Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2024

বদলেছে পুজো, তবু মাতৃ আরাধনার চিরন্তন ধারা যেন বহমান থাকে

মনে রাখতে হবে পরম্পরা ভ্রষ্ট হয়ে গেলেই সব কিছু কীটদষ্ট।

Durga Puja 2024: An write up on legacy of Durga Puja
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 3, 2024 6:32 pm
  • Updated:October 3, 2024 7:42 pm  

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়: দুর্গাপুজো আসে, দুর্গাপুজো যায়। কিন্তু যে দুর্গাপুজো চলে গিয়েছে, তা আর ফিরে আসবে না। সেই কাশফুল, দেদার ক্যাপ ফাটানো, সেই ছিটের জামা, সেই আদিগন্ত মাঠ ধরে দৌড়… সব কেমন বদলে গেল। এখন বাড়ির পর বাড়ি, কোথাও সামান্যতম ফাঁকটুকু নেই। লুকোচুরি খেলতে হলে লুকোতে হবে কোনও গ্যারেজে। কারণ গাড়িবারান্দাগুলো সব উধাও হয়ে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে দুর্গাপ্রতিমাও। সেই মা, যাকে দেখলেই ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে ইচ্ছে করত, তার বদলে এক্সপেরিমেন্টের নামে হনলুলুর হকি প্লেয়ার কিংবা চেকোস্লোভাকিয়ার জিমন্যাস্টের মূর্তি এসে বসেছে। সেটাই নাকি শিল্প!

উৎসব প্রাধান্যের কারণে দুর্গার থেকে কালী এবং দশ মহাবিদ্যা সাধনার ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য লাভ করেছে আমরা জানি। কিন্তু দুর্গাপুজো থেকেই তো দুর্গোৎসব। কোথায় গেল সেই দুর্গাপুজো? পুজো ব্যাপারটাই যেন সবচেয়ে পিছনে। আর বাকি সব কিছু রমরম করে চলছে।
মনে হয় না আমরা যারা বিজ্ঞাপনের দ্বারা চালিত হয়ে পুজো আসতে না আসতেই প্রতিদিন ‘মহা’ খুঁজছি, আমরা কি একবারও ভেবে দেখব না যে স্নান, যজ্ঞ, ষোলোটি নিবেদন এবং বলি ছাড়া কোনও পুজো ‘মহা’ হয় না? মহাষ্টমী, মহানবমীতে কেন মন ভরে না আমাদের? মহাচতুর্থী, মহাপঞ্চমী সমস্ত কিছু দরকার হবে? পুজোটা যদি আড়ম্বর দেখানোর একটা মহড়া হয়ে থাকে, তাহলে তা কেমন পুজো?

Advertisement

এবারের পুজোর(Durga Puja 2024) আবহ অন্য। প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবাদের মধ্যেও কোথাও কোথাও যেন বেনোজল ঢুকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য যতটা বিচার পাওয়া, তার চেয়ে বেশি মহালয়া দখল করা, অষ্টমী দখল করা… কেন? যে ডাক্তারবাবু নিজেদের বাড়িতে পুজো করতেন, আগের বছরও করেছেন, বেঁচে থাকলে এবছরও করতেন, তাঁর নৃশংস মৃত্যুর প্রতিশোধ কি পুজো বন্ধ করে নিতে হবে? এই উত্তরগুলো কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্নগুলো খুব জরুরি।

তবে তার মধ্যে বেশিক্ষণ থাকতেও ইচ্ছে করে না। মন চলে যেতে চায় সেই শৈশবের দিনে যখন কার খিচুড়িতে একটা আলু বেশি পড়ল তাই নিয়েও বুক চিনচিন করে উঠত। আবার নিজেরা যখন পরিবেশন করার দায়িত্ব পেতাম, ওপাড়ার পনিটেল করা মেয়েটার পাতে এক হাতা বেশি খিচুড়িও পড়ে যেত। এসব ছোট ছোট ব্যাপারে আমাদের এত বিপুল আনন্দ ছিল যে আজকের সব মোবাইলে মুখ গোঁজা বাচ্চাদের দেখে একটু অবাকই লাগে। কষ্টও হয়। মনে হয় ওরা কত কিছু হারাল। কত কিছু পেল না। পুজোয় যখন বৃষ্টি হত, দেখতাম মাটি শুকোচ্ছে। সেই মাটি শোকানোর গন্ধ নিতাম। ভাবতাম এই আশ্চর্য সোঁদা গন্ধটা কোথা থেকে আসছে? বৃষ্টির ভেতর থেকে নাকি মাটির ভিতর থেকে? আজকের বাচ্চারা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তেকোনা-চৌকোনা আকাশ দেখে। ওরা জীবনের বিশালতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগই পেল না হয়তো।

তবু ভয় পেলে হবে না। দমে গেলেও হবে না। আজকের পুজোকে গতকালের পুজোয় রূপান্তরিত করা যাবে না। কিন্তু একটা বহতা ধারা যেন থাকে, সেটুকু দেখতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে সংস্কার নষ্ট হয়ে গেলেই ঐতিহ্য নষ্ট। ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে গেলেই পরম্পরা নষ্ট। আর পরম্পরা ভ্রষ্ট হয়ে গেলেই সব কিছু কীটদষ্ট। তাই বাপ-পিতেমো যা করে এসেছেন সেভাবেই বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই এই পুজোকে বহন করে নিয়ে যাওয়া। কৃত্তিবাসের রামায়ণে রামের দুর্গাপুজোর বিবরণ পড়তে পড়তে মনে হয় এ তো বাঙালি ঘরের কেউ। পুজোর দিনগুলি এমনই। মহাকাব্যের চরিত্রও হয়ে ওঠে ঘরের কেউ। কারও আগমনে আমরা বিরক্ত হই না। কেউ বহিরাগত নয়। সবাই আমাদেরই। সবাই আমাদের সঙ্গেই যুক্ত। যার বাড়িতে কেউ মারা গিয়েছে, তার পুজোও যেন কালাশৌচে না কাটে। অঞ্জলি না দিতে পারুক, মণ্ডপে যেন সে এসে বসে। ওই চারদিনের খাওয়া দাওয়া, সেটা যেন পাড়ার সবাই একসঙ্গে বসে করতে পারে। কোনও নীতি পুলিশগিরি নয়, এই দিনগুলোয় আমরা যেন পরস্পরের জীবনের খোঁজ নিতে পারি। অন্যকে খাইয়ে তার পর নিজের পাতে বেড়ে নিতে পারি প্রসাদ। আর মা দুর্গাকে ভাসান দেওয়ার সময় যে অস্ত্রটা আমার হাতে আসবে কিংবা চাঁদমালা… তা হাতে নিয়ে যেন ভবিষ্যতের সুখস্বপ্ন এবং প্রতিরোধ দুটোকেই একসঙ্গে রচনা করতে পারি। এই হোক এবারের পুজোর মন্ত্র।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement