Advertisement
Advertisement

Breaking News

উত্তমলোকে আজ খোলা বেণুদির রান্নাঘর

যেটুকু অধরা, সেই অতৃপ্তির ভিতরেই তো বেঁচে থাকেন সুপ্রিয়া দেবী।

Revealing the 'recipe' between Uttam-Supriya's eternal relation
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 26, 2018 8:32 am
  • Updated:July 13, 2018 4:25 pm

সরোজ দরবার: 

সুচিত্রা না সুপ্রিয়া, ওই জিজ্ঞাসে কোনজন

Advertisement

দর্শক বলো, কেন একা উত্তমকুমার

Advertisement

শুধু শুধু এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন,

ভাল কি তিনি একাই বেসেছেন?

এক এবং অবধারিত উত্তর, না। পর্দায় রূপকথার রাজকুমার যতবার তাঁদের প্রেমে পড়েছেন, ততবারই কূল হারিয়েছে বাঙালি যুবক। ওদিকে সুচিত্রা, এদিকে সুপ্রিয়া। বাঙালির পরিণত প্রেমপত্রের এপাতা যদি ভরে ওঠে একজনের জন্য অনুরাগে, তবে অপর পাতা ফুটে উঠেছে অন্যজনের সংরাগে। ভাল তো একা উত্তমকুমার বাসেননি। প্রতিবার প্রতি প্রেমের মুহূর্তে তাঁদের ভাল বেসেছেন বাঙালি পুরুষ। দর্পিতা, মানিনী সুচিত্রা যদি বাংলার সিনে পদাবলীতে বিদ্যাপতির রাধিকা হন, তবে সুপ্রিয়া দেবী আমাদের বনপলাশীর পদাবলীর পলাশকলি। তিনি সেই অবধারিত প্রণয়পাত্র, যে গেলাসে চুমুক দিয়ে কলঙ্কিত হতেও দ্বিধা থাকে না। তাঁর কম্পিত অধরেই তো থাকত সেই আহ্বান। তাঁর দ্বিধাজড়িত কণ্ঠেই তো ছিল সেই হাতছানি। বিনা আমন্ত্রণে চোখের কোণে যে অবুঝ হাসি ফুটত তার মর্মোদ্ধারেই তো কেটে যায় কয়েক দশক। ফলত বাঙালির এক একমাত্র রাজকুমার যে তাঁর কাছেই খেই হারাবেন এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!

উত্তম অধ্যায়ের অবসান, সুপ্রিয়া দেবীর প্রয়াণে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী ]

supriya-devi-meghe-dhaka-tara-grab-wb

আজ কল্পনা করতে দোষ নেই, কোনও এক অলৌকিক আলোয় বসেছে বেণুদির রান্নাঘর। পছন্দের খাতাটি (যদি ধরে নিই বিজ্ঞাপন সব সত্যি কথা বলে না) খুলে মহানায়কের পছন্দের পদটি রাঁধতে বসেছেন সুপ্রিয়া দেবী। অপূর্ব তাঁর রান্নার হাত। আজ বহুদিন পর তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে বসেছেন উত্তম। সুবাসে ম ম করছে স্বর্গীয় সেই হেঁশেল। পরিচিত দু-একজন হয়তো দেখা করতে এসেছেন। উত্তমের সঙ্গে চলছে টুকটাক কথাবার্তা। আর অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এসে তিনি, সুপ্রিয়া দেবী, পরিচিত কোনও বন্ধু সাংবাদিককে হয়তো বলছেন, দুপুরের খাবারটা খেয়ে যেতে। সে নিমন্ত্রণ ফেলবে কার সাধ্য! তিনি তো শুধু কাজলনয়না হরিণী নন। তিনি তো শুধু পর্দার নায়িকা নন। তিনি বাঙালির সেনসুয়াস স্বপ্নের সহজ পাঠ। প্রথম আলো। নারীর আবেদন আর আভিজাত্য চেনায় বহু বাঙালির হাতেখড়ি তো তাঁর সদর্প উপস্থিতিতেই। এবং আজকের এই অলৌকিক মেহফিলে এসেছেন রমা, সুচিত্রা সেনও। আসবেন নাই-বা কেন! কতদিন পরে দেখা হল। আর কী আশ্চর্য, এসেছেন গৌরী দেবীও! নাহ, পৃথিবীর ধূলিধূসরতা এই সব মুহূর্তকে স্পর্শ করে না। মিথ্যে হয় সকল মামলা। এ আদালতে কোনও বাদি, বিবাদী নেই। বিচারক সময় সকলকেই তো দিয়েছে অমরত্বের ছাড়পত্র।

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন:

aa-Cover-59hjflu9h9hjst10jq5cqc5ca2-20180126095941.Medi

বস্তুত সেদিন বাংলা ছবির ভাঁড়ারে উপকরণ বেশি ছিল না। নিও রিয়ালিজমের আলো ক্রমে আসিতেছে। সেদিন ঋত্বিক ঘটক সঠিক চিনেছিলেন সুপ্রিয়া চৌধুরীকে। গাছের আড়াল থেকে এ ধুলোর পৃথিবীতে পা ফেলে যিনি এগিয়ে আসেন, তিনি তো কোনও মানবী নন। শাপভ্রষ্টা দেবী তিনি, যিনি এসেছিলেন ভাবনার ভরকেন্দ্রগুলিকে নড়িয়ে দিয়ে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে। ফলত বাঙালির সিনে সাধনা তাঁর কাছেই খুঁজে পায় কোমল গান্ধার। আবার কোন অলৌকিক ক্ষমতায় তিনি বাঙালি যুবকের বুকের ফ্রেমে আগলে রাখা সোফিয়া লোরেনের ছবিটিকেও বদলে দেন। রূপ আর আবেদনের বিদ্যুতে স্পৃষ্ট যুবক ঠাহর করতে পারে না, ঠিক কবে সে সুপ্রিয়াদেবীর ছবিই আঁকড়ে ধরেছে। সময় বয়ে গিয়েছে। সে ফ্রেমটিকে সোনার জলে বাঁধিয়ে রেখেছে ইতিহাস।

প্রয়াত বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী ]

সামান্য উপকরণেই সেদিন সু্প্রিয়া দেবী দেখিয়ে দিয়েছিলেন কী করে আসামান্য মুহূর্তের জন্ম দিতে হয়। কোনও কথা না বলে স্রেফ চোখের কটাক্ষে কী করে প্রেমের পদ্য লিখতে হয়, তা তাঁর দিকে না তাকিয়ে আমরা বুঝতাম কী করে? উত্তম হতে পারেন সন্ন্যাসী রাজা, কিন্তু আমরা কী করে ভুলি পুরুষতন্ত্রের মুখে তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দেওয়া সুপ্রিয়া দেবীর সেই কঠোর অথচ বিষাদবধুর মূর্তিটিকে। সেই নেশাচ্ছন্ন কণ্ঠস্বরে যে কী কাকুতি লুকিয়ে ছিল তা বাঙালি দর্শকমাত্রই জানেন। বা লালপাথরের সেই দর্পিতা নারীকে? হাতে চাবুক ওঠে উত্তমকুমারের। আর মুখে হাত চাপা দেন সুপ্রিয়া দেবী। বাঙালি জানে, সে এক মুখ লুকোবার মতো মুহূর্তই বটে। বা মনে করি, ‘শুন বরনারী’র সেই ট্রেনযাত্রা। সে তো এক অপূর্ব লিরিক। ঘরেতে ভ্রমর এলে কীভাবে যে মন গুনগুনিয়ে ওঠে সে তো কণ্ঠে ধরেছিলেন সুমিত্রা সেন। কিন্তু শরীরের প্রতিটি তন্ত্রীতে কীভাবে আনন্দের হিল্লোল ছড়িয়ে যায়, তা কী করে বুঝতাম সুপ্রিয়া দেবী না থাকলে! কী করে বুঝতাম সামান্য ট্রেনের সেটে ক্লোজ আপে কীভাবে কবিতা লেখা হয়! জহর রায় তখন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চিত্রনাট্য মেনে বকবক করছেন। আর সুপ্রিয়া দেবী মুখে টেনে এনেছেন গোধূলির আলো। সেই বিষাদ-অনুরাগ-সংরাগে ডুবে থেকে বাঙালি হয়তো ভুলেই গিয়েছিল, যে তাঁরও চলে যাওয়ার সময় এসেছে। গোধূলির মেঘেই তো জড়িয়ে থাকে আলোর সোনা। সে কথা যিনি শোনাতে পারেন তিনিই তো বাঙালির সূর্যশিখা। বাঙালি তাঁর অস্তরাগের ছবি আঁকেনি কোনওদিন। আজও তার হৃদয়ের শাখায় দুলছে রাঙা পলাশকলি। বসন্ত আসতে আরও একটু দেরি। সুপ্রিয়া দেবী চলে গেলেন। কোনও এক অলৌকিক স্বর্গে বসন্ত আনতেই হয়তো তাঁর যাওয়া। বড় সাধ হয় সে দৃশ্য দেখতে। কিন্তু নাহ, কোনও পরিচালকই বোধহয় তা ধরে রাখতে ক্যামেরার পিছনে চোখ রাখছেন। আসলে কিছু মুহূর্ত ধরার থেকে অধরাই থেকে যায় বেশি। যেটুকু অধরা, সেই অতৃপ্তির ভিতরেই তো বেঁচে থাকেন সুপ্রিয়া দেবী।

প্রসেনজিতের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ