পর্দায় তাঁর রানি রাসমণি সুপারহিট। কিন্তু এখন আটকে। বাস্তবের সেই রাসমণি হল ছাত্রী দিতিপ্রিয়া রায়। দর্শনে শুভঙ্কর চক্রবর্তী।
‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’। টিআরপিতে এক নম্বর। অথচ এখন সেই সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ। খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই?
খুব খারাপ লাগছে। আসলে এত খেটে শুটিং করি তো। শুধু আমি নই, আমাদের গোটা টিমের জন্য খারাপ লাগছে। ছুটি বা ডে অফ হলে ঠিক ছিল। কিন্তু এটা স্ট্রাইক। জানি না আবার কবে শুটিংয়ে ফিরব। আমি তো ইনস্টাগ্রাম করাও বন্ধ করে দিয়েছি। হোয়াটসঅ্যাপেও সবার একই মেসেজ, ‘রানিকে কবে দেখতে পাব?’ কী বলি? আমি নিজেই জানি না।
জি বাংলার জনপ্রিয় মেগা সিরিয়াল ‘রানি রাসমণি’। রাসমণির মেকআপে এক রকম। আবার বাস্তব জীবনে দিতিপ্রিয়া একেবারে আলাদা। পর্দায় ট্র্যাডিশনাল আর বাস্তবে আল্ট্রা মডার্ন। জিনস–টিশার্ট পরে যখন বেরোও, রাস্তাঘাটে মানুষজন রাসমণি হিসেবে চিনতে পারে তোমাকে?
গত বছর পুজোতেই এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। মায়ের সঙ্গে ম্যাডক্স স্কোয়ার গিয়েছি। সে দিন ওয়েস্টার্ন আউটফিট পরেছিলাম। উবার বুক করছি। হঠাৎ দেখি লোকজন বলাবলি করছে, “আরে ও রাসমণি না, পিছনের হোর্ডিংয়ে দেখছিস না শাড়ি পরে?” আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি একবার আমার দিকে দেখছে আর তার পর আমার পিছনে রানি রাসমণির পুজোর হোর্ডিংয়ের দিকে তাকাচ্ছে। বুঝতে পারলাম ছবির সঙ্গে আমাকে মেলাতে পারছে না। চোখাচোখি হতেই আমার দিকে ওরা এগোচ্ছিল। মা-ও বুঝে গিয়েছে ততক্ষণে। ভাগ্যিস ঠিক সময় উবারটা চলে এসেছিল। আমি আর মা দৌড়ে গাড়িতে উঠে পড়ি।
ইনস্টাগ্রামে তোমার ফলোয়ার্স দেড় লক্ষ! এত কম বয়সে বাঘা বাঘা হিরোইনকে টেক্কা দিয়ে ফেলেছ।
হা হা হা। পুরোটাই কিন্তু আমার মেগার জন্য। লোকজন ফলো করছে তার কারণ সিরিয়ালটা তাদের ভাল লাগছে।

[‘আমার জগৎ সাধারণ মানুষ নিয়ে, যাঁদের কোনও বডিগার্ড নেই’]
তোমার অভিনীত ছবি ‘রাজকাহিনী’র সঙ্গে ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র কিছু মিল আছে। দুটোই পিরিয়ডিক্যাল, নারীবাদী চরিত্র এবং স্বাধীনচেতনার কথা বলে। স্বাধীনতার সমসাময়িক ঘটনা কি তোমাকে বেশি আকৃষ্ট করে?
ভীষণ ভাবে। আমার মনে হয় সে সময়কার মানুষ আরও মানবিক ছিল। অনেকটা সত্যি ছিল তাদের মধ্যে। আর দু’টোতেই নারীবাদ রয়েছে। স্বাধীন হওয়ার কথা বলে হয়েছে। আমি ফেমিনিজমে বিশ্বাস করি। রানি রাসমণি বা বেগমজান চরিত্রগুলো স্বাধীনতার জন্য কী না করেননি? এই সময় এরকম চরিত্র খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।
তোমার বয়স মাত্র ষোলো। রানির চরিত্র যখন করছ, তখন তুমি চল্লিশ। রাসমণির মতো এ রকম বলিষ্ঠ চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ঠিক আগে যখন মেকআপ নাও বা সিঁদুর পরো, মাথায় কী চলে?
এটা না ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। আমি সেটে গিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলি, এপাশ ওপাশ ঘুরতে থাকি। কিন্তু যখন স্ক্রিপ্ট পড়ছি বা মেকআপের সময় বা ‘অ্যাকশন’ শুনছি, ঠিক তখনই একটা অদৃশ্য শক্তি আমার মধ্যে কাজ করতে থাকে। এই শক্তিই আমাকে চালিত করে। ‘অ্যাকশন’ শোনার পর নিজেকে রানি ভাবতে থাকি। দিতিপ্রিয়া ভাবি না।
পুজো-আচ্চা করো?
নিজে কখনও পুজো-আচ্চা করিনি। কিন্তু মা ভবতারিণীকে ভীষণ মানি।
রানি রাসমণি ছিলেন বহুগুণসম্পন্না। দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে রানির কোনও মিল আছে?
শক্তি এবং ফেমিনিজম। রানি বিদ্রোহী ছিলেন, আমিও। অন্যায় দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়।
আর অমিল?
সৌন্দর্যে আমি রানির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারব না। আমি ভীষণ ছটফটে, রানি তেমন ছিলেন না। এর একটা কারণ বোধহয় আমি ষোলো আর উনি চল্লিশ।

[বলিউডে হিট বাঙালি ডাক্তারের সুর, একান্ত আড্ডায় সুরকার অর্কপ্রভ]
রাসমণির বেশে অন্যায় দেখে এক ইংরেজকে চড় মেরেছিলে। সত্যিকারের কাউকে চড় মেরেছ?
আমার হাতে যে চড় খাবে, পাঁচ আঙুলের দাগ বসে যাবে। গ্যারান্টি। একবার পাড়ায় একটা ছেলে একটা কুকুরকে মারছিল। অনেকবার বারণ করেছিলাম। শোনেনি। তখন ওকে চড় মেরেছিলাম। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। তার পর থেকে ও আমার সঙ্গে কথা বলে না। রানি রাসমণির যে হিরো তার সঙ্গে আমার ‘হাই হ্যালো’ সম্পর্ক। একবার ও আড্ডা মারছিল অনেকের সঙ্গে। আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ হাতে দুম করে মেরে দিল। আমিও যখন রিটার্ন করলাম, ওর হাতে আঙুলের দাগ পড়ে গেল। আর ও আমার মায়ের কাছে কমপ্লেন করে দিল।
রাসমণির জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা। সেগুলো ঘোরা হয়েছে?
হুম। জানবাজার। দক্ষিণেশ্বর। তার পর কালীঘাটে স্নানঘর গিয়েছিলাম রিসার্চের সময়। যেখানে উনি শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন।
এক বছরের উপর চলছে তোমার সিরিয়াল। এখনও টিআরপিতে এক বা দু’নম্বরে। কোথাও কি পিছিয়ে পড়ার ভয় কাজ করে?
হ্যাঁ, ভয় কাজ করে। কারণ যে সব সময় ক্লাসে ফার্স্ট হয়, তার সেকেন্ড হওয়ার ভয় থাকে। তেমনই আমারও হয়। ভাল কাজ তো করতেই হয়। কিন্তু সব এফোর্ট দেওয়ার পরেও অনেক সময় পিছিয়ে পড়তে হয়।
এখনকার প্রজন্ম স্ট্রিমিং এন্টারটেনমেন্ট পছন্দ করে। ওয়েব সিরিজ দেখে, শর্ট ফিল্ম দেখে। সেখানে তুমি মেগা সিরিয়ালের মুখ। কখনও মনে হয়নি যে ব্যাপারটা রিগ্রেসিভ?
আমি যেটা করছি সেটা পিরিয়ডিক্যাল। বাকি সবের মধ্যে এই সিরিয়ালকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। কিন্তু গত ছ’মাসে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি অনেক পালটেছে। এখন হিরো চারটে-পাঁচটা বিয়ে করে না। হিরোইনরা কম কাঁদে। (হাসি)

[উত্তমকুমারের খাবার যেত এই দোকান থেকে, আসতেন সুচিত্রা সেনও]