Advertisement
Advertisement

Breaking News

মোহনবাগানের বিশ্বকর্মা, পুজোর দিন শোনালেন নিজের প্রেমকাহিনি

একবার শংকরলালের উপর ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন স্ত্রী পৌলমী।

Mohun Bagan coach Shankarlal reveals love life
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:September 17, 2018 2:45 pm
  • Updated:September 17, 2018 2:45 pm

বরানগরের পাঁচতলার ছাদ। হালকা মেঘলা আকাশ। ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন তিনি। যেভাবে নতুন কীর্তিতে ওড়ান মোহনবাগান টিমকে। শংকরলাল চক্রবর্তী আর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ছাদে দুলাল দে

দেখে তো মনে হচ্ছে প্রতিদিন ঘুড়ি ওড়ান।
শংকরলাল: (হেসে উঠে) না, না। এখন আর হয় না। তবে ছোটবেলায় নিয়মিত ঘুড়ি ওড়াতাম। রেনেডি (সিং), আমি, দীপেন্দুরা (বিশ্বাস) যখন টিএফএ-তে থেকে একসঙ্গে বড় হচ্ছি, তখন অবসর সময়ে ঘুড়ি ওড়ানোটা আমাদের মজা ছিল। এখানে যেমন বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানো হয়। টিএফএ-তে থাকাকালীন আমরা সরস্বতী পুজোয় ঘুড়ি ওড়াতাম। কে কাকে ভোকাট্টা করে দিতে পারে তাই নিয়েই লড়াই হত।

Advertisement

নিজের হাতে সুতোয় মাঞ্জা দিতেন? না ঘুড়ির সঙ্গে মাঞ্জা দেওয়া সুতো কিনে আনতেন?
শংকরলাল: ঘুড়ি-লাটাই সব কিছু আমাদের টাটা থেকে দেওয়া হত। খেলার বাইরে আমরা যাতে বিভিন্ন ব্যাপারে জড়িত থাকি, সেসব দিকেও নজর ছিল টাটার।

Advertisement

দীপেন্দুরা বেশি ভোকাট্টা হতেন, না আপনি?
শংকরলাল: আমিই বেশিরভাগ সময় ভোকাট্টা হতাম।

[সুখদেব সিং ইস্যুতে ফেডারেশনকে চিঠি দিল ইস্টবেঙ্গল]

কোনটা বেশি কষ্টের, ছোটবেলায় ঘুড়ি ওড়ানোর সময় ভোকাট্টা হয়ে যাওয়া নাকি এখন কোচ হিসেবে মোহনবাগানের হার দেখা?
শংকরলাল: ছোটবেলায় দুঃখকষ্ট এগুলো ঠিক বুঝতাম না। দীপেন্দু, রেনেডিদের সঙ্গে ভোকাট্টা হয়ে গেলে বরং মজা পেতাম। কিন্তু কোচ হিসেবে মোহনবাগানের হার দেখলে কিছুটা সময়ের জন্য সত্যিই ভেঙে পড়ি।

কিছুটা সময়ের জন্য কেন?
শংকরলাল: একটা হারে কোচ যদি বিমর্ষ হয়ে পড়ে, তাহলে ফুটবলাররা তো আরও ভেঙে পড়বে। বরানগরে কাশীনাথ দত্ত রোডে আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি, সেখানে নিজের জন্য আমার আলাদা একটা ঘর রয়েছে। হারি, জিতি, আমার নিয়ম বদলায় না। রাতে বেশ কিছুটা সময় ওই ঘরটায় নিজেকে আটকে রাখি। মনে মনে ফের হেরে যাওয়া ম্যাচটা খেলি। বারবার কাটাছেঁড়া করি। ঠিক কোথায় ভুলটা হয়েছিল বোঝার চেষ্টা করি। সেরকম জিতলেও ভাবি, আরও বেশি গোলে কেন ম্যাচটা জিততে পারলাম না। কিন্তু ছোটবেলায় ঘুড়িতে ভোকাট্টা হয়ে গেলে এভাবে ভাবার সুযোগ ছিল না।

সবাই বলেন আপনার নাম রাহুল দ্রাবিড় হওয়া উচিত ছিল। দাদার (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) শহরে থেকে সবসময় রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ডিফেন্সিভ খেলেন কী করে? সংবাদমাধ্যম আজ পর্যন্ত আপনার বক্তব্য থেকে হেডলাইন পাওয়ার কোনও রসদ পেল না?

(শঙ্করলাল হো হো করে হেসে উঠলেন। পাশে বসে তখন হাসছেন স্ত্রী পৌলমীও)
পৌলমী: ওর সঙ্গে প্রেম করার সময় কী অসুবিধা হত, আমিই জানি। আমি দশটা কথা বলার পর তারপর একটা উত্তর দিত।

শংকরলাল: আসলে আমি মোহনবাগান নামক একটা বড় প্রতিষ্ঠানের মুখ। তাই কোনও কথা বলার আগে সবসময় ভাবি, আমার একটা অসংলগ্ন কথা হাজার হাজার সমর্থককে প্রভাবিত করবে। যার সঙ্গে ক্লাবের সুনাম জড়িত থাকে। এই কারণেই ভাবনাচিন্তা করে বক্তব্য রাখি।

সে নাহয় এখন মোহনবাগান কোচ হিসেবে মেপে কথা বলছেন। কিন্তু পৌলমীর অভিযোগ, প্রেম করার সময়ও কম কথা বলতেন।
শংকরলাল: (হেসে উঠে) আসলে সত্যিই আমি কম কথা বলি। আর ছোটবেলায় আমাদের টিএফএ-তে শেখানো হত, মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। কথা বলতে হয়।

তা হলে প্রেমটা কীভাবে করলেন?
শংকরলাল: হয়ে গেল আর কী।

পৌলমী: না, না। খুব একটা সহজ ছিল না ব্যাপারটা। আমাদের এমনিতেই ফুটবলের পরিবার ছিল। বাবা ইস্টবেঙ্গল জুনিয়রে খেলেছে। ভাই ত্রিজিৎ পরে ইস্টবেঙ্গল সিনিয়রে খেলেছে। আমার মামা অশোক চট্টোপাধ্যায় জর্জের কোচ ছিলেন। এমনকী আমিও একটা সময় ফুটবল খেলতাম। রেলে যোগ দেব, সব ঠিক। মামার আপত্তিতে আর হল না। পড়াশোনা আর কেরিয়ারে মন দিলাম।

আপনিও ফুটবল খেলতেন!
শংকরলাল: এখনও তো আমরা যখন দুই ছেলেকে নিয়ে মাঠে যাই, পৌলমী আর আমি বল নিয়ে পুশ পাস খেলি।

প্রেমটা সহজ ছিল না বলছিলেন…
পৌলমী: হুঁ। শংকর যেহেতু টিএফএ-তে আমার ভাইয়ের সিনিয়র, তাই মাঝেমধ্যে আমার ভাই শংকরকে ফোন করত। কখনও কখনও শংকর আমাদের বাড়িতে ফোন করত। ত্রিজিৎ না থাকলে মা ফোন ধরতেন। একদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। ঘুম চোখে ফোনটা আমিই ধরি। সেই প্রথম কথা বলা। তারপর রেনেডি আমাদের প্রেমে ভীষণ সাহায্য করেছে। এমনকী শংকর যেদিন সেক্টর ফাইভে আমার অফিসে প্রথম দেখা করতে এসেছিল, সেদিন রেনেডিই ওকে একটা অ্যাম্বাসাডর চালিয়ে নিয়ে এসেছিল।

অফিস-জীবনেই তাহলে আপনার প্রথম ডেটিং?
পৌলমী: এটাকে ঠিক ডেটিং বলা যাবে না। শংকর একদিন ফোন করে আমার মা’কে বলেছিল, আমাদের সবাইকে সল্টলেকে ওদের ফ্ল্যাটে লাঞ্চে নিয়ে যাবে। আমরাও তৈরি হয়ে বসে আছি। কিন্তু কোথায় শংকরলাল? দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। আমি তো মারাত্মক রেগে গিয়েছিলাম। কারণ তখনও আমার সঙ্গে সেভাবে আলাপ নেই। যা কথা হয়েছে মা’র সঙ্গে। শংকরলাল আর এল না। ততক্ষণে ভাবতে শুরু করেছি, এ আবার কেমন ছেলে! নিজে থেকে নেমন্তন্ন করে নিয়ে যাবে বলে নিজেই এল না? ওর ফোনটা এল রাতের দিকে। সরি বলে বলল, ও নাকি ভুলেই গিয়েছিল আমাদের নেমন্তন্ন করার ব্যাপারটা। তাই যেদিন বলল আমার অফিসে দেখা করতে আসবে, খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। মা বলল দেখা করতে আসবে যখন দেখা করে নিতে।
শংকরলাল: শুধু প্রেম কেন। ওই সময়টা রেনেডি আরও নানাভাবে আমাকে সাহায্য করেছে।

কীরকম?
শংকরলাল: চিমার সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পেয়ে দেড় বছর বাড়িতে বসা। তখন।

চিমার সঙ্গে সংঘর্ষের দিনটা মনে আছে?
শংকরলাল: ওই দিনটা ভুলব কী করে? ফেডারেশন কাপের সেই ডায়মন্ড ডার্বির পর কলকাতা লিগের ডার্বি। চিমাকে একটা স্লাইডিং ট্যাকল করেছিলাম। চিমার বুটের ডগাটা এসে শেষ হল আমার শিনবোনে। যুবভারতী থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হল ডক্টর শৈলেন ভট্টাচার্যর চেম্বারে। গোড়ালি থেকে থাই পর্যন্ত পুরো প্লাস্টার করে দিয়ে ডাক্তারবাবু আমার মনের জোর বাড়ানোর জন্য বললেন, তিন মাস পরে প্লাস্টার খুলে দিলেই আমি খেলতে পারব। তিন মাস পর অর্ধেক প্লাস্টার খোলা হল। পুরো প্লাস্টার খোলা হল আরও তিন মাস পর। তখন রেনেডি সল্টলেকের একটা ফ্ল্যাটে থাকত। আমার তখন কোনও টাকাপয়সা নেই। তবে নীতুদা (দেবব্রত সরকার) আর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সেই সময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। ডাঃ মানবেন্দ্র ভট্টাচার্যর কাছে রিহ্যাব করার জন্য সল্টলেক যেতে হত। রেনেডি বলল, রোজ বরানগর থেকে যাওয়ার দরকার নেই। ওর সঙ্গে ওর ফ্ল্যাটেই থেকে গেলাম। নীতুদার সঙ্গে রেনেডি মারাত্মক সাহায্য করেছিল। তখন রেনেডিই আমাকে খাওয়াচ্ছে, থাকতে দিচ্ছে।

পৌলমী: সেসময় মুখে কিছু বলত না। আরও চুপ করে গিয়েছিল। আমি চেষ্টা করতাম মনের জোর বাড়ানোর জন্য। শুরুতে রাজি ছিল না। কিন্তু বুঝিয়ে বুঝিয়ে শেষে কোচিং কোর্সে ভরতি হতে রাজি করালাম। তার উপর তখন ওর চাকরি ছিল না। চাকরির জন্য ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় খুব সাহায্য করেছেন সেই সময়। শংকরকে নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু ওর চাকরির সমস্যা নিয়ে আমাদের বাড়িতে একটা হালকা টেনশন ছিল। তাই ওকে সব সময় উৎসাহ দিতাম কোচিংয়ে আসার জন্য। আমার মনে হয়েছিল ফুটবলার হিসেবে যখন পারেনি, কোচ হিসেবে ঠিক পারবে।

আচ্ছা, সেই দিনটার পর চিমার সঙ্গে কোনও দিন কথা হয়েছে?
শংকরলাল: না। কোনও দিন কথা হয়নি ওর সঙ্গে।

পৌলমী: মিথ্যে বলব না। এখনও চিমাকে মন থেকে ঠিক মেনে নিতে পারি না আমি।

শংকরলাল: আসলে জীবনে এত অন্ধকার দিন দেখেছি বলেই সাফল্যের দিনেও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ি না। আজ সাফল্য আছে। কাল নাও থাকতে পারে। তাই ভাল-খারাপ দু’দিনেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখি। তবে পৌলমী অনুপ্রেরণা না দিলে হয়তো এই জায়গায় আসতে পারতাম না।

পৌলমী: বন্ধুরা বলত, শিবঠাকুরের মাথায় জল ঢাললে শিবের মতো বর পাওয়া যায়। শংকর যে সরাসরি আমার জীবনে চলে আসবে কল্পনাও করতে পারিনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ