Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2024

পুজো এবং কমিক্স এই দুই শব্দ তরতাজা অনুভূতির ছোঁয়া নিয়ে আসে

শারদ সংখ্যায় কমিক্স লেখার ক্ষেত্রে আনন্দের চেয়ে এক ধরনের ভয় কাজ করে।

Durga Puja 2024: Relationship between Durga Puja and Comics
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 8, 2024 8:31 pm
  • Updated:October 9, 2024 1:32 pm  

সুযোগ বন্দ্যোপাধ্য়ায়: আমরা যারা নয়ের দশকে বড় হয়েছি তারা জানি যে মহালয়া থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত প্রাক পুজো সময়ে আমরা ব্যস্ত থাকতাম ক্যাপ বন্দুক, গুলি রোদ্দুরে দেওয়ার কাজে। কখনও বন্দুক হাতে হয়ে উঠতাম রিপ কার্বি, জেমস বন্ড বা কখনও টিনটিন বা ফেলুদা, কারণ তখন পূজাবার্ষিকীর পাতায় পাতায় থাকত নানান মেজাজের কার্টুন এবং কমিক্স। তাই পুজোর সঙ্গে কিন্তু নানান কার্টুন চরিত্র এবং তাদের নানা গল্প আমাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী একটা ছাপ রেখে যেত। তাই পুজোর কার্টুনের প্রসঙ্গ উঠলেই সেই অনবদ্য কমিক্সগুলোর কথা মনে পড়ে। গ্রাফিক নভেল বলে এই বিশেষ নামটি অবশ্য নয়ে দশকে বিশেষ শোনা যেত না। কিন্তু বেশ কিছু সামাজিক গল্প কমিক্সের আকারে আমরা পেতাম পুজোবার্ষিকীর পাতায়, যা আদতে বিষয়ের নিরিখে গ্রাফিক নভেল। মনে আছে একবার এক বদমেজাজি বক্সারের গল্প পড়েছিলাম, যিনি তাঁর রগচটা মেজাজ আর খারাপ ব্যবহারের জন্যে একসময় খেলার জগৎ থেকে বহিস্কৃত হন।

তার পর কীভাবে ভাগ্যের ফেরে নিজের চেহারা পালটে, নাম পালটে, নিজের খারাপ স্বভাব ত্যাগ করে এক অমানুষিক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি আবার খেলার মূল স্রোতে ফিরে এলেন এবং অগণিত মানুষের ভালোবাসা পেলেন- তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে কমিক্সের গল্প। গল্প বলা এবং অলংকরণ এত অপূর্ব ছিল যে আজও মনে গেঁথে আছে। এ তো গেল ওয়াল্ট ডিজনির তৈরি বিদেশি কমিক্স, এর সঙ্গে ছিল আমাদের দেশীয় ম্যাজিক বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে প্রমুখ চরিত্ররা। পুজোসংখ্যার বৃত্তে কমিক্স কিন্তু মাধ্যম হিসেবে রাজত্ব করত দিগ্বিজয়ীর মতো। তবে সেই রাজত্ব কিন্তু বিস্তারিত হল না অর্থাৎ আমবাঙালি কমিক্সকে সিরিয়াস মাধ্যম হিসেবে কোনওদিন পাত্তা দিল না। মনে রাখবেন আমি কিন্তু এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের কথা বলছি। আমাদের কলকাতায় কয়েকজন হাতে গোনা প্রকাশকের কথা বাদ দিলে কমিক্স বা গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করার আগ্রহ বিশেষ দেখা যায় না। তাই কমিক্স মূলত পুজোসংখ্যাকেন্দ্রিক হয়েই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখল।

Advertisement

আমি নিজে যখন কমিক্স তৈরি করতে গেছি তখন দেখেছি যে মাসিক সংখ্যার চেয়ে পূজাবার্ষিকীতে প্রকাশিত হলে অনেক বেশি লোকের কাছে পৌঁছনো যায়, তা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হয়। যে জনপদে, যে সংস্কৃতিতে দুর্গাপুজো নেই তাঁরা চেষ্টা করেও বুঝবেন না শারদ সংখ্যায় লেখা প্রকাশ কিংবা পাঠ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে কি যে আনন্দ জড়িয়ে আছে। আজকাল শারদ সংখ্যায় কমিক্স লেখার ক্ষেত্রে আনন্দের চেয়ে এক ধরনের ভয় কাজ করে, ঠিক যেমনটা হত মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে। গল্পের সংলাপ, অলংকরণ- সমস্ত কিছু পাঠকদের আশা পূরণ করতে পারবে তো? একটি চরিত্র নিয়ে বছরের পর বছর লেখা- কোথাও একঘেয়েমি তৈরি হচ্ছে না তো? অলংকরণের মধ্যে কি নতুনত্ব আনা যায়? এমন সব চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে।

ভয়, অনিশ্চয়তা তো শিল্পীদের থাকবেই, তা সত্ত্বেও পুজো এবং কমিক্স এই দুটো শব্দ আমার জীবনে এবং মননে এক ফুরফুরে তরতাজা অনুভূতির ছোঁয়া নিয়ে আসে যা আমি লেখক এবং সর্বোপরি পাঠক হিসেবে আমৃত্যু হয়তো উদযাপন করে যাব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement