Advertisement
Advertisement

Breaking News

দেশাত্মবোধকে উসকে দিতে সফল হল কি ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’?

ছবি দেখার আগে অবশ্যই পড়ুন এই প্রতিবেদন।

Uri: The Surgical Strike movie review
Published by: Tanujit Das
  • Posted:January 12, 2019 2:10 pm
  • Updated:January 12, 2019 2:20 pm

তনুজিৎ দাস: ২০১৬-র ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং ২৯ সেপ্টেম্বরের ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক৷ তর্ক-বিতর্ক থাকলেও, তা অজানা নয় অধিকাংশ দেশবাসীর৷ ভারতীয় সিনেমায় যুদ্ধকেন্দ্রিক সিনেমা বা দেশাত্মবোধক সিনেমা যে নেই তাও নয়৷ ‘বর্ডার’, ‘এলওসি কার্গিল’ থেকে শুরু করে হালফিলের ‘রেঙ্গুন’, ‘দ্য গাজি অ্যাটাক’ বা ‘পল্টন’, তালিকাটা অনেক লম্বা৷ কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন হল, যখন সবই জানা বা এসব যখন আগেই হয়ে গিয়েছে, তখন কেন দেখব ‘উরি: দি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’?

[অভিনেতা না পরিচালক, কোন ভূমিকায় পর্দায় রাজত্ব করলেন ‘বিজয়া’-র কৌশিক? ]

Advertisement

Advertisement

উত্তরটা অবশ্যই, ছবির সংলাপ, প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্যারা কম্যান্ডার মেজর ভিভান সিং শেরগিলের চরিত্রে অভিনয় করা ভিকি কৌশলের জন্য৷ ছবির শুরু থেকেই ‘টিম লিডার’ মেজর ভিভান সিং শেরগিলের চরিত্রটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন পরিচালক আদিত্য ধর৷ দেশের উত্তর-পূর্বাংশের ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠীর গোপন আস্তানায় ঢুকে, সুকৌশলে তাদের খতম করেন তিনি৷ কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কারণে এরপর মেজর শেরগিল’ই পোস্টিং নিয়ে নেন দিল্লিতে৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডেস্কের চাকরিতে৷ স্বভাবতই, জঙ্গলের সিংহ কখনওই খাঁচায় বন্দি থাকতে ভালবাসে না৷ তেমনই, মেজর শেরগিলের শরীর দিল্লির সরকারি ভবনে থাকলেও, মন পড়ে থাকত রণভূমিতে৷ সমগ্র ছবিজুড়ে চলনে-বলনে প্যারা কম্যান্ডারের মতোই আচরণ করেছেন ভিকি কৌশল৷ সংলাপ থেকে বডি ল্যাঙ্গোয়েজ পুরোটাই একজন জওয়ানের ছাঁচে তৈরি৷

ছবিটিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করেছেন পরিচালক আদিত্য ধর৷ কোথাও মেজর শেরগিলের নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মায়ের প্রতি তাঁর কর্তব্যবোধকে তুলে ধরেছেন৷ কোথাও তাঁর মধ্যে তৈরি হওয়া প্রতিশোধ স্পৃহাকে দেখিয়েছেন। কখনও দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও গোয়েন্দা বিভাগের অন্দরমহল। আর স্বভাবতই একদম শেষে রেখেছেন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের টানটান উত্তেজনা৷ ছবির সংলাপের উপরেও সুবিচার করেছেন আদিত্য ধর৷ মানুষের মন ছুঁতে এবং রোম খাড়া করা দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলতে, সংলাপকে বেশ চাঁচাছোলা ‘ওভার অ্যাকটিং’ বর্জিতভাবে রচনা করেছেন তিনি৷ তাই কখনও মেজর ভিভান সিং শেরগিলকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওয়াক্ত আ গয়া হ্যায়। খুন কা বদলা খুন সে লেনে কা৷ উনহে কাশ্মীর চাহিয়ে, আর হামে উনকা সর৷’’ বা কখনও তিনি বলেছেন, ‘‘আপনি বাহাত্তর হুর কো হামারা সালাম বোলনা, কেহেনা দাওয়াত পর ইন্তেজার করে৷ আজ বহুত সারে মেহমান ভেজনে ওয়ালে হ্যায়৷’’

‘উরি: দি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছবিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অভিনেতা পরেশ রাওয়াল ও ইয়ামি গৌতমকে৷ ২০১৬-র সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের অন্যতম কাণ্ডারি তথা, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের চরিত্রে অভিনয় করছেন পরেশ রাওয়াল৷ ইয়ামি গৌতম এক ইন্টেলিজেন্স অফিসারের চরিত্রে৷ দু’জনেই নিজ নিজ চরিত্রের সঙ্গে সুবিচার করেছেন৷ তবে, ছবির শেষেও দর্শকের মনে থেকে যাবে পরেশ রাওয়ালের দেওয়া নতুন ভারতের সংজ্ঞা, ‘‘ইয়ে নয়া হিন্দুস্তান হ্যায়৷ ইয়ে ঘরমে ঘুসেগা ভি অর মারেগা ভি৷’’ এই ছবিতেই বলিউড অভিষেক করেছেন টেলিতারকা মোহিত রানা৷ ছোট চরিত্রে যথেষ্ট মানানসই তিনি৷ আশা করা যায়, আগামিদিনেও বলিউডের একাধিক সিনেমায় দেখা যাবে তাঁকে৷ বায়ুসেনার এক মহিলা অফিসারের ছোট চরিত্রে কীর্তি কুলহারিও ভালই কাজ করেছেন৷ ছবি দেখতে দেখতে কোথাও যদি একঘেয়ে লাগে (লাগবে না বলেই বিশ্বাস), তবে তা ভুলিয়ে দেবে এক শহিদের মেয়ের কান্না৷ বাবার নিথর দেহর সামনে দাঁড়িয়ে তার ভারতীয় সেনার ‘নীতিস্ত্রোত্র’ পাঠ দর্শকের রোম খাড়া করতে বাধ্য৷ অন্যান্য ভারতীয় ‘ওয়ার মুভি’-র তুলনায় এই ছবি আলাদা হয়েছে, প্রযুক্তিতেও৷ ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দা দপ্তরের ব্যবহার করা অনেক নিত্যনতুন প্রযুক্তির আভাস পাওয়া গিয়েছে সিনেমায়৷ বিশেষ করে ‘গড়ুর’ নামের যে ড্রোনটির ব্যবহার দেখানো হয়েছে, তা বেশ ভাল৷

ছবির খারাপ দিক অবশ্যই, ‘উরি: দি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শিরোনামের সঙ্গে পুরোপুরি জাস্টিফাই না করা৷ অর্থাৎ ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-কে যতটা টানটান উত্তেজনাময় করে সাজিয়ে তুলেছেন আদিত্য ধর, ঠিক ততটাই ইন-জাস্টিস করেছেন উরির সন্ত্রাসী হামলার চিত্রায়ণে৷ উরির বায়ুসেনা ঘাঁটিতে কখন জঙ্গিরা ঢুকল, কীভাবে তাদের নিধন করা হল৷ অপারেশন সম্পূর্ণ না করেই বিষয়টি শেষ করেছেন পরিচালক৷ যে সন্ত্রাসী হানার পরিপ্রেক্ষিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো বড় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেনা৷ সেই ঘটনার বুনোটেই গন্ডগোল পাকিয়েছেন আদিত্য ধর৷ সমগ্র ছবিতে অনেকক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় (ইচ্ছাকৃত) ভাবে দিল্লির রাজনৈতিক শীর্ষ কর্তাদের দেখানো হয়েছে৷ ছবিতে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর অন্দরমহলকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু সেটাও দায়সারা ভাবে৷

শেষে এক লাইনে ‘উরি: দি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’কে ব্যাখ্যা করলে বলতে হবে, সম্ভাবনা ছিল কিন্তু ঠিক জমল না৷ তবে একদম হতাশ হওয়ারও কিছু নেই, প্রথমেই বলেছি সংলাপ-প্রযুক্তি ও ভিকি কৌশলের জন্য একবার দেখাই যায়৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ