নির্মল ধর: ধানুকা ফিল্ম কারখানার নতুন প্রোডাক্ট ‘অন্নপূর্ণা’। এই ছবির সবচাইতে বড় আকর্ষণ অভিনেত্রী অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। যিনি এখনও পর্যন্ত বাংলা সিনেমাওয়ালাদের থেকে যথাযোগ্য চরিত্র পাননি। তবুও কিছুটা পেয়েছেন ছোট পর্দা থেকে। এবারও যে সত্যিকার ও উপযুক্ত চরিত্র পেয়েছেন বলতে পারছি না। তবে ছবির নামচরিত্র পেয়েছেন- এটুকুইবা ক’জনের ভাগ্যে জুটছে! একেবারেই বাংলা ও বাঙালির ভাবাবেগ নিয়ে চিত্রনাট্য লেখা। বিধবা মা, মেয়ে-জামাই আর প্রয়াত স্বামীর ঠিক ভূতুড়ে নয়, স্মৃতির ফল্গু বেয়ে সঠিক সময়ে ক্যামেরার সামনে হাজির হওয়া নিয়ে একটি সেন্টিমেন্টে চোবানো ষাট/সত্তর দশকের আবেগ চোবানো গল্প নিয়ে ছবি।
তবে হ্যাঁ, ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে কাহিনির পটভূমির অনেকটাই লন্ডন শহর। যেখানে ধানুকা কোম্পানির ব্যবসায়িক যোগসূত্রও রয়েছে। প্রায় হঠাৎই লন্ডনবাসী মেয়ে আনন্দি (দিতিপ্রিয়া) ও জামাই অতনু (অর্ণ) কলকাতায় এসে শ্বাশুড়ি মাকে (অনন্যা) লন্ডন বেড়াতে নিয়ে যায়। মা ভালো বাঙালি পদ বানাতে পারেন। না, সেটা অবশ্য তাঁরা জানত না! জানলো কী করে? সেটা নিয়েও রনি (ঝষভ বসু) নামের কলকাতার অনাথ তরুণকে প্রযোজক ও ছবির পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষ কীভাবে কারসাজি করে যেন লন্ডন পৌঁছে দিয়েছেন! রনি সেখানে প্রায় অরণ্যদেবের মতো বাজার করা থেকে গাড়ি চালানো, অসহায়ের প্রায় নিশ্চিত সহায়। এবং এই রনির মধ্যেই নিজের একমাত্র মৃত সন্তানকে মা দেখতে পান। এরপরের গপ্পোটুকু টিকিট কেটে হলে গিয়েই স্বচোখে দেখাই ভালো। নইলে আর অংশুমান এমন রাঁধুনি নিয়ে ছবি বানিয়েছেন কেন? যেখানে মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝি হবে না, অনাথ রনি এক নতুন মা খুঁজে পাবে না কিংবা মায়ের বাংলা রেসিপির রান্নায় সাহেবকুল কবজি ডুবিয়ে খাবে না। আবার বিনয় বসুর (কাঞ্চন) মতো ধনী ও উদার বঙ্গপুঙ্গব থাকবে, যিনি এক কথায় কয়েক লক্ষ পাউন্ড ধার দিতে পারেন। এবং অবশ্যই রয়েছে ইঙ্গ-বঙ্গ মিলনের জন্য একজন ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলা এক তরুণী মেম নিকোলা (আলেকজান্দ্রা)। সুতারাং ব্যবসায়িক বাংলা সিনেমার জন্য ভিনদেশি মশলায় অংশুমান প্রত্যুষ এমন একটি প্লেট বাঙালি দর্শকের খাবার টেবিলে রাখলেন, যা এক চামচ চাখলেই আন্দাজ পাবেন পুরো হেঁশেলের।
সুপ্রিয় দত্তর ক্যামেরা লন্ডন শহরের আউটডোর দেখানোর খুব বেশি সুযোগ পায়নি বা দেওয়া হয়নি! তাঁর ইনডোরের কাজ বেশ ঝলমলে। গানে প্রতীক কুন্ডু অর্ডার সাপ্লায়ারের কাজ করেছেন শুধু। এবং অভিনয়ে প্রথম নাম অবশ্যই অন্যান্য চট্টোপাধ্যায়ের। প্রাণহীন চিত্রনাট্যে তিনি কত আর নিজের ‘প্রাণ’ ঢালতে পারেন! তবুও চেষ্টা করেছেন বইকী এবং আংশিক সফলও। দিতিপ্রিয়া রায় এবং অর্ণের অবস্থাও একইরকম। এমনকি পুজোর আসরে অর্ণকে নাচতেও হলো। ঋষভ বসু কিঞ্চিৎ প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করেছেন রনির চরিত্রে। আর অবাক করেছেন প্রয়াত স্বামীর চরিত্রে শান্তিলাল মুখুজ্জে মশাই! বলতে গেলে তিনিই একমাত্র এই ছবির শেষপাতে মশলাদার পান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.