রূপায়ন গঙ্গোপাধ্যায়: ‘খোয়া খোয়া চাঁদ খিলা আসমান’, ‘বাহারো ফুল বরসাও’ থেকে ‘লিখে জো খত তুঝে’, কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী মহম্মদ রফি (Mohammed Rafi) সঙ্গীতজগতে চার দশক সময়কালে ছাব্বিশ হাজারেরও বেশি সিনেমার গানে নেপথ্য গায়ক বা প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। পার্থিব জগৎকে আলবিদা জানিয়ে সুরলোকে পাড়ি দিলেও তাঁর কণ্ঠের জাদু সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে আজও পাকাপাকিভাবে জায়গা করে আছে। জন্মশতবর্ষের (100 Years’s of Mohammed Rafi) আলোয় সুরসম্রাট মহম্মদ রফিকে নিয়ে সারা দেশ তথা বিশ্বজুড়ে নানা অনুষ্ঠান চলছে। আর বাবার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষেই কলকাতায় গান গাইতে আসছেন মহম্মদ রফির ছেলে শাহিদ রফি।
শোনাবেন রফি সাহেবের গাওয়া সেই সব সাড়া জাগানো গান। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার শরৎ সদনে শাহিদ রফির ‘লাইভ কনসার্ট’। এই সঙ্গীতানুষ্ঠানকে ঘিরে হাওড়ার সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে। মহম্মদ রফির ১০০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘আজকের হাওড়া’ পত্রিকা। পত্রিকার সম্পাদক তথা হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট সাংস্কৃতিক উন্নয়ন মঞ্চের সভাপতি শ্রীকান্ত ঘোষের উদ্যোগে এই সঙ্গীতানুষ্ঠান হতে চলেছে। সঙ্গীতপ্রেমী শ্রীকান্তর কথায়, “কিংবদন্তী শিল্পী মহম্মদ রফিকে শ্রদ্ধা জানাতে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম রফি সাহেবের সুযোগ্য পুত্র সংগীত শিল্পী শাহিদ রফিকে নিয়ে এসে তাঁর কণ্ঠে শুনব তাঁর বাবার গাওয়া গান। সেই মতো আমরা মুম্বইতে গিয়ে শাহিদকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসি। উনি এককথায় আসতে রাজি হয়ে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন।” এখন দুবাইয়ে আছেন শাহিদ। রবিবার ফোনে শুধু এটুকুই জানালেন, “আমি খুব উৎফুল্ল যে, বাবার জন্মশতবর্ষে বাংলায় গান গাইতে যাব। যাঁরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।”
মহম্মদ রফির কনিষ্ঠপুত্র শাহিদ রফিও দুর্দান্ত গায়ক। শাহিদ তাঁর বাবার উপর ‘মহম্মদ রফি ভয়েস অফ আ নেশন’ নামে একটি বইও লিখেছেন। তিনিও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছেন। বেশ কয়েকটি পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তাই সঙ্গীতপ্রেমীরা বলে থাকেন, মহম্মদ রফি সাহেবের সুযোগ্য পুত্র শাহিদ। প্রসঙ্গত, মহম্মদ রফি ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম সেরা প্লে ব্যাক গায়ক। সঙ্গীতকে তিনি যে শুধু জীবিকা নয়, জীবন দিয়ে ভালোবেসে ছিলেন তার প্রমাণ লন্ডনে অ্যালবার্ট হলে প্রোগ্রাম চলাকালীন ‘ইয়ে দুনিয়া রাখোয়ালে’ গানটি গাওয়ার সময় রফি সাহেবের গলা চিরে রক্ত বেরিয়ে আসে। এ সবই ইতিহাস।
১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর, পাঞ্জাবে তাঁর জন্ম। গজল, কাওয়ালি, ভজন, ধ্রুপদী, দেশাত্মবোধক-সহ বিভিন্ন গোত্রের গানে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। সঙ্গীত জীবনে অসংখ্য পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছিলেন রফি সাহেব। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসাবে জাতীয় পদক, ছয়বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার। এছাড়াও, ১৯৬৭ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেন। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যায় ভুগে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। জানা যায়, তাঁর শেষ গানটি ছিল ‘শ্যাম ফির কিউ উদাস হ্যায় দোস্ত’। এই গানটি রেকর্ড করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন তিনি। মহম্মদ রফির চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়েছিল সঙ্গীত জগতের এক বর্ণময় অধ্যায়। আর সঙ্গীতপ্রেমী সকল মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া সেই মহম্মদ রফির গান এবার শোনা যাবে তাঁর ছেলে শাহিদের গলায়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে হাওড়া শহরে। দেওয়া হচ্ছে ফ্রি টিকিটও। ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার বিকেলে সঙ্গীতানুষ্ঠান। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন সেখানে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.