতিক ছবির নাম ‘আই ওয়ান্ট টু টক’। নামটা খুব ইন্টারেস্টিং। নামের নেপথ‌্য ভাবনা কেমন?
– বেসিকালি খুবই কমন ভাবনাটা। আমরা সবাই তো কথাই বলতে চাই। কথা নিয়ে আমার ভাবনা হল- টু কমিউনিকেট। এই কমিউনিকেশনের জমানাতেও কোথাও না কোথাও আমাদের ভিতরে এমন ইগো কাজ করে যে, আমরা পরিষ্কারভাবে কথা বলি না। ছেলেরা যেন একটু লেস এক্সপ্রেসিভ। আমরা যেন সকলের সামনে এক্সপ্রেশন একটু কম দেখাই। সেটার কথা আমার মাথায় ছিল। সেই জন‌্যই নামটা হয়তো ‘আই ওয়ান্ট টু টক’। ছবিতে অভিষেক বচ্চন কথা বলতে চায়, কিন্তু কিছু একটা ওকে আটকে দিচ্ছে মেয়ের সঙ্গে কথা বলায়। আর ওর মেয়ে সেটা বুঝতে পারছে না। ওই যে দুজনের মানসিক দ্বন্দ্ব চলছে, ওটা নিয়েই আমি ভেবেছিলাম, ‘আই ওয়ান্ট টু টক’ ইজ আ গুড টাইটেল। আমার যে বন্ধু অর্জুন সেন, যাকে নিয়ে ছবিটা বানিয়েছি, ও কথা বলতে খুব ভালোবাসে। কিন্তু আসল
কথা না বলে, এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে বলে (হাসি)।

Advertisement

কথা বলতে না পারার জন‌্য অনেক সময় আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়, দূরত্ব তৈরি হয়। সেরকম অভিজ্ঞতা আপনার হয়েছে?
– নিশ্চয়ই হয়েছে। বাইরের মানুষের সঙ্গে নয়, পরিবারের ভিতরের মানুষের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি এটা হয়। আমরা সঙ্গে থাকি, তাও কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে ব‌্যারিয়ার চলে আসে। কারণ, আমরা খুলে কথা বলি না। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘তুমি কি ছবিটা করেছ তোমার মেয়ের সঙ্গে কথোপকথনের জন‌্য?’ আমি বলেছি, ‘এটা ডিনাই করতে পারব না। হ্যাঁ, করেছি।’ আমার মেয়েরাও আমাকে বড় হতে দেখছে। আমিও এমন একটা কাজের দুনিয়ার মধ্যে রয়েছি। এই ছবিটা করার আরও একটা কারণ ছিল, ছোটবেলায় মেয়েদের ছেড়ে আমি যখন কাজে চলে যেতাম, ওরা দেখেছে বাবা কাজে চলে গেল। আমাকে কাজ করতেই হত, এটা আমার কারণ ছিল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ওদের যে সময়টা, সেটা আমি চুরি করছি, আর তা আমার কাজে দিচ্ছি। এখান থেকেই ব‌্যবধান শুরু হয়।

ছবিতে অভিষেক বচ্চন আর তার মেয়ের সম্পর্কই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কথা বলতে পারা আর না পারার দ্বন্দ্ব খুব সুন্দর ধরা হয়েছে। স্ক্রিপ্টটা কীভাবে ভাবলেন?
– আমরা বলি না, মুহূর্তে বাঁচো। কিন্তু কীভাবে মুহূর্তে বাঁচব? যখন আমি অর্জুনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি, তখন দেখলাম ওর বাঁচাটা রোজকার বাঁচা, কালকের সূর্য দেখতে পারবে কি না জানে না। ওর আর মেয়ের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা, এবং আমারও তো মেয়েরা আছে, অভিষেকের মেয়ে আছে, এই সব রেফারেন্সগুলো ফিল্ম করার সময় এসেছে। এমনকী প্রযোজক রনি লাহিড়ীর মেয়ে, বা রাইটার রীতেশ শাহ-রও মেয়ে আছে- বাবা-মেয়ের সম্পর্কের গল্পে কোথাও না কোথাও এই সব ছিলই।

অর্জুনের চরিত্র, যিনি ক‌্যানসারের পর ১৯-২০টা অপারেশন, থেরাপি ইত‌্যাদির মধ‌্য দিয়ে গেছেন, এমন চরিত্রে অভিষেক বচ্চনকে কাস্ট করবেন, প্রথম থেকে ঠিক  ছিল?
– যখন স্ক্রিপ্টটা লিখছিলাম, তখন থেকেই অভিষেক আমার মাথায় ছিল। মানে ওর মতন একটা চরিত্র। কারণ আমি ওদের বাড়িতে যেতাম, ও আমাদের শুটিংয়ে চলে আসত। বাবার (অমিতাভ বচ্চন) শুটিংয়েও ও আমাদের সঙ্গে লাঞ্চ করতে চলে আসত। চিনতাম কিন্তু ওকে কাস্ট করব সেভাবে ভাবিনি। ইরফান যদি বেঁচে থাকত ওকেই কাস্ট করে দিতাম শিওর। অভিষেককেও বলেছি সেটা। ও বলেছিল, ‘ঠিক আছে দাদা, তুমি আমাকে ইরফানের রোলটা দিচ্ছ তাহলে।’ বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, তুই কিন্তু ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস।’ বলেছিল ‘আমি চেষ্টা করব’।

বুঝলাম…
– ওর সঙ্গে মেলবোর্নে একটা ডিনারে গিয়েছিলাম। ওখানে ফিল্ম ফেস্টিভ‌্যাল চলছিল। ওই ডেকেছিল, ‘দাদা, তুমি আমার সঙ্গে আজ ডিনার করবে?’ চারঘণ্টা বসে আমরা কথা বলি। সেদিন যখন কথা বলছিল, এতদিন যে অভিষেককে জানতাম, তার বদলে একটা সাধারণ ছেলেকে দেখলাম। এত আন্তরিক, গভীর আবার একইসঙ্গে ভালনারেবল। আলোচনার পরে বললাম, ‘অভিষেক, তোকে আমি একটু জড়িয়ে ধরব?’ বলে উঠল, ‘হ্যাঁ দাদা’। তখনই ওকে বলেছিলাম, ‘পরে আমি তোর কাছে আসব।’ পরে বম্বে এসে ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এই রোলটা করবে কি না। ও রাজি হয়ে গিয়েছিল। ততদিনে আমাদের বন্ধুত্ব অন‌্য মাত্রায় চলে গেছে (হাসি)।

‘পিকু’, ‘অক্টোবর’ বা ‘আই ওয়ান্ট টু টক’ তিনটে ছবিতেই জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই টেনশনটা কি খুব টানে?
– লাইফ অ‌্যান্ড ডেথের মধ্যে যেই মৃত্যুর প্রসঙ্গ আসে আমরা এড়িয়ে চলি। বিবেকানন্দ আর রামকৃষ্ণ যদি পড়ে থাকো, ওঁরা বলেছেন, ডেথ ইজ দ‌্য আলটিমেট ট্রুথ। আমি ওটা নিয়ে স্ট্রাগল করি, কোথাও না কোথাও ওই ভয় থেকে মুক্ত হতে চাই। কিছুটা হয়েওছি। আমি বরং মৃত্যুভাবনা জড়িয়ে নিয়েই চলি। এটা তো হবেই, ডিনাই করতে পারব না। তাকে সঙ্গে নিয়ে চললে হাসপাতালে যেতে অসুবিধা হবে না। ম‌্যাক্সিমাম লোক মৃত্যুকে জড়িয়ে থাকতে চায় না, পালাতে চায়। পালিয়ে লাভ নেই। ছবিটা ওই মেন্টাল স্পেস থেকে বানিয়েছি যে, মৃত্যুকে আমি আলিঙ্গন করব।

ছবিতেও অভিষেকের চরিত্রটা বারবার মৃত্যু সম্ভাবনাকে অতিক্রম করে। মিস্টার বচ্চন ছবিটা দেখেছেন? কেমন প্রতিক্রিয়া?
– দেখেছেন, খুব ভালো লেগেছে ওঁর। উনি বলেছেন, ‘আমি এই ফিল্মটা এক্সপ্লেন করতে পারব না। এই ফিল্মটা আমি এক্সপিরিয়েন্স করতে পেরেছি। এই ফিল্মটা সবার নিজের-নিজের অভিজ্ঞতা হবে। দেখতে দেখতে আমি নিজের কিছু ঘটনায় চলে গেছি।’ যেটা দারুণ (হাসি)। আই অ‌্যাম থ‌্যাঙ্কফুল।

মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে তিনটে ছবি করে ফেলেছেন। অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে এই প্রথম। বাবা-ছেলের মধ্যে কী মিল বা অমিল খুঁজে পেলেন?
– যেটা নিয়ে অনেকে কম বলে, আমি অভিষেক বচ্চনের মধ্যে পেয়েছি জয়া ভাদুড়ীকে। ওর চোখে ওর মাকেই দেখতে পেয়েছি। ওর মধ্যে জয়া ভাদুড়ীর অনেক কিছু রয়েছে। ‘ধন্যি মেয়ে’,‘গুড্ডি’, ‘মহানগর’, ‘কোশিস’-এর জয়া ভাদুড়ীকে দেখেছি। আমি ওঁর ফ‌্যানবয়, সেই এফটিআইআই-এর সময় থেকে। ওই যে বিউটি, এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখ দিয়ে দেখা- ওটা অভিষেকের মধ্যে আছে। আমরা সবসময় ছেলেকে বাবার সঙ্গে তুলনা করি। অফকোর্স বাবা তো আছেই, কিন্তু মা-ও তো গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সেটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। অভিষেক বাবা-মা দুজনেরটাই পেয়েছে। বাবার থেকে নিয়মানুবর্তিতা পেয়েছে, সবাইকে যে ভদ্রতা বা সম্মান করতে হয় সেটাও। ওর ভিতরের সুইটনেস মায়ের।

আর বাবার সঙ্গে অমিল পেলেন?
– না। আমার মনে হয়, অভিষেককে ওর ‘ডিউ’ টা দেওয়া হয়নি। আর এমন তুলনা করা উচিতও নয়। ও একটা আলাদা ইন্ডিভিজুয়াল। ওর নিজের আলাদা এক্সপ্রেশন আছে। নিজের চিন্তাধারা, অভিজ্ঞতা আছে। তাই তুলনা করা ভুল হবে।

শুটিংয়ের সূত্রে তো অনেকদিন অভিষেকের সঙ্গে কাটিয়েছেন। অভিষেক আর ঐশ্বর্যের সম্পর্ক নিয়ে, দূরত্ব নিয়ে যে কথা উঠছে, স্পেকুলেশন চলছে, সেগুলো কি অভিষেক বচ্চনকে অ‌্যাফেক্ট করে মনে হয়? কাছ থেকে দেখে কী মনে হল?
– কাজের সময় কোনও প্রভাব ফেলে না। সবচেয়ে খারাপ লাগে মানুষের নিজের জীবনেই এত সমস‌্যা, অন্যের জীবনে কেন এত ইন্টারেস্ট বুঝতে পারি না! আমি এটা ওকে বলেছি। ও বলেছে, ‘দাদা শুটিং করছি, কাজ করছি, লেট’স ফোকাস দেয়ার।’ তবে ফিল্মের কাজে কোনও কোনও সময় ওর মেয়ের রেফারেন্স আসত, যেহেতু এটা বাবা-মেয়ের ছবি। যখন ও শুট করত বলত, ওর মেয়ের কথা। বলত যে- ‘আমার মেয়েও এরকম স্মার্ট, ও হলেও এরকম প্রশ্ন করত।’ সব মিলিয়ে বলি, গুজব ওকে একদম অ‌্যাফেক্ট করত না। কারণ, রিউমার ইজ রিউমার। আর এটা ওদের ব‌্যক্তিগত বিষয়।

‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর পর আর বাংলা ছবির পরিকল্পনা করেননি। আগামী দিনে হবে?
– (হাসি) এবার অনিন্দ‌্যকে (চট্টোপাধ‌্যায়) বলব, ছেলেগুলো সব বড় হয়ে গেছে, ওদের বড়বেলা নিয়ে ছবি বানাও একটা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement