Advertisement
Advertisement
Grihapravesh Review

ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে গল্প বুনলেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, কেমন হল ‘গৃহপ্রবেশ’?

ছবির নিউক্লিয়াস শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। মুগ্ধ করেছেন জীতু কমল।

subhasree ganguly jeetu kamal starrer Grihapravesh Review

ছবি: ইনস্টাগ্রাম

Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:June 14, 2025 6:26 pm
  • Updated:June 24, 2025 2:41 pm  

শম্পালী মৌলিক: একটা ছবি যখন ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে তৈরি হয়, সেই ছবি দেখার জন‌্য বিশেষ আগ্রহ কাজ করে। ‘গৃহপ্রবেশ’-এর ক্ষেত্রে ঠিক সে কথাই প্রযোজ‌্য। পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত সাহসের সঙ্গে চ‌্যালেঞ্জ নিয়েছেন নিঃসন্দেহে। ছবির ট্রেলার কিছু ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল, প্রিমিয়ারের পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে সেই ইঙ্গিতের চলচ্চিত্ররূপ দেখলাম। সম্পর্কের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আলো-আঁধারি ঘেরা সম্রাজ্ঞী বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়ের লেখা ছবির চিত্রনাট‌্য ও সংলাপ।

Advertisement

সহজ করে বললে, উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়িতে বিয়ে হয়েছিল তিতলির। বিয়ের সাতদিনের মধ‌্যে তার স্বামী শাওন বিদেশ চলে যায় কর্মসূত্রে। তারপর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ি আর বাড়ির ক’জনকে নিয়ে মেয়েটির দিনযাপন। স্বামীর জন‌্য তার অপেক্ষা ফুরিয়ে যায়নি তখনও। প্রায় প্রাসাদোপম বাড়িতে অসুস্থ শাশুড়ি, বয়স্ক শ্বশুরের দেখভাল করা এবং বাড়ির আশ্রিত ছেলে বিলু, দুর্গাপুজোর দায়িত্বে থাকা ভানু ও এক পরিচারিকাকে নিয়ে তার দিন যায়। দুর্গাপুজোর কটাদিনের প্রেক্ষাপটে গল্প দানা বাঁধে। বিশাল বাড়ির পড়ে থাকা ঘরে ‘হোমস্টে’ চালু করে বাড়ির বউ তিতলি। প্রথম অতিথি হয়ে আসে, ‘মেঘদূত’। সে নিয়ে এসেছিল আক্ষরিক অর্থেই অমোঘ বার্তা।

এই ছবির সময়কাল কোনটা? দেখা যায় ঋতুপর্ণ ঘোষের অনেক ছবির রেফারেন্স, তাঁর লেখা ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে। রক্ষণশীল পরিবারের একমাত্র ছেলে শাওন পরিচালক ঋতুপর্ণর-অনুরাগী। মা তার বেশি কাছের। ‘চিত্রাঙ্গদা’ বা ‘কল মি বাই ইওর নেম’ শাওনের পছন্দের ছবি। অন‌্যদিকে তার বাবা পছন্দ করে না ঋতুপর্ণর শেষ দিকের ছবি। বোঝা যায় ওই সময়কালটা পেরিয়ে গিয়েছে। যে সময়ে ‘কামিং আউট’– অর্থাৎ একজন প্রান্তিক মানুষের পক্ষে তার ভিন্ন যৌন প্রবণতা সামনে আনা সহজ ছিল না। ছবির সময়কালটা হল– শহরে চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে। অর্থাৎ বর্তমান সময়। যখন ‘কামিং আউট’-এর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলেছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে স্বামী পরিত‌্যক্তা মেয়েটি সোশাল মিডিয়া বা অন‌্য উপায়ে বা পুলিশ প্রশাসনের সাহায‌্যে স্বামীর খোঁজ করল না, শিক্ষিত মেয়ে তিতলি নীরবে শ্বশুর বাড়িতে একাকী নিস্তরঙ্গ জীবনটা মেনে নিল? একটু অদ্ভুত লাগে। এই মেয়ের নিঃসঙ্গ জীবনে প্রেম এল। মেঘদূত সেই প্রেম। ঝড়ের মতো উড়িয়ে নিয়ে গেল। বাড়িতে আসা প্রবাসী অতিথির সঙ্গে মেয়েটির সখ‌্য গড়ে উঠল দ্রুত। ঝড়ের দুপুরে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ, ঘুড়ি ওড়ানোর মুহূর্ত, একসঙ্গে শহর ঘোরার দিনলিপি, ছবি তোলার প্রত‌্যেকটা সিকোয়েন্স মনে আলোড়ন তোলে, যেন কবিতার মতো। এর মাঝে মাঝে মেঘদূতের জীবনের কাছের মানুষের সামান‌্য আভাস পাওয়া যায়। অন‌্যদিকে তিতলির বর শাওন অ‌্যাসাইনমেন্টে বিদেশ চলে যাওয়ার পর, তার দিকটা আর সেভাবে দেখানো হয় না। মায়ের সঙ্গে শাওনের সুন্দর সম্পর্কের দিকটা আরেকটু এক্সপ্লোর করলে ভালো লাগত। এবারে মেঘদূত যে বার্তা এনেছে সেই বার্তা পৌঁছনোটাই হয়ে দাঁড়ায় ছবির জার্নি। কীভাবে সেটা প্রেক্ষাগৃহে দেখাই ভালো। ছবি শেষের চমক মিস করা যাবে না।

অভিনয়ে প্রত‌্যেকেই বেশ ভালো। সোহিনী সেনগুপ্তকে যা-ই দেওয়া হয়, তিনি অন‌্যমাত্রায় উত্তীর্ণ করেন। এই ছবিতে শাশুড়ির চরিত্রে তিনি তেমন, ‘পারমিতার একদিন’-এর কথা মনে পড়তে পারে। তাঁর আর রুদ্রনীল ঘোষের দৃশ‌্যটা বহুদিন মনে থাকবে। রুদ্র এই ছবিতে ফুল ফর্মে। কৌশিক গঙ্গোপাধ‌্যায় দাপুটে বাবার চরিত্রে অনবদ‌্য। জীতু কমল মুগ্ধ করেছেন ‘মেঘদূত’-এর চরিত্রে। তাঁকে দেখিয়েছে যেমন আকর্ষণীয়, তেমন চরিত্রের প্রত‌্যেকটা স্তর তিনি তুলে এনেছেন সংবেদনশীলতার সঙ্গে। তবে ছবির নিউক্লিয়াস শুভশ্রী গঙ্গোপাধ‌্যায়। তিতলির অসহায়তা, একাকিত্ব, আকাঙ্খার সফল রূপায়ণ তাঁর অভিনয়ে। এই শুভশ্রী খুব পরিণত। শাওনের চরিত্রে সুপ্রভ ঠাকুরের পরিমিত অভিনয় ভালো লাগে। স্বল্প পরিসরে স্নেহা চট্টোপাধ‌্যায়, দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত ঠিকঠাক। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর মিউজিক শ্রুতিমধুর। সবকটা গান আলাদা করে শুনতে ভালো লাগে। তবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার ছবিতে গানের সংখ‌্যা কম হলেও মন্দ হত না। প্রতীপ মুখোপাধ‌্যায় ক‌্যামেরার দায়িত্বে সাবলীল। স্বপ্নদৃশ‌্যের ছোঁয়া বেশকিছু সিকোয়েন্সে।

শেষত আসা যাক কয়েকটা জিজ্ঞাসা প্রসঙ্গে। ছবি যত এগোয় বোঝা যায়, মেঘদূত আর তিতলি দুজনেই নিঃসঙ্গ। পরিস্থিতি তাদের কাছে এনেছে। তাদের ভালোবাসার উতল হাওয়ার অভিমুখ একইদিকে। সংবেদনশীল প্রেমের গল্প বলতে গেলে প্রত‌্যেকের একলাঘরের জায়গা স্পষ্ট করলে আরও মন ছুঁয়ে যেত। যে ছেলেটি সমপ্রেমী বা উভকামী তার সঙ্গে একটি মেয়ের অন্তরঙ্গতা কি এমন রোমান্স-রঞ্জিত হতে পারে? প্রশ্নটা জাগে। প্রচলিত প্রেমের বাইরের গল্প বলতে চেয়েছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, সেটাই বা টলিউডে ক’টা ছবিতে হয়! তবু ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ক‌্যুইয়ার বিষয়ে ছবি করতে গেলে আরও সচেতনতা প্রয়োজন নয় কী!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement