পঁচিশ বছর বাদেও নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। শেষ কয়েকটা ছবি যে চলেনি। কিন্তু শাহরুখ আছেন শাহরুখ খানেই! মেহবুব স্টুডিওয় বুধবার দুপুরে আবিষ্কার করলেন অহনা ভট্টাচার্য।
আপনার নতুন ছবি ‘জিরো’-র পোস্টারে প্রথমে অনুষ্কা শর্মার নাম। তার পর ক্যাটরিনা কাইফ। সবার শেষে আপনার নাম। এ রকম কেন?
শাহরুখ: (হাসি) কি জানি! বোধহয় অ্যালফাবেটিক্যালি সাজিয়েছে।
ছবি মুক্তির আগে শাহরুখ খানেরও কি নার্ভাস লাগে?
শাহরুখ: ছবি মুক্তির আগে পর্যন্ত সমানে যদি কাজ করে যেতে হয়, তা হলে ক্লান্তি ছাড়া আর কোনও অনুভূতি আসে না। এখন শুধু আমার একটাই অনুভূতি হচ্ছে। আশা করছি ছবিটা মানুষের ভাল লাগবে।
‘জিরো’ যেমন একটা সম্পূর্ণ সংখ্যা, তেমনই অভিনেতা শাহরুখ বা মানুষ শাহরুখ খানও কি সম্পূর্ণ?
শাহরুখ: আমার কোনও দিন নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হয়নি। অভিনেতা হিসেবে আমি সম্পূর্ণ নই আর সেই জন্যেই প্রতিদিন সকালে নতুন করে কাজ করার ইচ্ছে হয়। আমার রোজই মনে হয় একজন অভিনেতা বা প্রযোজক হিসাবে বাণিজ্যিক ছবিতে আরও নতুন কী কী আনতে পারি, কী কী করতে পারি। তা হলে আমি কী ভাবে সম্পূর্ণ হলাম বলুন? সত্যি কথা বলতে, সম্পূর্ণ মানে তো বোরিং। আপনি যদি বলেন আপনি সম্পূর্ণ, তার মানে আপনার মধ্যে আর কিছুই বাকি নেই। আমি যদি কিছু অর্জন করি, সেটাকে একটা মাইলস্টোন ধরে পরবর্তী লক্ষ্যে এগিয়ে চলার চেষ্টা করি। তবে আমার কাছে লক্ষ্যে পৌঁছনোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, গন্তব্যে পৌঁছনোর জার্নিটাই আসল।
২৫ বছর পার করেছেন বলিউডে। ছবি বাছাই করার আগে এখন কী কী দেখেন?
শাহরুখ: আমি এখন শুধু ভালবেসে ছবি করি। যে সব ছবিতে কাজ করে আনন্দ পাই, সেগুলোই করি। ইন্ডাস্ট্রিতে ২৫ বছর পার করার পর এই আনন্দটাই কাজ করার অনুপ্রেরণা হয়ে যায়। আমি কখনও ভাবি না ক’টা অ্যাওয়ার্ড পাব, আমার ক’টা ছবি হিট করবে বা কত টাকা কামাব। কেরিয়ারের এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আর এ সবের কথা ভাবতে ইচ্ছে করে না।
[ ‘করিনা আমার মা হওয়ার চেষ্টা করেন না’, অকপট সারা আলি খান ]
আপনার গত কয়েকটা ছবি চলেনি। আপনার কি মনে হয় ‘জিরো’-র হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন?
শাহরুখ: আমি জানি না। কিন্তু চেষ্টা তো করে যেতেই হয়। আমি চেষ্টা করি দর্শককে নতুন নতুন গল্প বলে যাওয়ার। কখনও তাঁদের সেটা ভাল লাগে, কখনও ভাল লাগে না। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমার ছবির গল্পটা দর্শকের হৃদয়কে ছুঁতে পারল কি না। দর্শক যদি ছবিটা দেখে নিজের জীবনের সঙ্গে মেলাতে পারেন, রিলেট করতে পারেন, সেখানেই আমার সার্থকতা।
আপনার বেশ কয়েকটা ভাল ছবি সময়ের আগে মুক্তি পেয়েছিল। সেই জন্যই কি চলেনি?
শাহরুখ: যখনই কোনও ছবি ফ্লপ করে তখন এটাই সবচেয়ে সহজ অজুহাত যে ওটা সময়ের আগে এসে গিয়েছে। আরে বাবা! সময়ের আগে মানে কী? এটাই তো সময়! ভবিষ্যতে কী হবে আমরা কী করে জানব? ‘স্বদেশ’ চলেনি কারণ ‘লগান’ এর পর মানুষ আশুতোষ গোয়ারিকরের থেকে আরও রোমাঞ্চকর কিছু আশা করেছিলেন। আমার কাছ থেকেও তাঁদের হয়তো অন্য রকম আশা ছিল। কিন্তু আমরা দিলাম অন্য কিছু, ফলে ছবিটা চলল না। তবে সব ছবির ক্ষেত্রে এই কথাটা বলা যাবে না। কিছু ছবি খারাপ হয়, জাস্ট খারাপ, তাই সেগুলো চলে না।
আপনি এত বড় বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এঁদের মধ্যে আপনার প্রিয় কে?
শাহরুখ: মণি রত্নমের সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছিল। ওঁর সঙ্গে আবার কাজ করতে চাই। উনি ‘রাবণ’-এ আমাকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তখন আমার সময় হয়নি। তা ছাড়া দুটো ভাষা একসঙ্গে সামলাতে পারব কি না বুঝতে পারছিলাম না। তাই ছবিটা করিনি। আনন্দ স্যারের (আনন্দ এল রাই) সঙ্গে আবার কাজ করতে চাইব। এবার ওকে দিয়ে একটা অ্যাকশন ছবি করাব। বনশালির (সঞ্জয় লীলা বনশালি) ঘরানার ছবিও অনেক দিন করা হয়নি। আমাকে একটা ছবিতে উনি কাজ করতে বলেছিলেন। কিন্তু ‘জিরো’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে সময় দিতে পারিনি। রাজু হিরানির সঙ্গে কাজ করতেও আমি আগ্রহী।
আজকাল দর্শক সহজে খুশি হয় না। এ ব্যাপারে আপনার কী মত?
শাহরুখ: দেখুন, কখনও এমন ছবি দর্শকের মনে ধরে যায় যেটা আপনার মনে হবে তেমন জমেনি, আবার কখনও আপনার খুব ভাল লাগল এমন ছবি দর্শক অপছন্দ করে। তবে ছবিটা কেমন সেটা বিচার করার ভার আমি তাঁদের ওপরেই ছেড়ে দিই যাঁরা পয়সা খরচ করে টিকিট কেটে হলে ফিল্ম দেখতে আসেন। তবে একটা কথা ঠিক যে, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দর্শক কী ভাবছেন সেটা এখন আমরা জানতে পারি। আগে হল থেকে বেরিয়ে মানুষ বাস, গাড়ি বা স্কুটারে চেপে বাড়ি চলে যেতেন। ছবি দেখে তাঁদের কী মনে হল, সেটা আমরা জানতে পারতাম না। কিন্তু এখন আপনি ছবি দেখে হলের সিঁড়ি দিয়ে নামতে না নামতেই আপনার সামনে চারজন দাঁড়িয়ে পড়বে ছবিটা সম্বন্ধে আপনার মতামত জানার জন্যে। ফলে দর্শকদের ভাল লাগা বা খারাপ লাগাটা খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে পৌঁছে যায়। কোনও ফিল্ম সমালোচক ছবিটা দেখে দুই বা পাঁচ তারা দেওয়ার আগেই অনেক দর্শক চার তারা দিয়ে বসে থাকেন।
আপনার মেয়ে সুহানা ইতিমধ্যেই ম্যাগাজিনের কভারে জায়গা করে নিয়েছে। সুহানা কি বলিউডের স্বপ্ন দেখে?
শাহরুখ: হ্যাঁ, সুহানা অভিনেতা হতে চায়। তবে এখনও সঠিক সময় আসেনি। আমি চাই ও আরও তিন-চার বছর অভিনয় নিয়ে খুঁটিয়ে পড়াশোনা করুক। লন্ডনে এখন থিয়েটার নিয়ে পড়াশোনা করছে ও। সেই জন্যেই ছবির প্রোডাকশনের কাজ শিখতে কিছু দিনের জন্যে মুম্বই এসেছিল। তখন ‘জিরো’-র একটা গানের শুটিং করছিলাম আমরা। ওই সময় দু’সপ্তাহ ধরে রোজ সেটে আসত সুহানা। আমি চেয়েছিলাম ও ক্যাটরিনা আর অনুষ্কার সঙ্গে সময় কাটাক, তা হলে অনেক কিছু শিখতে পারবে। আসলে জানেন তো, মাঠে নেমে খেলতে শেখা যেমন জরুরি, তেমনই বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করাও দরকার। জোরে গাড়ি চালাতে জানলেই কেউ ফর্মুলা ওয়ান রেসার হয়ে যায় না, তার জন্যে গাড়ি চালানোর কায়দাটা রপ্ত করতে হয়। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে লোকে অভিনয়টা শেখার চেষ্টা করে না। তারা ধরেই নেয় যে তাদের মধ্যে প্রতিভা আছে। কিন্তু শুধু প্রতিভা থাকলেই তো চলবে না, সেটাকে ঘষামাজাও তো করতে হবে!
[ বাইচুংয়ের বায়োপিকের চিত্রনাট্য সাজাতে ডার্বিতে থাকছেন প্রশান্ত পাণ্ডে ]
ক্যাটরিনা আর অনুষ্কার থেকে কী শিখতে পারে সুহানা?
শাহরুখ: ক্যাটরিনার একটা আলাদা চার্ম আছে। আর অনুষ্কার একটা নিজস্ব অভিনয়ের কায়দা আছে, যেটা থেকে শেখা যায়। ছবির সেটে অনুষ্কার সঙ্গেই বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছিল সুহানা। কারণ যে গানটা তখন শুট হচ্ছিল সেই গানের নায়িকা ছিল অনুষ্কা। তবে ক্যাটরিনা, অনুষ্কা এদের তো সুহানা ছোটবেলা থেকেই চেনে।
শাহরুখ খান হিসেবে আপনার এখনও কিছু অর্জন করা বাকি?
শাহরুখ: আমার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি। অনেক বছর আগে যখন বলিউডে পা রেখেছিলাম, তখন সাংবাদিকদের ধারণা হয়েছিল যে আমি খুব অভদ্র আর অহংকারী। আসলে তখন অভিনয় সম্বন্ধে বেশি কিছু জানতাম না। অল্প জেনেই বড় বড় কথা বলতাম। যেমন আমি জাঙ্ক ফুড নই, আমি তন্দুরি চিকেন। বা আমি এখানে রাজত্ব করতে এসেছি। এখন যখন অভিনয় নিয়ে অনেকটা জেনেছি, এখন বুঝতে পারি আমার আরও অনেক কিছু শেখা বাকি, জানা বাকি। হয়তো আমার হাতে সময় খুব কম, কয়েক বছর বা কয়েক ঘণ্টা, বা আমার হয়তো সেই দক্ষতা নেই। কিন্তু আমি চেষ্টা করে যেতে চাই। বাণিজ্যিক ছবিতে থেকে কী ভাবে আরও ভাল কাজ করা যায়, কীভাবে সেই ছবির উন্নতি করা যায়, এই চেষ্টা আমি সর্বদা করে যাই।