Advertisement
Advertisement

Breaking News

উত্তমকুমারের খাবার যেত এই দোকান থেকে, আসতেন সুচিত্রা সেনও

জানেন রাধুবাবুর চায়ের দোকানের সেই সব দিনের ঐতিহ্য?

Radhu Babu's tea shop: A place frequented by Uttamkumar, Suchitra
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:August 11, 2018 12:49 pm
  • Updated:August 11, 2018 12:56 pm

শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে ঐতিহাসিক সব চায়ের দোকান। সিসিডি-বারিস্তার বাজারেও যা জলজ্যান্ত বেঁচে। এমনই কিছু চায়ের আড্ডার সন্ধানে সম্বিত বসু।

জামায় চা পড়ে গেলে সেই চায়ের দাগ নাকি ওঠে না। কিন্তু চায়ের দোকানের দাগ? যদি পুরো চায়ের দোকানই পড়ে যায়?

Advertisement

প্রশ্ন উঠতেই পারে, আস্ত একটা চায়ের দোকান কি পড়ে যেতে পারে নাকি? পারে তো! স্মৃতির ভিতর একটা চায়ের দোকান পড়ে যেতে পারে। স্মৃতিতে থেকে যেতে পারে তার সাদা কাপডিশ, চায়ের স্বাদ, সেঁকা পাউরুটি। থেকে যেতে পারে বন্ধুর হাসি, শত্রুর আড়চোখ, বান্ধবীর চাহনি। এমন একটা চায়ের দোকানের দাগ কী করেই বা স্মৃতি থেকে উঠে যায়, যাকে ঘিরে হইহই করে উঠেছিল একদল লোক? আড্ডা, কবিতা, গান, সব মিলিয়ে অফুরন্ত বন্ধুত্বচর্চা। জনক রোড। লেক মলের পাশের রাস্তা। রাধুবাবুর চায়ের দোকান- অনেকের স্মৃতিতে পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

রাধুবাবু কে? পুরো নাম রাধাকিশোর দত্ত। কেবলমাত্র এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা নয়, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীও। মা মারা যাওয়ার পর ছোট ছোট ভাইদের নিজের পায়ে খাড়া করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনিই। একই সঙ্গে স্বপ্ন দেখতে থাকেন স্বাধীনতার। ১৯৩০ সাল। চিরুণিতল্লাশি পুলিশের। ক্রমাগত ঠিকানা বদলালেন রাধুবাবু। এসে পড়লেন খাস কলকাতায়। তার পর প্রথমবারের জন্য থিতু হওয়া। শুরু করলেন এই দোকান। আজ যা বাঙালির সকাল-বিকেলের সুড়ুৎয়ের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে।

[‘আমার মতো বুড়ো নয়, রাজনীতিতে তরুণ রক্ত দরকার’]

একটা সময় এ দোকানে পাওয়া যেত হরিণের মাংসও। তখন কড়াকড়ি ছিল না। কোনও আইনও লাগু হয়নি এ বিষয়ে। পরে কড়াকড়ি হতে ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ হল না। রাজ কাপুর কলকাতায় এসেছেন। উঠেছেন গ্র‌্যান্ড হোটেলে। কিন্তু কী খাবার খাবেন? কোথা থেকে? খাবার গিয়েছিল এই রাধুবাবু থেকেই!

রহস্যময় একটা গাড়ি এসে থামত মাঝেমাঝেই। কেউ নামত না। দোকান থেকে খাবার চলে যেত গাড়ির ভিতরে। হয়তো কাপে করে চা-ও। জানলার কাচ কোনও দিন নামেনি। সময়টা বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ। উত্তম-সুচিত্রা জুটি তখন মধ্যগগনে। রাধুবাবুর দোকানের সহৃদয় দেখভালকারী সোমনাথদা জানালেন, গাড়ির ভিতরে কোনও পুরুষ ছিলেন না, ছিলেন এক অপূর্ব মহিলা। সুচিত্রা সেন।

সুচিত্রা আছেন, উত্তম নেই- এমন উদ্ভট ছবি অন্তত রাধুবাবুর নেই। দোকানের একেবারে উলটোদিকেই বাড়ি পরিচালক আলো সরকারের। চলছিল ‘ছোটি সি মুলাকাত’-এর শুটিং। খাস উত্তমকুমারের খাবার যেত এই রাধুবাবুর কাছ থেকেই।

অল্প দূরেই টালিগঞ্জ। স্টুডিওপাড়া। কী আর ছিল তখন শিয়াল-কুকুর ছাড়া? তখনও কলকাতায় বৃষ্টির ফোঁটার দূরত্বে রেস্তেরাঁ গড়ে ওঠেনি। ফলে বিখ্যাত কাটলেট ও কোর্মা বড় ডেকচি করে নিয়ে চলে যাওয়া হত এই দোকান থেকেই। এক সময় বাপ্পি লাহিড়ীর হিট গান ছিল: আমার ভাল লাগে জনক রোডের রাধুবাবুর চা। এখনও সে গান ইউটিউবে রয়েছে। চাইলে শুনে নিতেই পারেন।

 

আটের দশকে দোকানের কাছেই একটা রকে বসে আড্ডা মারতেন বসন্ত চৌধুরী, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায়শই আসতেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুখেন দাস, শ্যামল মিত্র।

[কেন বলিউডে থেকেও আলাদা কাজল? উত্তর দিলেন ঋদ্ধি]

এ তো গেল পুরনো দিন! এখন এখানেই তো দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খান কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। প্রায়ই আসেন সোহিনী সরকার। আসেন শ্রীজাত, বেশির ভাগ দিনই তাঁর সঙ্গে জয় সরকার, লোপামুদ্রা। আসেন অরিন্দম শীল, শ্রীকান্ত মোহতা। যে পরিশীলিত আড্ডার স্রোত তৈরি হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা এখনও চলছে একই ভাবে। তা হলে সিসিডি কিংবা বারিস্তা-র বাজারে দৈনিক কমবেশি ৫০০ কাপ চা নিয়েও লড়ে নেওয়া যায়! বিকেলে মাটন বা চিকেন বেশির ভাগ দিন উবে যায় সাড়ে ছ’টার ভিতরই। সুতরাং তাড়ায় থাকুন!

সকালে দোকান খোলা ৬টা থেকে বেলা ১০টা। বিকেলে ৩:৩০ থেকে রাত সাড়ে ৮টা। সকালবেলার মেনু অমলেট, ডিমের পোচ, চা, বিস্কুট। বিকেলের খাবারে মাটন স্টু, মাটন কোর্মা, চিকেন স্টু- এগুলো কিন্তু ফুরিয়ে যায়। সবার আগে ফুরিয়ে যায় মাটন স্টু। হালকা খাবারগুলোই ফুরিয়ে যায় আগে আগে। সুতরাং ননভেজ খেতে হলে আগেভাগেই চলে আসা ভাল। এসে না হয় খানিক গল্পগুজব, হইচই। আর পেটের ইঁদুরগুলো খানিক উতলা হোক। দরকারে ডনবৈঠক দিক, সিক্স-প্যাক বানিয়ে ফেলুক।

‘চায়ে চুমুক দিলে বন্ধুর মুখ মনে পড়ে।’ শুনেছিলাম এই দোকানে দাঁড়িয়েই। চা খাচ্ছিলেন অশীতিপর এক ভদ্রলোক। রোগাটে। সঙ্গে যিনি, তাঁকে বলেছিলেন এ কথা। বন্ধুটি হয়তো আছেন বহাল তবিয়তেই, হয়তো বা নেই। কিন্তু প্রতিটা সুখ-সুড়ুৎ তাঁর বন্ধুর মুখ মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। এখানেই হয়তো তাঁরা চা খেতেন। সেই যুবক বয়সের চামড়া নেই। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। চুল সাদা। তবু চায়ের স্বাদ যেন টাইম ট্রাভেল করাচ্ছে। প্রতিটা চুমুকের পর কলকাতা যেন পিছিয়ে যাচ্ছে ১০ বছর করে। সাদা কাপডিশে। তিনি ফিরে যাচ্ছেন ধূসর যুবকের পাণ্ডুলিপিতে।

পুনশ্চ: পিটার বিকসেলের একটা গল্পে পড়েছিলাম ফ্রাউ ব্লুম নামে এক ভদ্রমহিলার কথা। তিনি তঁার

গয়লার সঙ্গে দেখা করতে চান। রোজ ভাবেন সকালে উঠবেন, কিন্তু পারেননি। কোনও দিনই। আপনি যদি ‘ফ্রাউ ব্লুম’ হন, তা হলে সকালে না পৌঁছালেও নিদেনপক্ষে বিকেলে পৌঁছে যান। ৮এ জনক রোড আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

[‘কলকাতার পার্টিতে ইমরান খান মানেই বিরিয়ানি আর সুন্দরীরা’]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ