Advertisement
Advertisement
Banaspatir Chhaya

‘কলকাতা টুইস্ট’ দলের নতুন নাটক ‘বনস্পতির ছায়া’য় দেবশংকর একাই একশো

অস্কারজয়ী অ্যান্টনি হপকিনসের 'দ্য ফাদার'-এর সিনেমার যোগ রয়েছে এই নাটকে।

Review of Kolkata Twist's new play Banaspatir Chhaya, Debshankar Haldar as lead
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:November 25, 2024 4:54 pm
  • Updated:November 25, 2024 4:54 pm  

নির্মল ধর: কলকাতার নাট্য মানচিত্রে নতুন দল ‘কলকাতা টুইস্ট’। তাদের প্রথম প্রযোজনা ‘বনস্পতির ছায়া’। প্রথম অভিনয় হল গত ১০ নভেম্বর দুপুরে অ্যাকাডেমি মঞ্চে। শনিবারের আলসে দুপুরেও অ্যাকাডেমির দোতলা খুলতে হয়েছিল – এটা যেকোনও নতুন দলের প্রথম প্রযোজনার প্রথম শোয়ে বিরল ঘটনা বলা যায়। কেন এমনটি ঘটল- তার প্রথম ও প্রধান কারণ যদি হয় এই মুহূর্তে বাংলা মঞ্চের অন্যতম সেরা অভিনেতা দেবশংকর হালদারের উপস্থিতি, তাহলে দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই নাটক এবং আমেরিকান অভিনেতা অ্যান্টনি হপকিনস। কারণ অ্যান্টনি যে ‘দ্য ফাদার’ সিনেমায় অভিনয় করে অস্কার জিতে নিয়েছিলেন। সেই সিনেমা ফ্লোরিয়ান জেলারের লেখা ‘লা পিয়ের’ নাটক অবলম্বনে তৈরি। যা ‘কলকাতা টুইস্ট’ প্রযোজিত নাটক ‘বনস্পতির ছায়া’র ভিত।

Banaspatir-Chhaya-3

Advertisement

রতনকুমার দাশের ভাবান্তরে, বঙ্গীকরণে নাটকটির নামের বদল হয়েছে। তবে বাবার চরিত্রে তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। যাঁরা ইংরেজি ছবিটি দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন মুখ্য চরিত্রে মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন দেবশংকর হালদার। ফলে শনিবারের বারবেলাতেও অ্যাকাডেমির দর্শকাসন প্রায় পূর্ণই ছিল বলা যায়। যাই হোক, এবার আসা যাক নাটকের কথায়। বয়স্ক আনন্দময় সেন (দেবশংকর) ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। অতীত ও বর্তমান তাঁর কাছে একই সময় হয়ে ধরা দেয়। তাঁকে একা ফেলে রেখে একমাত্র মেয়ে অনু (শ্রেয়া ভট্টাচার্য) বিদেশ যেতে পারছে না। তাই অনু ও তাঁর পুরুষবন্ধু পিয়াল (গৌতম চট্টোপাধ্যায়) কীভাবে বাবাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে এক হাসপাতালের আশ্রয়ে রেখে আসার পরিকল্পনা করে এবং সফলও হয় – সেটা নিয়েই মাত্র দেড় ঘণ্টার প্রযোজনা এই ‘বনস্পতির ছায়া।’

Banaspatir-Chhaya-4

প্রায় সর্বক্ষণ মঞ্চ জুড়ে রয়েছেন দেবশংকর। বিস্মরণের গোলকধাঁধায় নিজের অতীত-বর্তমান হারিয়ে মেয়ে ও মেয়ের বন্ধুর কাছে বাবা এক বোঝা বিশেষ! তাঁকে নানাভাবে সত্যিমিথ্যের জটিলতায় আটকে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়াটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। মূল নাটকটিকে রতনকুমার দাশ অনুসরণ করেছেন ঠিকই, কিন্তু বঙ্গীকরণে বাঙালিয়ানার মেজাজ ও পরিবেশ তৈরিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজের মেয়েকে নিয়ে বাবার ইলিউশন তৈরি কিংবা পিয়ালের কোনও কোনও সময়ে পরিচয় গোপন করে সাধারণ মানুষ হয়ে পরার ব্যাপারটা বাবার মানসিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সুন্দর মিলিয়ে দিতে পেরেছেন। ওই যে একটু আগেই উল্লেখ করলাম, স্মৃতিভ্রংশ হয়ে যাওয়া বাবার ভূমিকায় দেবশংকরকে দেখার আশা নিয়েই ভাতঘুমের বিছানা ছেড়ে অ্যাকাডেমিতে হাজির হওয়া। সেই আশা পূরণ হয়েছে। অভিনেতা প্রতিদান হিসেবে হাততালিও পেয়েছেন। তবে হ্যাঁ, তাঁর কিছু ছোটখাটো মান্নারিয়াস ম্যানারিজম অবশ্যই তিনি পেছনে রেখে আসতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু সেগুলোকেই তিনি চরিত্রের মানসিক অস্থিরতার প্রকাশের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পেরেছেন। ফলে নিয়মভাঙা হাততালি থামানো যায়নি।

Banaspatir-Chhaya-2

দেবশংকরই এই প্রযোজনার প্রাণবিন্দু – এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই। বরং বলতে পারি, ওঁর সামনে দাঁড়িয়ে একমাত্র শ্রেয়া ভট্টাচার্য শিরদাঁড়া সোজা রেখে টক্কর দিতে পেরেছেন, যেটা পারেননি পিয়ালের চরিত্রাভিনেতা গৌতম চট্টোপাধ্যায়। আনন্দময়ের আনন্দ, কষ্ট, নিজের মেয়ের প্রতারণা ধরে ফেলার মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার অভিনয় অনেকদিন মনে থাকবে দর্শকদের। প্রায় নিরাভরণ মঞ্চ (মদন হালদার) এবং আলোর (সৌমেন চক্রবর্তী) বাস্তব ব্যবহার নাটকটিকে আরও বেশি বাঙময় করেছে। নতুন নাট্যদলের (কলকাতা টুইস্ট) এমন অভিনয়ঋদ্ধ সহজ-সরল অথচ মনকাড়া প্রযোজনা অতিসম্প্রতি নজরে আসেনি। প্রযাজনাটির মূল পরিকল্পক ও নির্দেশক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় এমন সংলাপ ও অভিনয়-নির্ভর নাট্যকে বাড়তি কোনও কৃতকৌশলের ভার দিয়ে ওজনদার করার চেষ্টা করেননি বিপ্লব, সেটাই তাঁর সমঝদারির বড় পরিচয়। অভিনয় এবং নাটকের চলন নিজের গতিতেই এগিয়েছে। তিনি কোনও বাধার সৃষ্টি করেননি, এই সংযমটুকু তাঁর কাছে প্রত্যাশা ছিলই। ধন্যবাদ বিপ্লবকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement